স্বশিক্ষিত হওয়ার ১০টি কৌশল

স্বশিক্ষিত লোক মাত্রই সুশিক্ষিত! কিন্তু কেউ কি সত্যিই নিজেকে নিজে শিক্ষিত করে তুলতে পারে? অবশ্যই! এর জন্য দরকার নিজের ইচ্ছা আর গতানুগতিক চাকরীমুখী শিক্ষা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার আগ্রহ। একটু বিস্তারিত বলা যাক…

১. কৌতূহলী হোন

কোন কিছু জানার পূর্বশর্ত কৌতুহল। প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনি এমন অনেক কিছু খুঁজে পাবেন যা অনেক মানুষ জানে না এবং কখনো হয়তোবা জানবেও না।
আপনার প্রশ্নের কোনো সীমা থাকা উচিত নয়। খেয়াল করে দেখবেন, অনেক মানুষই প্রশ্ন করলে বিরক্ত হয়। আসলে, যে যত কম জানে, প্রশ্নের প্রতি সে তত কম ধৈর্যশীল, প্রশ্ন তাকে ঝামেলায় ফেলে দেয়।

২. অজানা বিষয় পড়ুন এবং দেখুন

নিজের জানার পরিধি থেকে বের হয়ে চিন্তার পরিধি আরও বড় করুন, দেখুন অন্য মানুষ কিভাবে চিন্তা করে।
• সারাজীবন কমিকস পড়েছেন, একটু উপন্যাস পড়ে আসুন।
• এতদিন শুধু ফিকশন দেখেছেন, এবার একটা ডকুমেন্টারি দেখুন।
• শুধু ক্লাসে শিক্ষকের লেকচার শুনতে শুনতে ক্লান্ত, বিখ্যাত লোকদের পাবলিক লেকচার শুনুন। www.ted.com এর লেকচার গুলো শুনে আসুন!

৩. নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন

কৌতূহল মানেই হল, আপনি যা এতোদিন জেনে এসেছেন তা থেকে বের হয়ে নতুন কিছুর সন্ধান করা। কখনো এমন হবে, যখন কোন কিছু খুব গভীরভাবে জানতে গিয়ে নিজেকে খুব বিপর্যস্ত আর বোকা মনে হবে। এটা হয় যখন আপনার বর্তমান চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার মত কিছু একটা সামনে আসে। এই সময় না থেমে বরং আরও সামনে আগাতে হবে। ঐ বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও জানতে হবে, যেগুলো এতদিন আপনি এড়িয়ে চলেছেন।

৪. বিভিন্ন ভাষা শিখুন

বিশ্বের নানা প্রান্তের বিভিন্ন ভাষার লেখা পড়ুন। এমনকি, একই ভাষা একেক জায়গায় একেক রকম, সেগুলো জানুন। এরকম ভাবার কোন কারন নেই যে, শুধু নিজ দেশ ছাড়া ভিনদেশী কোনো লেখকের বই পড়া যাবে না। পড়ার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র ভাষা দিয়েই নিজের চিন্তা-দর্শনকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারেন।
• একটি ভাষায় নিজেকে যখন মোটামুটি দক্ষ মনে হবে, অন্য আরেকটি ভাষা শেখার চেষ্টা করুন।
• নতুন ভাষা শেখা মানে নিজেকে নতুন কোন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করানো।

৫. স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পড়ানো হয়, তার বাইরেও জানার চেষ্টা করুন

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অনেক সময় শুধু প্রাথমিক জিনিসপত্র পড়ানো হয়, কিন্তু বাস্তবতা আরও ব্যাপক। কোন একটা বিষয়ে খারাপ করলেন, তো কি হয়েছে? আগে শিখতে পারেন নি, এখন শিখবেন। পাঠ্যপুস্তক গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন বিষয়ে সীমাবদ্ধ জ্ঞান দেয়, এটাকে কাজে লাগিয়ে আরও কিছু জানার চেষ্টা করুন। হয়তোবা এগুলো পরীক্ষায় আসবে না, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এই বর্ধিত শিক্ষাই আপনাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাবে। আপনি যে বাকি সবার থেকে বাড়তি কিছু জানেন, এটা তারই প্রমান দেবে।

৬. প্রতিদিন পড়ুন

পড়ার মাঝে বেশিদিন বিরতি না দিয়ে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
• বিশ্বের ইতিহাস পড়ুন। এটা আপনাকে নানান সভ্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। বিশ্ব ইতিহাস জানা বর্তমানকে বোঝার চাবিকাঠি। এটা স্বশিক্ষার অন্যতম সেরা উপায়।
• আগে যারা স্বশিক্ষিত হয়েছেন তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন, তাঁদের থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পাবেন। অনেক উপদেশ পাবেন, যা আপনাকে স্বশিক্ষার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ পরীক্ষার আগে মনযোগ বৃদ্ধির ১০টি কার্যকর উপায়

৭. সুশৃঙ্খল হোন

স্বশিক্ষার বৈশিষ্ট্য হলো- এখানে কোন ডেডলাইন নেই, কেউ কিছু বলবেও না। তাই মাঝখানে গতি হারানোর সম্ভাবনা বেশি। এজন্য নিজেকে একটু শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হবে যাতে জানার আগ্রহ চলে না যায়। অনুপ্রেরণা খুঁজে তা ধরে রাখার দায়িত্ব এখানে নিজের।

৮. মত বিনিময় করুন

• শিক্ষিত লোকদের সাথে কথা বলুন, তাদের মতামত জানুন। বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও লেকচারে যোগ দিন।
• স্কুল-কলেজে সময় কাটান, নানান মানুষের সাথে পরিচয় হবে, এটা আপনাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
• বড়দের কথা বোঝার চেষ্টা করুন, কারন জীবন সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা আপনার থেকে বেশি।

৯. অনলাইনে যান

এত বিশাল জ্ঞানের ভান্ডার অনলাইনে আছে যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। লাখ লাখ বই আপনি ফ্রি তে পড়তে পারবেন। MOOC বা Online Course শব্দের সাথে আমরা অনেকেই অপরিচিত। হাজার হাজার অনলাইন কোর্স আছে যার অনেক গুলোই ফ্রি। এগুলো আপনাকে আসলেই সাধারণ জ্ঞানের বাইরে নিয়ে যাবে। এক জায়গায় বসে আপনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সব শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখতে পারবেন। শুধু তাই না, ভিনদেশী আরও অনেক শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করতে পারবেন। ক্লাসে কোন পড়া বুঝতে না পারলে অনলাইনে যান, একবার না বুঝলে বার বার দেখুন!

১০. গবেষক হতে শিখুন

গবেষণা অনেক উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষেরই সে ধৈর্য নেই। এটা চমৎকার এক দক্ষতা। তবে বলে রাখা ভালো- গবেষণা মানেই PhD করা না। যখনই কোন প্রশ্ন মাথায় আসবে, উত্তর খুঁজতে নেমে পড়ুন, তাহলেই হবে। কিভাবে আমাদের অর্থনীতি চলছে, সরকারি কাজ গুলো কিভাবে হয় কিংবা গ্যালাক্সি কিভাবে তৈরি হয় এসবের প্রতিটিই জানার মত বিষয়। এগুলো নিয়ে রিসার্চ করুন, অনলাইনে যান, লাইব্রেরি তে যান, জার্নাল ম্যাগাজিনে চোখ রাখুন, নিজের চিন্তা শক্তি কাজে লাগান।

স্বশিক্ষিত তো হলেন, এবার তা প্রয়োগ করাও আপনার দায়িত্ব। এমন কিছু করুন যা মানুষকে ভাল কিছু এনে দেবে। অন্য মানুষকেও জানান, তাদেরকে শ্বশিক্ষিত হতে উদ্বুদ্ধ করুন। একজন স্বশিক্ষিত মানুষ চাইলে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে, যা সাধারনের পক্ষে অসম্ভব কল্পনা মাত্র।
শিখুন, শিখান আর দক্ষ হোন। “অসম্ভব” শব্দটাকে দূরে সরিয়ে দিন।
পোস্টটি দরকারি মনে হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শেয়ার করুন

1 thought on “স্বশিক্ষিত হওয়ার ১০টি কৌশল”

Leave a Comment