কুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরামর্শ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) দেশের অন্যতম সেরা একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। কুয়েটের মত একসাথে এত সুন্দর ক্যাম্পাস এবং সেশনজট মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এদেশে কমই আছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায় কুয়েটে, যার ফলে তুলনামূলক ভাবে প্রতিযোগীতাটাও একটু বেশিই হয়।

প্রাথমিক তথ্য

কুয়েটে পুরকৌশল, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল এবং যন্ত্রকৌশল- এই ৩ টি অনুষদের অধীনে সবমিলিয়ে মোট ১৪ টি বিভাগ রয়েছে। এই ১৪ টি বিভাগে সর্বমোট আসনসংখ্যা ১০০৫ টি, যার মধ্যে ৫ টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও পার্বত্য এলাকার অধিবাসীদের জন্য,যা ২০১৬ সালের সার্কুলার অনুযায়ী কার্যকর।

ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা

শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ পেয়ে পাশ করতে হবে, এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গনিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও ইংরেজি এ চার বিষয়ে কমপক্ষে মোট ১৯.০০ পয়েন্ট পেতে হবে। তারপর তাদের থেকে মেধাতালিকা অনুযায়ী বাছাই করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে- শুধুমাত্র তারাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

ভর্তি পদ্ধতি

মোট ৫০০ নম্বরের MCQ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়,যার জন্য সময় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ২৫% নম্বর কাটা যাবে। তবে সর্বনিম্ন কোন পাশ মার্ক নেই।

মানবণ্টন

  • পদার্থবিদ্যা- ১৫০
  • রসায়ন- ১৫০
  • গনিত- ১৫০
  • ইংরেজি- ৫০

আসা যাক বিষয়ভিত্তিক মানবণ্টনে। প্রতি সাবজেক্টে ২৫ টি করে মোট ১০০ টি MCQ থাকে, যার মধ্যে পদার্থ, রসায়ন, গনিতের প্রতিটি MCQ তে ৬ মার্ক করে এবং ইংরেজির প্রতিটি MCQ তে ২ মার্ক করে থাকে।

ভর্তি প্রস্তুতি

যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে একমাত্র কুয়েটেই MCQ পরীক্ষা হয় তাই এর প্রস্তুতিটাও একটু আলাদা।
“প্রস্তুতি শুরু করার আগেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগ সহকারে দেখে নিও; তাহলে প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাবে।”
পড়া শুরু করার আগে কি পড়বে, কিভাবে পড়বে সেটা জেনে পড়া শুরু করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।পদার্থবিদ্যাঃ পদার্থের জন্য প্রতিটি অধ্যায়ের সূত্রগুলো ভালো করে পড়ে নিও। আর প্রতিটি অধ্যায়ের টপিকগুলো সম্পর্কে ক্লিয়ার একটা ধারণা রেখো। কারণ কিছু বেসিক প্রশ্ন আসে। আর পদার্থ তপন ও ইসহাক স্যারের বইয়ের ম্যাথগুলো করে রেখো। অনেক কমন পাবে। কারণ বেশিরভাগ প্রশ্নে ম্যাথই থাকে।গণিতঃ গণিতের জন্য বইয়ের তুলনামূলক ছোট এবং ক্যালকুলেশন একটু জটিল টাইপের ম্যাথগুলো দেখে রেখো। গনিতের যেকোন একটি বই ভালো করে করতে পারলে আর তেমন চিন্তা নেই। সেইসাথে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশ্নব্যাংকের বিগত বছরের MCQ প্রশ্নগুলো একবার চোখ বুলিয়ে নিও। এটা জানা কথা, গণিতে ভালো করা হচ্ছে পুরোপুরি চর্চার উপর। শর্টকাট টেকনিক গুলো বারবার চর্চা করলে, আর কম সময়ে ম্যাথ সমাধান করা শিখে গেলে গণিতে আর সমস্যা হবেনা।রসায়নঃ রসায়নের জন্য প্রতি অধ্যায়ের ম্যাথগুলো দেখে নিও এবং জৈব রসায়নের বিক্রিয়া গুলো দেখে নিও। আর প্রতিটি অধ্যায় সম্পর্কে ভালো ধারণা রেখো, ফলে বেসিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সুবিধা হবে। অন্তত অপশন দেখলে সঠিক উত্তরটি মনে পড়ে যাবে। আর জৈব যৌগ থেকে কয়েকটা প্রশ্ন থাকে, তাই এই অধ্যায়ে জোর দেয়াটা জরুরি।ইংরেজিঃ ইংরেজিতে Functional English এর উপর ভিত্তি করেই প্রশ্ন হয়। Parts of Speech, Correction, Translation, Vocabulary, Phrase, Synonym, Antonyms, Preposition এগুলো ভালো করে দেখে নিও। ইংরেজি হচ্ছে এমন বিষয়, যে যত শিখবে, সে ততই ভালো করবে।

Related: তোমরা যারা ইঞ্জিনিয়ারিং এডমিশন টেস্ট দিবে

ভর্তি পরামর্শ

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে নেই, কুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরের অপশনগুলো থাকে একটু আধ্যাত্মিক টাইপের। অনেক প্রশ্ন থাকবে যা সূত্র বসিয়ে ক্যালকুলেটর চাপলেই উত্তর চলে আসে। ঝামেলাটা সেখানেই। মনে করো, একটি প্রশ্নের সঠিক উওর ৫.২০৭। কিন্তু ধর প্রথম অপশনেই আছে ৫.২০ যা দেখে অনেকেই বৃত্ত ভরাট করে ফেলবে। কিন্তু পরের অপশনেই আছে ৫.২০৭। সঠিক উত্তর তো ৫.২০৭। সেক্ষেত্রে সে নেগেটিভ মার্কিং খাবে। তাই ক্যালকুলেশন যত সূক্ষ্ম করতে পারবে ততই ভালো, সাথে সবগুলো অপশন দেখে তারপর বৃত্ত ভরাট করিও।কোনমতেই হতাশ হয়ে যেও না: কে কতটুকু পারে তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কে কতটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলো। তুমি যা পারো তা সঠিকভাবে উত্তর করতে পারলেও তোমার চান্স হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। মোটেও হতাশ বা ঘাবড়ে যেয়ো না। ভয় পেয়ে যেয়ো না পরীক্ষার হলে। আর যদি কোন প্রশ্ন সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকে তাহলে উত্তর করার প্রয়োজন নেই। স্কিপ করে পরের প্রশ্ন উত্তর করবে।
সবশেষে, আমাদের প্রাণের এই গ্রিন ক্যাম্পাস তোমাদের মত নবীনদের অপেক্ষায়। ভালো করে প্রস্তুতি নাও আর ভালো করে পরীক্ষা দিও। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করবেন। তোমাদের সকলের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা।

শেয়ার করুন

Leave a Comment