বুয়েট ভর্তি প্রস্তুতিঃ সহায়ক টিপস

বুয়েট এডমিশন টেস্ট নিয়ে খুব কমন কিছু কথা বলবো আজকে। এইচএসসি পরীক্ষা কেবল শেষ হলো। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী কিছুদিনের মধ্যে বিভিন্ন কোচিং এ ক্লাস করা শুরু করবে। কোচিং করা না করার তর্কে আপাতত যাচ্ছি না। তবে কোচিং যদি করাই লাগে, সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় নিয়ে একটু রসকষহীন ভাবে বলে যাচ্ছি।

বিভিন্ন কোচিং থেকে প্রতি ক্লাসের জন্য আলাদা আলাদা লেকচার শিট সরবরাহ করে। সেখানে অনেক ধরণের অঙ্ক, প্র্যাকটিস প্রবলেম, বাড়তি তথ্য, সূত্র দেওয়া থাকে যেগুলোর অনেক কিছুই বইতে নেই। বেশিরভাগ ছাত্রই যে ভুল টা করে তা হলো- সেগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে সল্ভ করা শুরু করে দেয়। আমি খুব কঠিন ভাবে এর বিরুদ্ধে। আগে নিজের বই এর সব অঙ্ক শেষ করো তারপর সেগুলোতে যাও। লেকচার শিটের বাড়তি তথ্য কেবল তোমার মেরিট পজিশন আগাতে সাহায্য করবে। শুধু চান্স পাওয়ার জন্য লেকচার শিট পড়তে হয় না, তাই পাঠ্যবই ভালভাবে পড়ে আগে চান্স পাওয়া নিশ্চিত করো। এ প্রসঙ্গে আমাদের এক ভাইয়া বলেছিলেন,

“প্রতিটা চ্যাপ্টার এই স্ট্র্যাটেজি তে কমপ্লিট করতে পারো- প্রথমে নিজের বই সম্পূর্ণভাবে শেষ করবে। তারপর প্রশ্নব্যাঙ্কগুলো সল্ভ করবে, অর্থাৎ বিগত বছরসমূহের ভর্তি পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো সল্ভ করবে। তারপর সময় পেলে লেকচার শিটের ম্যাথ কর। তবে ফিজিক্সের ক্ষেত্রে ২/৩টা করে পাঠ্যবই এর অংক সল্ভ করো, ম্যাথের জন্য বোর্ড এক্সামে যেটা পড়ে এসেছো সেগুলো সব খুব ভালো ভাবে করো, বইয়ের বাইরের বাড়তি কিছু দরকার নেই। কেমিস্ট্রিতে কনসেপচুয়াল চ্যাপ্টারগুলো একটা বই থেকে পড়ে ম্যাথমেটিকাল প্রব্লেমগুলো দুইটা বই থেকে সল্ভ করলেই হয়।”

আরেকটা বিষয় নিয়ে লিখতে চাই। অনেকে প্রথম কয়েকটা সাপ্তাহিক পরীক্ষা দিয়ে বাকিগুলো আর দেয় না। “সিলেবাস শেষ না হলে শুধু শুধু এক্সাম দিয়ে কি হবে”– এই চিন্তাধারা পুরোপুরি ভুল। সবগুলো এক্সাম দাও, সবগুলো। কোনো এক্সামের সিলেবাসের মাত্র ১০% যদি কমপ্লিট করে থাকো, সেই ১০% এর প্রস্তুতি যাচাই করতে হলেও সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করো। পরীক্ষাগুলো তোমার সময় সচেতনতা বাড়াবে, প্রেশার হ্যান্ডেল করতে শেখাবে। তাছাড়া পরীক্ষায় যে ভুলগুলো করেছো, বাসায় এসে সেগুলো সল্ভ করো, মাথায় খুব ভালভাবে গেঁথে যাবে!

সবগুলো ক্লাস এটেন্ড করো, সব টিচারই কিছু না কিছু পড়াবে। সেগুলো ঠিক মত খাতায় তুলে নাও। ক্লাসগুলো কাজে লাগাও, নিজের কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে নাও এই সুযোগে!


আরও পড়ঃ পরীক্ষার আগে মনযোগ বৃদ্ধির ১০টি কার্যকর উপায়

কোচিং গুলোতে ডেইলি কুইজ হয়, সেগুলো দাও। আমি ডেইলি কুইজে নেগেটিভ মার্কও পেয়েছি, কিন্তু যা পেয়েছি তা নিজে পেয়েছি। ডেইলি বা উইকলি কুইজের মার্ক্স তোমার মেধা কোনভাবেই জাজ করবে না, কম পাও সমস্যা নেই। নিজে যা পারো তাই দাও, আরেকজনেরটা কেন দেখবে এখন? নিজের মেধা থেকে লিখলে অন্তত এটা ভেবে মনে সাহস পাবে যে- ‘যা পেয়েছি তা নিজের যোগ্যতায় পেয়েছি।’ আর তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় দেখাদেখির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যভাগ!

শেষ কথা, শর্টকাট শিখবে না কোনো কিছুর। আমাদের কলেজের গণিতের রেজা স্যার বলতেন, “অঙ্কের কোনো শর্টকাট হয় না। হাজার হাজার শর্টকাট সূত্র আছে, কিন্তু এত অতিরিক্ত সূত্র কেন মুখস্থ করবে? আগে যে নিয়মে যা করছো এখনও সেই নিয়মেই করো। দরকার হলে এক অঙ্ক কয়েকবার কর। তাহলে তুমি কিছু লাইন স্কিপ করে পরের লাইনগুলো তে জাম্প করতে পারবে। তবু শর্টকাটের লোভে আগের শেখা অঙ্ক নতুন করে অন্য নিয়মে শিখতে যেয়ো না।”

ভর্তি পরীক্ষা একটা ফুটবল ম্যাচের মতো। কারো বাস পার্কিং স্ট্র্যাটেজি থাকবে, কারো বা টিকিটাকা, কেউ বা কাউন্টার এটাকে উইং-এ আগাবে বল নিয়ে। সব মিলিয়ে কিন্তু জয়টাই মূল লক্ষ্য, এবং একেক টীম একেক স্ট্র্যাটেজি ফলো করে জয় লাভ করে। তাই নিজের স্ট্র্যাটেজি শুরু থেকেই ঠিক করে ফেলো। অন্ধভাবে ক্লাসের সবথেকে পড়ুয়া বা মেধাবী ছাত্রটিকে ফলো করতে যেয়ো না। নিজের প্রস্তুতি কম হলেও, কনফিডেন্স নিয়ে পরীক্ষার হলে যাও। মানসিক প্রস্তুতি থাকুক এরকম,

“আমি হয়ত বাকিদের চেয়ে কম পড়েছি। কিন্তু আমি যা পড়েছি, সেখান থেকে যেসব প্রশ্ন আসবে, আমি সেগুলোর উত্তর ভালভাবে লিখে দিয়ে আসব!”শুভকামনা রইল, আর্টিকেলটি সহপাঠী ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো! কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জিগ্যেস করে ফেলো 😀

শেয়ার করুন

6 thoughts on “বুয়েট ভর্তি প্রস্তুতিঃ সহায়ক টিপস”

  1. ভাই উদ্ভাস মডেল টেস্ট নেওয়া শুরু করেছে। একটানা বাঁশ খেয়ে যাচ্ছি। ৩০০ তে ১৬০-১৭০ করে পাই। মেরিট পজিশন প্রায় ১০০০-১২০০। বুয়েটের কোনো আাশা আছে কিনা বলেন।( রিপ্লাই দিয়েন প্লিজ)

    Reply
  2. Vayia,higher math kivabe porbo?I mean,koita boi theke porbo?BTW,ami ekhon inter 2nd year e.Ekhon thekei ki krte pari jodi kindly ektu bolten?

    Reply
    • ফিজিক্সের মত ম্যাথে এতো বই দেখার দরকার নেই আসলে। বোর্ডের জন্য যেসব ম্যাথ করা হয়, ওগুলাই খুব ভাল মত দেখার পাশাপাশি আগের বছরগুলায় যে টাইপ ম্যাথ এডমিশনে আসে, ঐ টাইপ ম্যাথগুলা প্র্যাকটিস করলেই হবে। একদম উদ্ভট আনকমন কিছু প্র্যাকটিস করে মাথায় প্রেশার নেয়ার দরকার নাই। ২/১ টা উদ্ভট ম্যাথ পরীক্ষায় আসলেও ওগুলা না পারলে কিছু আসবে যাবে না। বাট ওগুলার পিছে প্রিপারেশনের সময় নষ্ট করতে গিয়ে রেগুলার জিনিসপত্রে ফোকাস কম করলে অনেক কিছুই আসবে যাবে :3

      Reply
    • সব কোচিং এই মোটামুটি অনেকগুলো ব্যাচ আছে। তবে ডেইলী বা উইকলী এক্সামগুলোর প্রশ্ন সব ব্যাচেই একই।

      Reply

Leave a Comment