Dot-com Bubble এবং সিলিকন ভ্যালির উপলব্ধি

নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধে বিশ্বে এক নতুন ধরনের ইকোনমির বিপ্লব ঘটছিল- ইন্টারনেট ইকোনমি। মানুষ উপলব্ধি করতে পারছিল যে আগের ইকোনমি গ্লোবালাইজেশনের চ্যালেঞ্জগুলো সামলাতে পারবে না। তাই নতুন খুব বড় কিছু একটা দরকার, এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমেই কেবল তা সম্ভব। আর এ থেকেই তৈরি হয় dot-com bubble/ dot-com boom/ dot-com mania. নিত্য নতুন টেক কোম্পানি খুলে কোম্পানির নামের পাশে ডট কম ডোমেইন বসিয়ে ওয়েবসাইট বানানোর ট্রেন্ড থেকেই এই ম্যানিয়ার নাম Dot-com Mania। শত শত টেক কোম্পানি IPO তে যাচ্ছিল (IPO- Initial Public Offering. প্রাইভেট কোম্পানিগুলো যখন ফান্ড-রেইজ করার জন্য স্টক মার্কেটে নিজেদের শেয়ার প্রথমবারের মত পাবলিকের কাছে বিক্রির অফার করে- সেটিকে বলা হয় IPO)। সাধারণ মানুষ আর ইনভেস্টররাও ইন্টারনেট আর টেকনোলজির ভবিষ্যতের প্রতি অগাধ আস্থা থেকে কোম্পানির প্রফিটিবিলিটি বিচার না করেই হুজুগে ইনভেস্ট করতে থাকে। ১৯৯৯ সালে আমেরিকায় মোট ৪৫৭ টি কোম্পানি IPO তে গিয়েছে, আর এর মধ্যে ১১৭টি কোম্পানি মাত্র ১ দিনের মাথায় নিজেদের শেয়ার ভ্যালু ডবল করে নিয়েছে!!

এই dot-com mania অনেক তীব্র হলেও খুব কম সময়ের জন্য ছিল। ‘৯৮ এর সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে ২০০০ এর মার্চে শেষ হয়ে যায়। এই ১৮ মাস Silicon Valley এর জন্য একটা Gold Rush ছিল বলা যায়। প্রতি সপ্তাহে ডজন ডজন স্টার্টাপ বিলাসবহুল Launch Party থ্রো করত। মিলিয়নিয়াররা হাজার ডলারের খরচের বিল তাদের কোম্পানি শেয়ার দিয়ে পরিশোধ করতেন (বিল কত এসেছে? আচ্ছা এই নাও আমার কোম্পানির 0.02% শেয়ার!)! অনেক প্রফেশনালরা তাদের সেটেল্ড জব ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন স্টার্টাপে কাজ করতে সিলিকন ভ্যালিতে আসতেন। লেখক Peter Thiel এর পরিচিত এক ব্যক্তি ১৯৯৯ এ একসাথে ৬টি কোম্পানি রান করছিলেন!

NASDAQ (টেকনোলোজি ইন্ডাস্ট্রির স্টক মার্কেট) এর সূচক বাড়তে বাড়তে ২০০০ সালের মার্চে ৫,০৪৮ পয়েন্ট রীচ করল (আগের বছরের মার্চের তুলনায় দ্বিগুণ)! এরপরেই Dot-com bubble বার্স্ট করল আর পরদিন থেকে সূচক হু-হু করে কমতে লাগল। এপ্রিলে গিয়ে সূচক নেমে দাঁড়ালো ৩,৩২১ পয়েন্টে। আর ২০০২ এর অক্টোবরে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকল- ১,১১৪ পয়েন্ট (মাত্র আড়াই বছর আগের Peak এর চেয়ে ৭৪% কম)!


Nasdaq Composite dot-com bubble - Bohubrihi
NASDAQ এর সূচকের ওঠানামা [ছবি- Wikipedia]

Dot-com bubble বার্স্ট করার ডিরেক্ট কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে আনা Anti-trust মামলা এবং একে Monopoly ঘোষণা করা। টেক-জায়ান্টের বিরুদ্ধে এই লীগাল একশনকে সাধারণ মানুষ টেকনোলোজি ব্যবসার জন্য খারাপ বলে মনে করল। এতে শেয়ারের দাম কমতে থাকল এবং লীগাল ঘোষণার একদিনের মধ্যেই মাইক্রসফটের ভ্যালু ১৫% আর NASDAQ এর সূচক ৮% কমে গেল। Pets.com, Webvan এর মত জনপ্রিয় কোম্পানিগুলো এতে একেবারেই দেউলিয়া হয়ে কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেল। তবে eBayAmazon এর মত কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রথমে একেবারে কমে গেলেও এরা পরে রিকভার করে নেয়।

তবে মাইক্রসফটই একমাত্র কোম্পানি না যে সেই সময়ে আইনি জটিলতায় পড়েছিল। Napster নামের আরেকটি বিখ্যাত টেক কোম্পানি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৯-এ। কোম্পানিটি Peer-to-peer Digital Music Sharing এর সার্ভিস দিত। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ২০ বছর বয়সী Sean Parker আর তাঁর দুই ফ্রেন্ড। কোম্পানিটি খুব দ্রুতই তরুণদের কাছে অনেক পপুলার হয়ে যায়, যদিও পপুলারিটি ছিল খুবই কম সময়ের জন্য। কপিরাইট ইস্যু নিয়ে আমেরিকান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সরাসরি তোপের মুখে পড়ে হারিয়ে যায় Napster।

Dot-com bubble বার্স্ট হওয়াটা সব কোম্পানিকেই প্রচন্ডভাবে ধাক্কা দেয়। অল্প কিছু কোম্পানি সার্ভাইভ করে আর ভবিষ্যতে নিজ নিজ ফিল্ডে ডমিনেট করা শুরু করে (গুগল, এমাজন, ই-বে, ইত্যাদি)। বাকি বেশিরভাগ কোম্পানিই হারিয়ে যায়। এই হারিয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ পরে অন্যান্য কোম্পানি চালু করেন। যেমন Napster এর Sean Parker পরে Facebook এর ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট হন (Social Network মুভিটি না দেখে থাকলে এবার দেখে নিতে পারেন)।


RELATED: সেরা ১০ Fortune Global 500 কোম্পানি

Dot-com বাবলের পরেও যেসব Entrepreneur সিলিকন-ভ্যালিতে থেকে গিয়েছেন, তারা এই বাবল থেকে ৪টি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন এবং এখনও মোটামুটি সেগুলো মেনে চলা হয়-

১. গ্র্যাজুয়ালি সামনে আগাও

অস্বাভাবিক বড় ভিশন (vission) এর জন্যেই Bubble তৈরি হয়েছিল। তাই বিশাল ভিশনগুলোকে রাতারাতি কদর করা উচিৎ হবে না। যে দাবি করে যে সে বিশাল কিছু করে ফেলতে সক্ষম- তাকে Suspect হিসেবে গণ্য করো। আর যে বলে “I wanna change the world”, তাকে আরও নম্র হতে বলো। ছোট ছোট, কিন্তু ক্রমবর্ধিষ্ণু Steps নিয়ে আগানোই একমাত্র নিরাপদ উপায়।

২. Lean এবং Flexible থাকো

সব কোম্পানিরই Lean থাকা দরকার। Lean থাকাটা আসলে “Unplanned” থাকার আরেক নাম। সব কিছু আগে থেকে প্ল্যান করে রাখাটা arrogant (কারণ সবকিছু প্ল্যান মত হয় না) আর inflexible. এর চেয়ে- বিভিন্ন জিনিস ট্রাই করো, এক্সপেরিমেন্ট করো, iterate করে বের করো কোন স্ট্র্যাটেজি তোমার জন্য কাজে দিচ্ছে।

৩. প্রতিযোগিতা দিয়েই শুরু করো

একেবারে নতুন কোনো মার্কেট ক্রিয়েট করতে যেয়ো না। তোমার ব্যবসা করার সুযোগ আছে কি নেই- এটা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে তোমার প্রোডাক্ট/সার্ভিস নেয়ার মত অলরেডি কোনো কাস্টোমার এক্সিস্ট করে কিনা। এজন্যে এমন একটা মার্কেট সিলেক্ট করো যেখানে অলরেডি সাক্সেসফুললি তোমার প্রতিযোগিরা ব্যবসা করছে। তারপর তোমার প্রোডাক্ট/সার্ভিসকে প্রয়োজনমত ইমপ্রুভ করে বাকিদের থেকে আলাদা করো।

৪. Product এর উপর ফোকাস করো, Sales এর উপর না

তোমার প্রোডাক্ট সেল করার জন্য যদি এডভার্টাইজিং বা সেলসম্যানের দরকার হয়, তাহলে তোমার প্রোডাক্ট ভাল প্রোডাক্ট না। টেকনোলজি হচ্ছে আগে Product Development, তার পরে Distribution. কেবল মাত্র ভাইরাল আর অর্গানিক Growth-ই সাস্টেইনেবল।

লক্ষ্যণীয়- উপরের ৪টি লেসন হচ্ছে dot-com Bubble এর ঘটনা থেকে নেয়া সিলিকন-ভ্যালির উদ্যোক্তাদের উপলব্ধি। বিজনেসের কোনো অনিবার্য Law না এগুলো। Peter Thiel এর মতে, এগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্যও আরও বেশি কারেক্ট হতে পারে-

১।  ক্ষুদ্র থাকার চেয়ে রিস্কি হলেও বড় ভিশন রাখাটা জরুরি

২। কোনো প্ল্যান না থাকার চেয়ে বাজে প্ল্যান থাকাও ভাল

৩। কমপিটিটিভ মার্কেট ব্যবসার লাভ কমিয়ে দিতে পারে

৪। Sales এর গুরুত্ব Product Development এর চেয়ে কম না

পরস্পরবিরোধী দুইরকম মতবাদের কোনোটিকেই Granted ধরে নিয়ে বসে থাকাটা ভুল হবে। Absolute Right বা Absolute Wrong বিচার করাও উচিৎ হবে না। নতুন ইন্টারনেট-বেইজড টেকনোলজির স্রোতে অন্ধের মত ঝুঁকে পড়ার ফলে dot-com bubble তৈরি হয়েছিল। তবু আমাদের আরও নতুন টেকনোলজি দরকার, আরও সাস্টেইনেবল ইকোনমি দরকার এবং সেটা পেতে হয়ত আরও কয়েকটি বাবল আমাদের ফেইস করতে হবে।

Dot-com বাবল তৈরি হয়েছিল ইন্টারনেটের ব্যাপ্তির সাথে সাথে এটির অসীম সম্ভাবনার প্রতি মানুষের অসীম আস্থা, এমবিশন আর কনফিডেন্সের কারণে। নেক্সট বাবলটা কি নিয়ে তৈরি হতে পারে? স্মার্টফোন?

References: Wikipedia (Dot-com bubble), Zero to One by Peter Thiel, The Bubble Bubble

শেয়ার করুন

2 thoughts on “Dot-com Bubble এবং সিলিকন ভ্যালির উপলব্ধি”

Leave a Comment