স্টার্টাপ আইডিয়া মূল্যায়ন করবো কীভাবে?

আমাদের অনেকের মাথায়ই বিভিন্ন সময় অনেক স্টার্টাপ আইডিয়া চলে আসে। এপারেন্টলি ভাল সেই আইডিয়াগুলো নিয়ে আমরা এক্সাইটেড হয়ে যাই। আবার অনেক সময় এতো এতো আইডিয়া চলে আসে যে কোনটা নিয়ে আগানো উচিৎ সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাই। সো একচুয়ালি ভাল আইডিয়াগুলো কোনগুলো আসলে? ভাল আইডিয়ার বৈশিষ্ট্য কী কী? সেগুলো ইভালুয়েট করবো কীভাবে? এই আর্টিকেলে এই বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।

একদম এক বাক্যে বলতে গেলে- স্টার্টাপ হচ্ছে সেগুলো, যেগুলো খুব দ্রুত Grow করতে পারবে। যেসব স্টার্টাপ দ্রুত গ্রোথ এর জন্য ডিজাইন করা হয়নি, সেগুলোকে স্টার্টাপ না বলে Small Business বললে বেশি একুরেট হয়। Small Business অবশ্যই খারাপ কিছু না; তবে ইনভেস্টররা এমন কোম্পানিতে ইনভেস্ট করতে চান যেটি খুব দ্রুত বড় হতে পারবে।

স্টার্টাপ আইডিয়াকে একটা হাইপোথিসিস বলা যায়। আমার কোম্পানি কীভাবে দ্রুত বড় হবে – এটা এক্সপ্লেইন করে হাইপোথিসি তৈরি করতে হবে এবং এই হাইপোথিসিসই আমার স্টার্টাপ আইডিয়া! সো এই হাইপোথিসিস কীভাবে ডেভেলপ করবো? বা একটা ভাল আইডিয়ার কি কি উপাদান আছে?

সমস্যা আইডেন্টিফাই করা

প্রথম পার্ট হচ্ছে – সমস্যা। বেসিকালি আমি কোন প্রবলেম টা এড্রেস করে একটা কোম্পানি তৈরি করতে চাই যেটা কুইকলি গ্রো করবে? এরপর আসবে সল্যুশন – সেই প্রবলেমটা সল্ভ করার জন্য আমি আসলে কি করতেসি? আর সবশেষে ইনসাইট – আমি যে সল্যুশনটা নিয়ে কাজ করতেসি, কেন সেটা ঐ প্রবলেমটা সল্ভ করবে? কাউকে যখন আমি আমার আইডিয়া পীচ করবো, তাকে এই তিনটি বিষয় নিয়ে ক্লিয়ার ধারণা দিতে হবে।

এবার এগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলি। আমাকে একটা প্রবলেম নিয়ে কাজ করতে হবে; কিন্তু কোন প্রবলেম নিয়ে কাজ করবো? কীভাবে বুঝবো এই প্রবলেম নিয়ে কাজ করলে বড় বিজনেস তৈরি করা সম্ভব?

একটা Ideal প্রবলেম বুঝার বেশ কিছু উপায় আছে- 

১। প্রবলেমটা অনেক অনেক পপুলার; অনেক মানুষ এই সমস্যায় পড়ছে। হয়ত মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যা ফেইস করে। আমি কাউকে এই সমস্যার কথা শেয়ার করলে সে সম্ভবত এটার সাথে রিলেট করতে পারবে সাথে সাথেই।

২। প্রবলেমটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানুষ এই প্রবলেম ফেইস করছে এবং সামনেও করবে; কাজেই এর সমাধানটা দিন দিন আরও বেশি দরকারি হবে।

৩। প্রবলেমটা খুবই আর্জেন্ট। মানে খুবই প্রকট একটা সমস্যা এবং এখনই এর একটা সমাধান দরকার। 

৪। কিছু প্রব্লেম আছে যেগুলো সল্ভ করা খুবই এক্সপেনসিভ। এগুলো নিয়ে কাজ করা যেতে পারে; কারণ এগুলো যদি আমি সল্ভ করতে পারি, তাহলে আমি এর জন্য বেশি চার্জ রাখতে পারবো!

৫। যে প্রবলেমগুলো সল্ভ করা একরকম মেনডাটোরি বলা যায়। লাইক “নাহ এই প্রবলেম কাউকে না কাউকে সল্ভ করতেই হবে”।

৬। মানুষ যে প্রবলেমগুলো খুবই ঘন ঘন ফেইস করে; বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর এই সমস্যায় পড়তে হয়। প্রতিদিন, বা প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় হয়ত সেই প্রবলেম সল্ভ করার প্রয়োজন হয়!

এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল- আমি বা আপনি যে প্রবলেমটি নিয়ে কাজ করছি, উপরের ৬টি বৈশিষ্ট্যের যেকোনো একটি বৈশিষ্ট্য অন্তত সেই প্রবলেমের থাকতে হবে। ৬টি বৈশিষ্ট্যই যে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই; একাধিক বৈশিষ্ট্য থাকলে ভাল; তবে একটি বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে। নয়তো কাস্টোমার বা ইনভেস্টররা আমার প্রবলেম স্টেটমেন্ট শুনে অতটা এক্সাইটেড হবে না, বা রিলেট করতে পারবে না।

প্রথমে সমস্যা, এরপর সমাধান!

এবার আসি সল্যুশন নিয়ে। প্রবলেম আর সল্যুশনের মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা থাকতে হবে; সেটি হচ্ছে – আগে প্রবলেম, তারপর তার সল্যুশন। অনেক সময় হয় কি- আমরা সল্যুশনটায় বেশি ইন্টারেস্টেড হয়ে পড়ি, বা ইঞ্জিনিয়াররা টেকনিকাল প্রজেক্ট করতে বা প্রোডাক্ট ডেভেলপ করতে ভালবাসি। সল্যুশন বানানোর পর আমাদের মাথায় আসে এটা নিয়ে কীভাবে বিজনেস করা যায় এবং তখন আমরা এই সল্যুশনের জন্য আইডিয়াল প্রবলেম খুঁজতে থাকি। 

হওয়া উচিৎ এর উল্টো – আগে প্রবলেম আইডেন্টিফাই করতে হবে, এড্রেস করতে হবে; এরপর সেই প্রবলেম সল্ভ করে এরকম সল্যুশন ডেভেলপ করতে হবে। আগেই সল্যুশন ডেভেলপ করে ফেললে এরপর দেখা যায় যে ঐ সল্যুশনের জন্য জোর করে একটা প্রবলেম ফিট করানোর চেষ্টা করা হয়। এভাবে গ্রোথটা ইফিশিয়েন্ট হয় না আসলে; গ্রোথ সম্ভব, কিন্তু টাফ। এর চেয়ে বরং প্রবলেম থেকেই কাজ শুরু করা উচিৎ।

কেন আমরা এই সমস্যা সমাধান করার জন্য যোগ্যতম কোম্পানি?

আর সবশেষে ইনসাইট! ইনসাইট বলতে – আমি যে প্রবলেম আইডেন্টিফাই করলাম, এই প্রবলেম সল্ভ করার জন্য আমার সল্যুশন বা স্টার্টাপই কেন উপযুক্ত, এটার কারণ ব্যাখ্যা করা। এই প্রবলেম এবং সল্যুশন নিয়ে কাজ করলে কেন আমি সফল হবো- এটা বুঝাতে হবে। এই বিজনেস গ্রো করার জন্য আমার কী কী unfair advantages আছে, এগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এই Unfair Advantage আবার পাঁচ রকম হতে পারে। এই Advantages গুলোর প্রত্যেকটাই থাকতে হবে আমার – এমন কোনো কথা নেই। একাধিক Unfair Advantages থাকলে খুবই ভালো; তবে অন্তত একটা Unfair Advantage অবশ্যই থাকা উচিৎ।

১। আমার কি ফাউন্ডার এডভানটেজ আছে? আমি কি দেশের মাত্র অল্প কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে ১ জন, যারা এই প্রবলেমটা সল্ভ করতে পারবে?? ফাউন্ডার হিসেবে আমরা এই ফীল্ডে কি এতোটাই প্রতিষ্ঠিত? ফাউন্ডার এডভানটেজ হিসেবে “আমি বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার” বললে হবে না; কারণ হাজার হাজার বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার আছেন দেশে বিদেশে! 

২। আমার মার্কেট কি প্রতি বছর ২০% করে বড় হচ্ছে? এটাও একটা এডভানটেজ, তবে অন্যান্য এডভানটেজের চেয়ে এটার এডভানটেজ কিছুটা কম।

৩। আমার প্রোডাক্ট কি মার্কেটের বাকি প্রোডাক্টগুলোর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভাল? ভাল বলতে “১০ গুণ টেকসই, ১০ গুণ সুবিধাজনক, ১০ গুণ কমদামী, ১০ গুণ উন্নত” ইত্যাদি যেকোনো কিছুই হতে পারে। ২ গুণ ৩ গুণ ভালো হলে সেটা ‘ভালোই’, তবে সেটাকে unfair advantage বলা যাবে না।

৪। আমার Customer Acquisition Cost জিরো! অর্থাৎ, কাস্টোমার পাওয়ার জন্য আমার বলতে গেলে কোনো টাকাই খরচ করতে হচ্ছে না। আমার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট মানুষের মুখে মুখেই ছড়িয়ে যাচ্ছে, নতুন কাস্টোমার আনতে আমার এডভার্টাইজিং এ খরচ করতে হচ্ছে না – এটা অনেক বড় একটা Unfair Advantage! সো বিজনেসের শুরু তে ফাউন্ডারদের কাছে অনেক ফান্ডিং না থাকলে এটা এক দিক দিয়ে ভালো! কারণ তখন ফাউন্ডাররা কোম্পানির অর্গানিক গ্রোথ নিয়ে বেশি এফোর্ট দিতে বাধ্য থাকে কিছুটা!

৫। আমার বিজনেস কি Monopoly ক্রিয়েট করতে পারবে? Monopoly এই সেন্সে যে- আমার বিজনেস যত বড় হবে, এটাকে পিছনে ফেলা অন্যান্য কোম্পানির জন্য কি আরও কঠিন হবে? আমি কি সময়ের সাথে সাথে বাকিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবো? যেসব কোম্পানি তে network এর ইফেক্ট আছে, বা যেগুলো মার্কেটপ্লেস, সেগুলোর জন্য এই এডভানটেজ পাওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। কারণ যত বেশি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, যত বেশি কোম্পানি বা প্রোভাইডার মার্কেটপ্লেসে যুক্ত হতে থাকে, কোম্পানি তত বেশি শক্তিশালী হয়!

সো বেসিকালি এই! নতুন কোনো আইডিয়া মাথায় আসলে, সেটিকে উপরের ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে সাজিয়ে একটা হাইপোথিসিস তৈরি করে দেখতে হবে সেটি কতটা পটেনশিয়াল; সেটির গ্রো করার সম্ভাবনা কেমন!

This article is inspired by what I learned from Y Combinator and my experience at Bohubrihi.

শেয়ার করুন

Leave a Comment