“তুমি নাকি আমি?” – কমিউনিকেশন ও ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স

তুমি কোন কাজই করো না, সব কাজ আমাকেই করতে হয়!”

তুমি সবসময় দেরি করো! একটা দিনও সময়মত আসো না!

তুমি কাজে শুধু ভুল করো! তোমার ভুলের জন্যই আমি রাগ করি!”

ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স
Image Credit: Shutterstock

কথাগুলো কি খুব পরিচিত লাগছে? আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সময়েই এধরণের কথা বলে থাকি। এগুলোকে বলা হয় “You Message/Satement”, কেননা এখানে অপরজনকে লক্ষ্য করেই কথাগুলো বলা হচ্ছে।

এই ধরণের কথায় আমরা সাধারণত অপরব্যক্তির কি ভুল হয়েছে, তার কি করা উচিত ছিল, এগুলোকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি, নিজের অনুভূতি বা নিজের উপর ওই ব্যক্তির কাজের প্রভাব নিয়ে কথা বলি না। সেজন্য কথাগুলো শুনলে অপরব্যক্তির মনে হতে পারে যে, আপনি তাকে একতরফাভাবে দোষারোপ করছেন, তার দিকটা আপনি দেখছেন না। আর নিজের দোষের বিচার আরেকজনের মুখে শুনতে কিন্ত কারোই ভালো লাগে না।

তাই এ ধরণের কথা শুনলে সাধারণত অপরব্যক্তি রেগে যায় বা যে কথাগুলো বলছে উলটো তার দোষ বের করার চেষ্টা করে। এভাবে কিন্ত সুন্দর একটা কথোপকথন বা যোগাযোগের সম্ভাবনাই নষ্ট হয়ে যায়।

সেজন্যই “I Message/Statement” ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন নিজের কথা, নিজের অনুভূতির কথা বলবেন, তখন এটা প্রকাশ পায় যে, আপনার জীবনের, আপনার অনুভূতির দায়িত্ব আপনার হাতেই আছে। আপনি যা বলছেন, তা নিজ দায়িত্বে বলছেন, অপরব্যক্তিকে দায়ী করছেন না। সেই সাথে, আপনি শুধু নিজের দিকটা বলা মানে আপনি অপর ব্যক্তির দিকটাও শুনতে চাচ্ছেন, সে কিছু বলার আগেই আপনি তারই দোষ- এমনটি ধরে নেননি।

এরফলে, অপরব্যক্তিও আপনার কথায় অপমানিতবোধ করবে না বা রেগে যাবে না, বরং সেও তার দিকটা বলতে উৎসাহিত হবে। এভাবে একটা সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুনঃ গ্রোথ মাইন্ডসেটঃ আপনার ব্রেইনকে কীভাবে পরিবর্তন করবেন?

এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, “You Message/Statement” এর আগে একটা “I” যুক্ত করে দিলেই কিন্ত সেটা “I Message/Statement” হয়ে যায় না! যেমন, যদি বলা হয় যে, ‘আমার মনে হয়, দোষটা তোমারই ছিল’ – তাহলে কি এটা “I Message/Statement” হবে? না! আমি দিয়ে শুরু হলেও এটা “I Statement” হবে না কারণ বাক্যটা আমি দিয়ে শুরু হলেও এখানে অপরব্যক্তিকেই দোষারোপ করা হয়েছে। এটাকে বলা হয়, ছদ্মবেশী “You Message/Statement” (You statement in disguise)।

সুতরাং, আমাদের এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, বাক্য “আমি” দিয়ে শুরু করাই যথেষ্ট নয়! বাক্যে নিজের অনুভূতি বা কাজের দায়িত্ব নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

“I and You Message/Statement” এর পার্থক্য বোঝার সুবিধার্থে নিচে কিছু বাক্যের দুইটা রূপ পাশাপাশি উল্লেখ করা হল। এটি আপনাকে দৈনন্দিন জীবনে “I Message/Statement” ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।

You Message/Statement I Message/Statement
তোমার আমার দিকে কোন খেয়ালই নাই! তুমি কখনোই ফোন করে আমার খোঁজখবর নাও না! অনেকক্ষণ তোমার ফোন না পেলে আমার খুব খারাপ লাগে, নিজেকে খুব একা মনে হয়।
তুমি ঘরের কোন কাজই করো না! সব কাজ আমাকেই করতে হয়! একা একা ঘরের সব কাজ করতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি আজকে থালাবাসন ধুতে আমাকে সাহায্য করবে?
তুমি একদমই হিসাব করে টাকা খরচ করো না! টাকার ব্যাপারে এত উদাসীন হলে জীবন চলে? একটা কাজে বাজেটের বাইরে টাকা খরচ হলে অন্যান্য সব কাজের জন্য টাকা কম পড়ে যায়, আমাকে সেসব কাজ করতে তখন হিমসিম খেতে হয়। তুমি কি আগামীবার বাজেটের মধ্যে থাকার চেষ্টা করবে?
তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো। আমি তোমার কাছ থেকে আরও সম্মানজনক ও সুন্দর আচরণ আশা করি।
তুমি সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকো, বাসায় একদম সময় দাও না। যখন তুমি বাসায় আমার সাথে সময় কাটাও না, বিশেষ দিনগুলোতেও বাসায় থাকো না, আমার নিজেকে অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হয়।
তুমি আমার কথা শোনো না! তুমি আমাকে বোঝোই না! আমি মানা করার পরেও যখন তুমি সেই কাজটা করো, আমার মনে হয়, আমার কথার কোন গুরুত্ব নেই। আমি তখন হতাশ হয়ে যাই।
তোমার ভুলের জন্যই আমি রাগ করেছি। আমার খুব রাগ লাগছে কারণ আমি যেভাবে আশা করেছিলাম, কাজটা সেভাবে হয়নি।
তুমি আমার সব ব্যাপারে নাক গলাও। আমার বিষয়গুলোতে আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।

উদাহরণগুলো পড়ে হয়ত মনে হতে পারে যে, সবসময় এভাবে কথা বলা সম্ভব না! রাগের সময় এতকিছু মাথায় থাকে না! হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, এই লেখাটি পড়া মাত্রই আপনি জীবনের সকল ক্ষেত্রে “I Message/Statement” ব্যবহার করা শুরু করে দিবেন, ব্যাপারটা এমন না। ভিডিও ও লেখাটি শুধুমাত্র আপনাকে এই ব্যাপারে সচেতন করবে, এভাবেও যে উত্তর দেয়া যায়, সেটা জানাবে।

ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স অনলাইন কোর্স!

২০২০ এর দশকে কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দশটি দক্ষতার একটি হলো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। বহুব্রীহির সংক্ষিপ্ত এই অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাগুলো সম্পর্কে জানুন, ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সেগুলো প্রয়োগ করতে চেষ্টা করুন এবং নিজের ও আশেপাশের মানুষের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করুন!


এখানে ক্লিক করুন

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স

শেয়ার করুন

2 thoughts on ““তুমি নাকি আমি?” – কমিউনিকেশন ও ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স”

  1. গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
    নিজের বেস্ট ভার্সনকে প্রেজেন্ট করার জন্য I statement এর ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
    খুব উপকার হলো ??

    Reply

Leave a Comment