কর্পোরেট ই-লার্নিং এর সুবিধা ও সম্ভাবনা

গত দশ বছরে উন্নত দেশগুলোতে ই-লার্নিং এর একটি বিপ্লব পরিলক্ষিত হচ্ছে! Coursera, edX, Udemy, Lynda এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের মাঝে অনলাইন কোর্সকে বেশ জনপ্রিয় করে ফেলে। প্রথমে একাডেমিক কোর্স নিয়ে কাজ শুরু হলেও, আস্তে আস্তে কর্পোরেট জগতেও এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। বর্তমানে Fortune 500 কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই কোনো না কোনো ইলার্নিং প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করছে। এর ছোঁয়া বাংলাদেশেও লাগতে শুরু করেছে – বাংলাদেশেও এখন ধীরে ধীরে কর্পোরেট অনলাইন ট্রেনিং এর প্রচলন শুরু হচ্ছে।

তবে, যে একটি জিনিস বেশিরভাগ কোম্পানিকে অফলাইন ট্রেনিং এর পাশাপাশি অনলাইন ট্রেনিং স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করতে বাধা দিচ্ছে, সেটি হল খরচ! অনলাইন ট্রেনিং কি আদৌ কার্যকরী? অনলাইন ট্রেনিং এর উপকারিতা কি এতই বেশি যে HR বাজেটের একটি বড় অংশ এখানে খরচ করে ফেলা যায়? যেসব HR ম্যানেজাররা এধরনের প্রশ্ন নিয়ে ভাবছেন; বা অনলাইন ট্রেনিং এর প্রকৃত বেনেফিটগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন; তাদের জন্য আমি কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরছিঃ

১০। কর্পোরেট ট্রেনিং এর খরচ কমে

কর্পোরেট অনলাইন ট্রেনিং এর সবচেয়ে বড় কয়েকটি সুবিধার একটি হল – এটি আসলেই খরচ অনেক কমিয়ে আনে। একই বিষয়ের অফলাইন ট্রেনিং এর জন্য প্রতিবার নতুন করে আয়োজন, লজিস্টিক্স, ট্রেইনার ফী, প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদির পিছনের যে খরচ, সেটি অনেকটা কমে আসে অনলাইন ট্রেনিং এ। একটি বিষয়ের প্রয়োজনীয় সবকিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সবার জন্য সবসময় উন্মুক্ত থাকায় খরচ অনেক কমে যায়। হ্যা, শুরুতে ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম (LMS), কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি কয়েকটি কাজে কিছু ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট এবং ই-লার্নিং এক্সপার্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। তবে Continuous Basis এ ট্রেনিং চালু রাখার অপারেশনাল খরচ চিন্তা করলে, অনলাইন ট্রেনিং অফলাইন ট্রেনিং এর চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইন কর্পোরেট ট্রেনিং এর প্ল্যাটফর্ম এবং কনটেন্ট সাপোর্ট দেয়ার মত সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে

৯। যখন দরকার, অনলাইন ট্রেনিং ঠিক তখনই পাওয়া যায়

যখন তখন একজন কর্মচারীর হয়ত কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর রেফারেন্স, বা লার্নিং ম্যাটেরিয়াল, বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন প্রয়োজন হতে পারে। অনলাইন ট্রেনিং বা ই-লার্নিং থাকলে সেই তথ্য বা ম্যাটেরিয়াল সে তৎক্ষণাৎ এক্সেস করতে পারে – ঠিক যখন দরকার তখন। ধরা যাক, কোনো একজন কর্মচারী কোনো কাস্টমারকে রিফান্ড সার্ভিস দেয়ার সময় একটি জিনিস নিয়ে কনফিউজড হয়ে গেলেন বা তথ্যটি কনফার্ম হয়ে নিতে চাইলেন। অনলাইন ট্রেনিং থাকলে, তিনি খুব সহজেই তার একাউন্টে লগিন করে Customer Service বিষয়ক কোনো অনলাইন কোর্স থেকে সেই তথ্যটি জেনে নিতে পারলেন। এভাবে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের যেকোনো তথ্য বা প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রসিডিউর সম্পর্কে খুব সহজেই Informed এবং Knowledgable রাখতে পারছেন – এতে করে প্রতিষ্ঠানের ওভারল কাস্টমার স্যাটিসফ্যাকশন এবং কাজের প্র্যাকটিস এর মান বাড়ছে!

৮। কর্মীরা নিজেদের সময়-সুযোগমত শিখে নিতে পারেন

অনলাইন ট্রেনিং মডিউল এর সুবিধা থাকলে কর্মীরা নিজেদের সময় এবং সুযোগ অনুযায়ী সেগুলো দেখে নিতে পারেন। কর্পোরেট ট্রেনিং ক্লাসরুমে কখন কী শেখানো হচ্ছে, বা অন্যান্য কর্মীরা কখন কী শিখছেন – সেগুলোর সাথে এডজাস্ট করার ঝামেলায় না গিয়ে নিজের গতিতে, দিনে বা সপ্তাহের সুবিধামত সময়ে নিজের অফিস-ওয়ার্ক সম্পাদনার পাশাপাশিই তিনি সেগুলো শিখে নিতে পারছেন অনলাইন কোর্স থেকে। অফলাইন ক্লাসরুম ট্রেনিং-এ অনেক সময় ট্রেইনারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার একটা প্রেশার থাকে। অনলাইন ট্রেনিং এ সেই প্রেশার নেই; যা যা শেখানো হচ্ছে, তা ভালমত আয়ত্ত করে নিয়ে নিজের সুবিধামত সময়ে পরের লেসন বা মডিউলে যাওয়া যায় এক্ষেত্রে!

৭। কর্পোরেট ট্রেইনারের উপর নির্ভরশিলতা কমে

অনলাইন ট্রেনিং এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল – কর্পোরেট ট্রেইনারের উপর নির্ভরশিলতা ব্যাপকভাবে কমে যায়। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে একই বা বিভিন্ন গ্রুপকে ট্রেনিং দেয়ার জন্য বার বার কর্পোরেট ট্রেইনার ম্যানেজ করার ঝামেলা আর থাকছে না অনলাইন ট্রেনিং এ। তাই প্রথমবার অনলাইন ট্রেনিং ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করে ফেলার পর আর ট্রেইনারের প্রয়োজন হবে না বলা যায়। এতে একদিকে খরচ যেমন কমে; অন্যদিকে ক্লাসরুম ট্রেনিং এর পিছনে ট্রেইনার এবং কর্মীদের মূল্যবান Office Hour নষ্ট করতে হয় না!

যেসব কোম্পানি ই-লার্নিং এবং on-the-job ট্রেনিং প্রোভাইড করে, তারা সাধারণত প্রতিটি কর্মীর জন্য ২৬% করে বেশি রেভিনিউ আয় করে!

৬। কর্মী তথা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্টিভিটি এবং কাজের মান বৃদ্ধি পায়

বিশ্বের অন্যতম কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএম এর একটি রিপোর্ট মতে- যেসব কোম্পানিতে ইলার্নিং এর বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি এবং টুলস ব্যবহার করা হয়, সেসব কোম্পানির সামগ্রিক প্রোডাক্টিভিটি প্রায় ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধারণা করা হয়, ইলার্নিং এর পেছনে প্রতি ১ ডলার খরচ করার বিনিময়ে কোম্পানি প্রায় ৩০ ডলার মূল্যের প্রোডাক্টিভিটি অর্জন করতে পারে।

যেসকল কর্মচারী ভালভাবে প্রশিক্ষিত, যারা কোম্পানির সার্ভিস বা প্রোডাক্ট বা কাজের ক্ষেত্র ও পদ্ধতি নিয়ে বেশি ইনফর্মড, তারা কাস্টমার এবং কলিগদের আরও ভালভাবে সাপোর্ট দিতে পারবে। এতে কর্মী তথা সার্বিক প্রতিষ্ঠানেরই কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে! আর অফলাইন ক্লাসরুমের মাধ্যমে যে সময়ে এবং যে খরচে যতজন কর্মীকে এই ট্রেনিং দিতে পারবেন; অনলাইন ট্রেনিং এ সেই একই সময়ে এবং একই খরচে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি কর্মচারীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। দশ-বিশ-পঞ্চাশ জন কর্মী থেকে শুরু করে শত শত, এমনকি হাজার হাজার কর্মীকে একসাথে স্বল্প খরচে ট্রেনিং দেয়া সম্ভব অনলাইনে!

৫। যোগ্য নতুন কর্মী নিয়োগে কাজে লাগতে পারে

কর্মচারী অনবোর্ডিং, বা প্রি-অনবোর্ডিং প্রোগ্রামগুলোয় কর্পোরেট ই-লার্নিং কাজে লাগানোর প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে! কীভাবে কাজ করে? ধরুন নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার পর, বা নিয়োগ দেয়ার সময় তাদেরকে বিভিন্ন অনলাইন মডিউলের Access দিয়ে দিলেন! মডিউলগুলোতে প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস, কাজের ধরন, কালচার, Day to Day life, সার্ভিস বা প্রোডাক্ট, কোড অফ কনডাক্ট, এথিক্স, কমপ্ল্যায়েন্স, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য থাকল। এই মডিউলগুলো তখন নতুন এবং মেধাবী কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে। তাছাড়া পটেনশিয়াল কর্মচারী বা সাধারণ মানুষ যখন প্রতিষ্ঠানের এই ই-লার্নিং প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কে জানবে, এগুলোকে তখন তারা Employement Benefit হিসেবেই দেখবে!   

৪। প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী টার্নওভার রেট কমে

ধারণা করা হয় – যেসকল কর্মী প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান, তাদের ২৫%ই চলে যান নিতান্ত এই কারণে যে ঐ কোম্পানিতে পর্যাপ্ত ট্রেনিং এবং শেখার সুযোগ ছিল না! যেসব কর্মীরা নিজ প্রতিষ্ঠান নিয়ে খুশি এবং well-informed থাকেন, তারা সাধারণত প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি বিশ্বস্ত থাকেন। বিভিন্ন Self-paced অনলাইন ট্রেনিং বা লার্নিং ম্যাটেরিয়ালস এর সুবিধা দেয়া হলে তারা নিজেদের ক্যারিয়ার এবং দক্ষতা এগিয়ে নিতে বেশি সচেষ্ট থাকেন, প্রতিষ্ঠান ও কাজের প্রতি মোটিভেটেড থাকেন, এবং সামগ্রিকভাবে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পায়। এসব ই-লার্নিং ট্রেনিং এর মাধ্যমে তারা তাদের দুর্বলতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো নিয়ে নিজেরাই কাজ করতে পারেন, নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন। সামগ্রিকভাবে কর্মচারী হিসেবে তারা আরও ভাল হন এবং প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড নিয়ে মানুষকে আরও ভাল মেসেজ প্রদান করতে পারেন! 

৩। অপেশাদার/অনিয়মিত কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজে লাগে

কর্পোরেট ই-লার্নিং এর একটি বড় সুবিধা হল – এর মাধ্যমে অ্যামেচার কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। অ্যামেচার এমপ্লয়ী, ভলান্টিয়ার, ইন্টার্ন বা পার্ট টাইম কর্মী হায়ার করে তাদেরকে যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে যোগ্য ও মূল্যবান কর্মচারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। ই-লার্নিং এর মাধ্যমে এভাবে ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ কর্মচারী তৈরি করতে যে খরচ হবে, অলরেডি দক্ষ কর্মচারীদের বেশি বেতনে নিয়োগ দিতে এখন তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে! এছাড়া প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সাথে সাথে এমন কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, যেগুলোর জন্য দক্ষ লোকবল পাওয়া একরকম দুরুহ বলা যায়। সেগুলোর ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে ট্রেনিং এর জুড়ি নেই; তাছাড়া যেকোনো কর্মচারীই ট্রেন্ডি এসব স্কিল রপ্ত করার সুযোগ লুফে নিবেন! বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিশেষত স্টার্টাপ এবং SME দের জন্যে এটি বেশ ভালভাবে প্রযোজ্য।

২। প্রতিষ্ঠান এবং কর্মীর Knowledge Retention বৃদ্ধি পায়

একজন কর্মী যখন একটি Interactive এবং Engaging পরিবেশে শেখার সুযোগ পায়, তখন সেটি তার জ্ঞান এবং দক্ষতা শুধু বৃদ্ধিই করে না, প্রতিষ্ঠানের ভিতর সেই Knowledge এবং Skill Retention এর সুযোগও বাড়িয়ে দেয়! ই-লার্নিং বা অনলাইন ট্রেনিং এর আধুনিক সব এপ্লিকেশন- যেমন Blended Learning, Scenario Analysis, Stories & Games, Interactive Assessments, Micro-learning, Mobile Learning ইত্যাদির মাধ্যমে প্রদত্ত ট্রেনিং আরও ইফেকটিভ ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্রতিষ্ঠানের ভিতর প্র্যাকটিকাল কাজকর্মে সেই জ্ঞান এবং স্কিল আরও ভালভাবে প্রয়োগ করা যায়।  

১। অনলাইন ট্রেনিং একটি প্রতিষ্ঠানকে ইনোভেশন এবং অগ্রগতির একেবারে প্রথম সারিতে নিয়ে যেতে পারে!

একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে মূলত তার মানুষদের নিয়েই – যারা প্রতিদিন তাদের কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে ফাংশনিং রাখেন, লাভজনক রাখেন, আরও বড় করেন! আর সেই মানুষগুলো যদি প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস শিখেন, নতুন নতুন স্কিল অর্জন করেন, নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সিস্টেমের সাথে তাল মিলিয়ে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে আরও আপডেটেড রাখেন, তাহলে সেটি সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানকেই আসলে অপরাজেয় করে তোলে – আর এখানেই L&D প্রোগ্রামের স্বার্থকতা! ই-লার্নিং এর মাধ্যমে এই Learning & Development প্রোগ্রামগুলো আরও সহজ, সাশ্রয়ী, গতিশীল, স্কেলেবল এবং ইফেক্টিভ হয়!

Continuous Learning এর কালচার আছে এরকম প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই ফ্লেক্সিবল এবং দক্ষ টীম থাকে, যারা মার্কেট এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন জ্ঞান ও দক্ষতার সাথে নিজেদের খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন!

আশা করি এই আর্টিকেল থেকে বোঝা গেছে কেন কর্পোরেট ই-লার্নিং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা উচিৎ এবং অনলাইন ট্রেনিং এর জন্য ইনভেস্ট করার চিন্তাভাবনা শুরু করা উচিৎ! আরও বিস্তারিত জানতে, বা কর্পোরেট ই-লার্নিং সম্পর্কিত যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন

eLearning Solution For Your Business

Corporate Online Training Services!

Our innovative approach and robust online training solutions help achieve your company’s learning goals and increase efficiency across organization!


Learn More

শেয়ার করুন

Leave a Comment