You are currently viewing করোনা ভাইরাসঃ লক্ষণসমূহ, সাবধানতা এবং কিছু ভুল তথ্যের সঠিক উপস্থাপন

করোনা ভাইরাসঃ লক্ষণসমূহ, সাবধানতা এবং কিছু ভুল তথ্যের সঠিক উপস্থাপন

করোনা ভাইরাস নিয়ে চারিদিকে রাতারাতি যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, তার সাথে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু ভুল তথ্য। আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যা কেউ আগে কখনো মোকাবিলা করেননি, কাজেই আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক । তবে এ অবস্থায় আমাদের করণীয় হল দায়িত্বশীল নাগরিকদের মতো সঠিক তথ্য জানা এবং প্রচার করা। এই মুহূর্তে বৈষয়িক জ্ঞান ভীষণ মূল্যবান। 

আজ আমরা জেনে নেবো করোনার লক্ষণ, করণীয় এবং বাস্তব কিছু তথ্য যা আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ভুল ধারণাকে দূর করতে অনেকাংশে সহায়তা করবে।

করোনাভাইরাস এবং COVID-19

করোনা ভাইরাস পশুদের থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এবং সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নানা রকম রোগের জন্য দায়ী। চীন এর উহান শহরে উদ্ভুত COVID – 19 হলো এই ভাইরাস গুলোর এমন এক ভেরিয়েশন যা মানুষের মাঝে এর আগে কখনো দেখা যায়নি এবং কার্যতই এ রোগের কোনো উপশমও আমাদের জানা নেই।

আমরা খবরে দেখতে পাচ্ছি যে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগ COVID – 19 কে একটি Pandemic ঘোষণা করেছে; Pandemic আসলে কি? 

Pandemic বলতে এমন কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে নির্দেশ করা হয় যেটা বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন এবং মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায়। অর্থাৎ এমন রোগের বাহক হবে মানুষ, এবং রোগটি বিশ্বব্যাপী খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরবে । 

এখানে ভাইরাস যতটা না প্রাণঘাতী তার থেকেও বেশি শঙ্কাজনক হলো এর ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা। যেহেতু ভাইরাসটি এতো দ্রুত ছড়াচ্ছে তাই স্বাস্থ্য সেবা হয়ে পড়ছে দুর্বল। আমাদের সীমিত সম্পদ আর তার থেকেও সীমিত জনবল নিয়ে এমন একটি হুমকি মোকাবিলা করা আসলেও দুঃস্বাধ্য।

করোনাভাইরাস এর লক্ষণসমূহ

করোনাভাইরাস এর লক্ষণসমূহ

করোনা ভাইরাস এ  আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ গুলো জ্বর, শুকনো কাশি, শাসকষ্ট থেকে শুরু হয়ে দিনকে দিন গুরুতর হতে থাকে। কোনো কোনো কেইস এ  রোগীর বমিভাব, ডায়রিয়া, তীব্র শেষ কষ্ট-ও হতে দেখা যায়। গায়ে ব্যাথা একটি সাধারণ লক্ষণ, এছাড়াও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের মাঝে গলাব্যাথা ও কাশি দেখা যায় শুরু থেকেই, গলাব্যাথা সময়ের সাথে তীব্র হতে থাকে।

করোনাভাইরাস সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারণা (এবং সঠিক তথ্য)

করোনাভাইরাস সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারণা (এবং সঠিক তথ্য)

অনেকেই মনে করছেন করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় নাকি কমবয়সীদের তেমন নেই? আমারতো তাহলে আর ভয় নাই, কি বলেন? 

না!

WHO বলছে যে কোন বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারে, তবে বয়স্ক মানুষেরা যেহেতু দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হন তাই তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দ্রুত ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা টা তুলনামূলক বেশি। করোনা ভাইরাস এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তার অন্যতম কারণ কমবয়সীরা। তাদের ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কম। তারা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেরাচ্ছে আর আর রোগ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।

করোনাতে মৃত্যুর হার ৩% (এই আর্টিকেল লিখার সময়ে) বলে ভাবছেন চিন্তার কোন কারণ নেই। ইবোলাতে তো ৫০% মানুষ মারা যেত। সেই তুলনাতে এ তো কিছু নয়। করোনাতে মৃত্যুর হার কম হলেও এটি ছড়িয়ে পড়ছে অনেক দ্রুত। কাজেই আক্রান্তের সংখ্যা চিন্তা করলে এটি অনেক বেশি প্রকোপ।

অনেকে ভাবছেন, “তাপমাত্রা বেশি এমন অঞ্চলে করোনা ছড়ানোর আশংকা কম। অনেকে আফ্রিকার যুক্তি দিচ্ছেন। সেখানে তো ছড়ায়নি!” আসলে ছড়ায়নি বললে ভুল হবে। আফ্রিকাতেও ছড়িয়েছে কিন্তু তা হচ্ছে ধীরে ধীরে। কারণ আফ্রিকাতে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম, আর বিদেশীদের আসা যাওয়া কম। তাপমাত্রা এখানে কোন ভুমিকা রাখে না।

অনেকে বলছেন, “গরম পানি খেলে জীবাণু পেটে গিয়ে মরে যাবে।” আবার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে “যত বেশি ভিটামিন সি ততো কম করোনা।” এগুলো দেখলে যদিও মনে আশা জাগে কিন্তু এগুলো আসলে সত্যি নয়। WHO এমন কোনো স্টেটমেন্ট ই দেয়নি। সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে জানতে WHO এর myth-busters সেগমেন্ট টি দেখে আসতে পারেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার উপায়

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার উপায়

এই মুহূর্তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তাদেরই সবথেকে বেশি যারা করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এমন এলাকায় অবস্থান করছেন বা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আছেন। তাই সতর্কতার কোনো ই বিকল্প নাই। এই রোগের ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা আমরা যত কমিয়ে আনতে পারবো, পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যাওয়াটা যত পিছিয়ে দিতে পারবো, ততই এর নিরাময় আবিষ্কার হওয়ার সুযোগ- সময় বাড়বে।

এই কথাটি মাথায় রেখেই জেনে নেবো COVID – 19 সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু উপায়।

১। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা

এই পর্যন্ত এ সংক্রান্ত যত আর্টিকেল, খবর, ভিডিও, মীম যা-ই দেখেছেন সব জায়গাতেই আশা করি হাত ধোয়ার গুরুত্ব হারে হারে বুঝিয়ে দিয়েছে। তবুও বলবো, বেশ জোড়ালোভাবে বলবো, বার বার হাত ধুতে হবে এবং অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।

২। নিরাপদ দূরত্ব

যেহেতু এ রোগের সংক্রমণের প্রধান মাধ্যম হলে সরাসরি অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ। কাজেই হাঁচি- কাশি দিচ্ছে এমন যেকোনো মানুষের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। হ্যান্ডশেকএর সৌজন্য ভুলে যান কিছু দিনের জন্য। লোক জমায়েত হয় এমন জায়গা এড়িয়ে যান। 

নিজে যদি কোনো ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, যত সামান্য অসুস্থতাই সে হোক, ঘরের ভেতরে, অন্যদের সংস্পর্শের বাইরে থাকার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আগে থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে আপনি এই ভাইরাস এর কাছে আরো দুর্বল। হাসপাতাল এ ভীড় বাড়িয়েও লাভ নেই কিন্তু সন্দেহ জনক লক্ষণ দেখা দিলে, এবং ৪/৫ দিনের বেশি অবস্থা একই রকম থাকলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।

৩। হ্যান্ড স্যানিটাইজার

হাত পরিষ্কার করার আসলে বিকল্প নেই। সরাসরি সংস্পর্শ ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তি স্পর্শ করেছে এমন কোনো জিনিস আপনি স্পর্শ করলেন আবার সেই হাত দিয়েই যদি নিজের মুখ স্পর্শ করেন তাহলে জীবাণু আপনার শরীরে সহজ পথ পেয়ে গেলো! তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাথে রাখুন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর বিকল্প হিসেবে হেক্সিসোল হ্যান্ডরাব ব্যবহার করতে পারেন।

৪। মাস্ক 

সবাইকে মাস্ক পড়তে হবেনা, হাঁচি কাশি হচ্ছে এমন ব্যক্তি মাস্ক পড়লেই যথেষ্ট তবে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে সঠিক ভাবে। অন্যথায় মাস্ক আপনার সুরক্ষা কম দিবে বরং আপনার ইনফেকশন এর জন্যে দায়ী থাকবে বেশি। মাস্ক ব্যবহার করলে সতর্ক থাকতে হবে মাস্ক এর সামনের অংশে স্পর্শ করা যাবে না, এবং ব্যবহৃত মাস্ক ঢাকনা ওয়ালা ডাস্ট বিন এই ফেলতে হবে।

করোনাভাইরাস এবং সোশ্যাল আইসোলেশন

করোনাভাইরাস এবং সোশ্যাল আইসোলেশন

পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেটা আমাদের লক্ষ্য করতে হবে তা হলো “social isolation”. ইতোমধ্যেই সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই বাড়িতে থেকে, যেকোনো জনবহুল জায়গা, যানবাহন এড়িয়ে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকেই হয়তো ভাবছেন এমন করে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলে জনজীবন স্থবির হয়ে যাবে। এমন নাও হতে পারে। ঢাকার অনেক কোম্পানি এই পরিস্থিতিতে তাদের কর্মীদের জন্য Work From Home সিস্টেম চালু করেছে, বহুব্রীহি-র টীমও এখন বাসায় বসে কাজ করছে। টেকনলোজির এই যুগে কাজটা মোটেও কঠিন না কিন্তু। ঘরে বসে কাজ করার জন্য Slack, Trello, Google Drive, Hangouts, Microsoft Teams এমনকি Facebook Messenger বা Whatsapp ও বেশ কার্যকরী টুলস। এছাড়া এই সময়টা নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার দিকে সর্বোচ্চ নজর রেখে পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট এর জন্যেও কিছু সময় ব্যয় করতে পারেন। কাজটা সহজ করতে আমরা বহুব্রীহির পক্ষ থেকে তিনটি প্রিমিয়াম কোর্স সম্পুর্ণ ফ্রী রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত। 

মনে রাখতে হবে – পরিস্থিতি সবসময় এমন থাকবেনা। যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকুন, পাশাপাশি আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করুন। আমরা সবাই এই পরিস্থিতি একসাথে মোকাবেলা করছি, একসাথেই মুক্ত হবো! 

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments