ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ভুল ধারণা

ফেসবুক মার্কেটিং মানেই ডিজিটাল মার্কেটিং।

আমাদের দেশে ফেসবুকের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে কোম্পানি ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে এটি মার্কেটিংয়ের একটি বড় চ্যানেল। তাই শুধু ফেসবুক মার্কেটিংকেই ডিজিটাল মার্কেটিং হিসাবে ধরেন অনেকে।

শুধু অ্যাড চালালেই ডিজিটাল মার্কেটিং হয়।

অধিকাংশ কোম্পানি ও ব্র্যান্ড তাদের ডিজিটাল মার্কেটিং বাজেটের একটা বড় অংশ সেলসের জন্য খরচ করে। এ কারণে ফেসবুক বা গুগলে অ্যাড চালানোকে অনেকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মূল কাজ বলে মনে করেন।

আপওয়ার্ক-ফাইভারে অ্যাকাউন্ট খুললেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ পাওয়া যায়।

যেহেতু আপওয়ার্ক-ফাইভারে অল্প টাকার বহু ছোট কাজ থাকে, সেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং দিয়ে ইনকামের সহজ রাস্তা হিসাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলেন অনেকেই। অথচ কাজ পাবার জন্য আপনার যে ভালো কোয়ালিটির একটা প্রোফাইল আর পোর্টফোলিও দরকার, সেটা হয়তো আপনাকে কেউ বলে নি। তাই ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যাকাউন্ট বানানোর আগেই নিজেকে রেডি করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করা যায়।

ফ্রিল্যান্সিং আর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বহু সেমিনারে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করার স্বপ্ন দেখানো হয়। অথচ এ ধরনের ইনকামের জন্য একজন স্কিলড আর স্মার্ট ফ্রিল্যান্সার অনেক সময় দেন, পরিশ্রম করেন আর নিজেকে আপডেটেড রাখেন। লক্ষ টাকা ইনকাম করার আগে তাকে হয়তো ঘণ্টায় ৫-১০ ডলারের কাজই করতে হয়েছে মাসের পর মাস। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো ইনকামের স্বপ্ন দেখার সময় অন্তত মাথায় রাখুন যে, আপনাকেও পরিশ্রম করতে হবে। ৪ মাস, ৬ মাস বা ১ বছর কাজ করার পরেই হয়তো আপনার মাসিক ইনকাম লক্ষ টাকায় পৌঁছাবে। আবার ইনকাম যে সবসময় সমান বা বাড়তে থাকবে, তাও নয়। 

ডিজিটাল মার্কেটিং করতে ডেটা অ্যানালিসিস জানার দরকার নেই।

একটা মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য সরাসরি কতটা লাভ-ক্ষতি নিয়ে আসছে, একটা সময় সেটা হিসাব করা যেতো না। এতে করে মার্কেটিংয়ের বড় ফোকাস ছিলো প্রোমোশনাল ম্যাটেরিয়ালের উপর। এখনো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ডেটা-ড্রিভেন (Data-driven) ডিজিটাল মার্কেটিং তুলনামূলকভাবে নতুন। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে ডেটা অ্যানালাসিস কতটা জরুরি, সেটা অনেকের জানা নেই।

বাস্তবতা হলো, আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যে কাজই করেন না কেন, আপনাকে কোনো না কোনো ডেটা পয়েন্ট নিয়ে ভালোভাবে জানতে হবে। তবে এর জন্য আপনাকে ডেটা এক্সপার্ট হতে হবে না। এমনকি Microsoft Excel আর Google Sheets-এর সব ফাংশনও জানার প্রয়োজন নেই। একদম বিগিনার লেভেলে আপনাকে শুধু জানতে হবে একটা ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের মেট্রিকগুলো ঠিকভাবে হিসাব করতে হয়।

শুধু মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করা সম্ভব।

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা যেসব কন্টেন্ট দেখি, সেগুলোর একটা বড় অংশ হলো মোবাইল ফোন দিয়ে এডিট করা ফটো আর ভিডিও। এ কারণে অনেকের ধারণা, শুধু স্মার্টফোন দিয়েই ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায়। কিন্তু ব্যাপার হলো, ঠিকভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য পার্সোনাল কম্পিউটারের কোনো বিকল্প নেই।

ডিজিটাল মার্কেটিং খুবই সহজ।

অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের টুলগুলো এখন প্রায় সবার হাতের নাগালে। যেমন, যে কেউ চাইলে কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে ব্র্যান্ড পেইজ বা গ্রুপ বানিয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি দরকার হলে ব্র্যান্ড পেইজ থেকে সরাসরি অ্যাড চালানো সম্ভব। তাই অনেকে মনে করেন যে, কন্টেন্ট বানানো আর পোস্টিং শিখতে পারলেই ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা হয়ে গেলো। এ ভুল ধারণার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংকে সহজ মনে করেন তারা।

ডিজিটাল মার্কেটিং খুবই কঠিন।

আগেভাগে কাজ না শিখে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে গিয়ে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। হয়তো অ্যাডে খরচ বেশি করার পরও সেলস তেমন বাড়ে না। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোতে এনগেজমেন্ট থাকে না। ওয়েবসাইটের অর্গানিক ট্রাফিক খুব কম থাকে।এমন পরিস্থিতিতে ডিজিটাল মার্কেটিংকে খুবই কঠিন মনে হওয়া স্বাভাবিক। কোন ক্যাটাগরিতে ফোকাস করলে ভালো রেজাল্ট আসবে, সে ব্যাপারেও কনফিউশন দেখা দেয়। এটা ঠিক যে, ডিজিটাল মার্কেটিং সহজ নয়। তাই বলে একে কঠিন মনে করে নিরাশ হবারও কিছু নেই। সময় নিয়ে ধৈর্য সহকারে শিখলে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং করে ভালো ইনকাম নিশ্চিত করতে পারবেন।

একবার ডিজিটাল মার্কেটিং শেখাই যথেষ্ট।

ডিজিটাল মার্কেটিং একবার শিখে ফেললে একে বিভিন্ন উপায়ে আপনি অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত আপনার স্কিলকে ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নাহলে ইনকামের সুযোগ একটা সময় কমে যাবে। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং করার পাশাপাশি নিয়মিত নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন।

শেয়ার করুন

Leave a Comment