ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে আয়

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় কেমন?

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ১-২টি ক্যাটাগরিতে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে আপনি মাসে গড়ে ৳১০,০০০ – ৳৫০,০০০ পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। তবে এটি ক্লায়েন্ট, প্রজেক্টসংখ্যা ও আপনার নির্ধারিত রেটের উপর নির্ভরশীল। তাই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো প্রত্যাশা না রাখাই ভালো।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম Fiverr থেকে একটা উদাহরণ নিয়ে দেখা যাক।

এসইও ব্যাকলিংকের এ সার্ভিসে ১ দিনের ডেলিভারিতে এ ফ্রিল্যান্সার চার্জ করছেন ৫ ডলার। প্রতিদিন তিনি যদি ১টি করে প্রজেক্ট পান, তাহলে সারা মাসে তার উপার্জন হবে ১৫০ ডলার। আবার Fiverr এ আয়ের উপর ২০% ফি কেটে রাখে। অর্থাৎ, ফি কাটার পর মাসিক উপার্জন গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১২০ ডলারে। ডলারের রেট ১০০ টাকা ধরলে এক্ষেত্রে মাসিক আয় ৳১২,০০০।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং থেকে ভালো আয় করার জন্য আপনাকে তাই নিয়মিত যেমন কাজ পেতে হবে, তেমনি এমন একটি রেট ঠিক করতে হবে যেন প্রজেক্টসংখ্যা কম হলেও আপনার আয় কমে না যায়। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ে কী কাজ করতে হয়?

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনার মূল কাজ হলো ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজের ডেলিভারি দেয়া। যেমন, একটি ফেসবুক মার্কেটিং প্রজেক্টে আপনার কাজ হতে পারে ৩ সপ্তাহের অ্যাড ক্যাম্পেইন চালিয়ে ক্লায়েন্টের জন্য কমপক্ষে ১০০টি কোয়ালিটি লিড নিয়ে আসা।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং কীভাবে শুরু করবেন?

  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ শিখুন।
  • ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ করুন।
  • ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত কাজ খুঁজুন।
  • ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী কাজের প্রপোজাল সাবমিট করুন।
  • কাজ পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকভাবে কাজের ডেলিভারি দিন।
  • নিয়মিত পোর্টফোলিও আপডেট করুন।
  • ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রেফারেন্স ও রিভিউ নিন।
  • কীভাবে কাজ করলে আপনি সবচেয়ে ভালো ডেলিভারি দিতে পারেন, সেটি ঠিক করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ শিখুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে কাজ শেখার কোনো বিকল্প নেই। আপনি হয়তো মনে করতেই পারেন, “আগে শুরু করি। এরপর একটু একটু শিখে নিলেই হবে।” কিন্তু এভাবে ভালো কাজের ডেলিভারি দেয়া প্রায় অসম্ভব। বরং কাজের কোয়ালিটি খারাপ হলে নতুন কাজ পাবার সম্ভাবনা একেবারে কমে যাবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য যে আপনাকে সব কাজ আগেভাগে পুরোপুরি শিখে নিতে হবে, তা কিন্তু নয়। যে ক্যাটাগরির কাজে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বা যে ক্যাটাগরি নিয়ে তাড়াতাড়ি শিখতে পারেন, সে ক্যাটাগরি দিয়েই শুরু করুন। পরে অন্য ক্যাটাগরিতে ফোকাস করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ করুন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুতে অনেকে একসাথে কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট বানান। এতে করে কাজ পাওয়া ও ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সময়েরও অপচয় হয়। তাই যেকোনো ১টি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ করুন। স্কিল আর কনফিডেন্স থাকলে সর্বোচ্চ ২টি প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নিতে পারেন। তবে একবারে ২টি অ্যাকাউন্ট কতটুকু ম্যানেজ করতে পারবেন, সেটা আগে ভাবুন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে শুধু সাইন-আপ করাই যথেষ্ট নয়। বরং ভালো কোয়ালিটির প্রোফাইল বানাতে হবে আপনাকে। কারণ, ক্লায়েন্টকে ইমপ্রেস করার জন্য এটিই আপনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়। তাই:

  • সময় নিয়ে খুব ভালোভাবে ও নির্ভুল ভাষায় আপনার প্রোফাইল টাইটেল ও ডেসক্রিপশন লিখুন। কীভাবে আপনার স্কিল ক্লায়েন্টদের প্রজেক্টে সাহায্য করবে, সেটা যেন এ লেখাতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, তা নিশ্চিত করুন।
  • ক্লায়েন্টের সাথে আপনি কীভাবে কাজ করবেন, তার ধারণা দিতে পারেন। যেমন, কোন সময়ে আপনার সাথে ক্লায়েন্ট যোগাযোগ করলে সাথে সাথে রেসপন্স পাবেন, সে ব্যাপারে তথ্য দিন।
  • প্ল্যাটফর্মে থাকা স্কিল লিস্ট থেকে স্কিল বাছাই করুন। দরকার হলে পরবর্তীতে আপডেট করুন।
  • প্রফেশনাল প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করুন।
  • কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে উল্লেখ করুন।
  • স্কিল সার্টিফিকেট থাকলে উল্লেখ করুন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে আপনার কাজের পারিশ্রমিক আপনিই ঠিক করবেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কম রেটের উপর ফোকাস না করে আপনার স্কিলের ভিত্তিতে রেট বেছে নিন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত কাজ খুঁজুন।

আপনার স্কিল অনুযায়ী প্রতিনিয়ত আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ খুঁজতে হবে। যত্রতত্র প্রজেক্টে অ্যাপ্লাই না করে ক্লায়েন্টের পোস্ট ভালোভাবে পড়ে প্রজেক্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন। যদি প্রজেক্ট আপনার স্কিলের সাথে যায় ও কোয়ালিটি কাজের ডেলিভারি দেবার কনফিডেন্স থাকে, তাহলেই শুধু কাজের প্রপোজাল পাঠান।

ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী কাজের প্রপোজাল সাবমিট করুন।

কাজের প্রপোজালে ক্লায়েন্টের প্রতিটি ডিমান্ডকে গুরুত্ব দিন। কীভাবে তার সমস্যার সমাধান করবেন, সে সম্পর্কে লিখুন। আগে এ ধরনের কাজ করে থাকলে তার কথাও উল্লেখ করতে পারেন। এতে করে আপনার স্কিল ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্লায়েন্ট ভরসা পাবেন।

কাজ পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকভাবে কাজের ডেলিভারি দিন।

প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্টের ডেলিভারির জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেটি ১ দিন হতে পারে। আবার ১ মাসও হতে পারে। আপনি যেমন প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করুন না কেন, ক্লায়েন্ট নির্ধারিত ডেডলাইনের মধ্যে ডেলিভারি নিশ্চিত করুন। নাহলে পেমেন্ট আটকে যাওয়া ও খারাপ রিভিউসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে আপনাকে।

কোনো প্রজেক্টে কাজ করার সময় যদি দেখেন যে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় দরকার, তাহলে ক্লায়েন্টকে ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলুন ও ডেডলাইন বাড়ানোর অনুরোধ করুন। এতে করে অযাচিত সমস্যায় পড়তে হবে না।

নিয়মিত পোর্টফোলিও আপডেট করুন।

প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট আপনার জন্য একেকটি নতুন অর্জন। তাই একটি প্রজেক্ট শেষ করার সাথে সাথে আপনার পোর্টফোলিও আপডেট করুন। কারণ আপডেটেড পোর্টফোলিওর ভিত্তিতেই নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়া সহজ হবে আপনার জন্য।

ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রেফারেন্স ও রিভিউ নিন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালো কোয়ালিটির প্রজেক্ট ডেলিভারি দিতে পারলে যেকোনো ক্লায়েন্ট আপনার যোগ্যতায় বিশ্বাস করবেন। তাই আপনার করা প্রজেক্ট ক্লায়েন্টের পছন্দ হলে তার কাছ থেকে রেফারেন্স ও রিভিউ নিয়ে রাখুন। প্রতিটি ভালো রিভিউ ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে আপনার ক্রেডিবিলিটি বাড়াবে। ফলে আপনি নিজের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

কীভাবে কাজ করলে আপনি সবচেয়ে ভালো ডেলিভারি দিতে পারেন, সেটি ঠিক করুন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভালো কাজের ডেলিভারি দেয়া চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ, বিশেষ করে একসাথে ২-৩টি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করলে। তাই আপনার স্কিলের লেভেল, কাজ করার স্টাইল, কাজ করার সময় আর প্রজেক্টের ডিমান্ডসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে একটি ওয়ার্কফ্লো (Workflow) দাঁড় করান। এটি আপনার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টকে অনেকাংশে সহজ করে দেবে।

আপনার ওয়ার্কফ্লো বানানোর সময় কয়েকটি প্রশ্ন বিবেচনা করতে পারেন। যেমন:

  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোন কাজের জন্য আপনি কোন টুল ব্যবহার করেন?
  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একেকটি কাজ করার জন্য আপনার গড়ে কত সময় দরকার হয়?
  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন কাজের জন্য আপনার রেডিমেড কোনো টেমপ্লেট আছে কি না?
  • দিন/রাতের ঠিক কোন সময়ে কাজের উপর আপনি বেশি ফোকাস রাখতে পারেন?
শেয়ার করুন

5 thoughts on “ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে আয়”

  1. খুবই সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় প্রকাশ। ধন্যবাদ। আমি নতুন এবং এই কাজে জড়িত হওয়ার আগ্রহ ও প্রয়োজন দুটোই আছে। আমাকে সহজ ও সুন্দর ভাবে কিছু উপদেশ আশা করছি।

    Reply
  2. আর্টিকেলটা বেশ ভালো লাগলো, আশা করি বহুব্রীহি এমন নতুন নতুন ব্লগ আপলোড করবেন। আর দেশের বেকার তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের জনগণকে মানবসম্পদে রুপান্তরিত করবে।

    Reply
  3. এই প্রথম না এর আগেও কয়েকটা ব্লগ পড়েছি, এটা পড়ে যা জানতে পারলাম। সেটা হল, ক্লাস করার পাশাপাশি এমন সাবলীল ভাষায় ব্লগ আরো পড়া উচিত আর তাত্ত্বিক জ্ঞান আহোরণ করা খুব-ই জরুরী। ধন্যবাদ bohubirihi.

    Reply

Leave a Comment