ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে আয় করার সুযোগ

ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে মূলত ৫টি উপায়ে আয় করতে পারবেন আপনি:

  • ফ্রিল্যান্সিং করে
  • ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালিয়ে
  • নিজের ওয়েবসাইট থেকে
  • নিজের ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে
  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরি করে

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় কেমন?

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ১-২টি ক্যাটাগরিতে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে আপনি মাসে গড়ে ৳১০,০০০ – ৳৫০,০০০ পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। তবে এটি ক্লায়েন্ট, প্রজেক্টসংখ্যা ও আপনার নির্ধারিত রেটের উপর নির্ভরশীল। তাই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো প্রত্যাশা না রাখাই ভালো।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম Fiverr থেকে একটা উদাহরণ নিয়ে দেখা যাক।

এসইও ব্যাকলিংকের এ সার্ভিসে ১ দিনের ডেলিভারিতে এ ফ্রিল্যান্সার চার্জ করছেন ৫ ডলার। প্রতিদিন তিনি যদি ১টি করে প্রজেক্ট পান, তাহলে সারা মাসে তার উপার্জন হবে ১৫০ ডলার। আবার Fiverr এ আয়ের উপর ২০% ফি কেটে রাখে। অর্থাৎ, ফি কাটার পর মাসিক উপার্জন গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১২০ ডলারে। ডলারের রেট ১০০ টাকা ধরলে এক্ষেত্রে মাসিক আয় ৳১২,০০০।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং থেকে ভালো আয় করার জন্য আপনাকে তাই নিয়মিত যেমন কাজ পেতে হবে, তেমনি এমন একটি রেট ঠিক করতে হবে যেন প্রজেক্টসংখ্যা কম হলেও আপনার আয় কমে না যায়। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ে কী কাজ করতে হয়?

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনার মূল কাজ হলো ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজের ডেলিভারি দেয়া। যেমন, একটি ফেসবুক মার্কেটিং প্রজেক্টে আপনার কাজ হতে পারে ৩ সপ্তাহের অ্যাড ক্যাম্পেইন চালিয়ে ক্লায়েন্টের জন্য কমপক্ষে ১০০টি কোয়ালিটি লিড নিয়ে আসা।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং কীভাবে শুরু করবেন?

  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ শিখুন।
  • ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ করুন।
  • ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত কাজ খুঁজুন।
  • ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী কাজের প্রপোজাল সাবমিট করুন।
  • কাজ পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকভাবে কাজের ডেলিভারি দিন।
  • নিয়মিত পোর্টফোলিও আপডেট করুন।
  • ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রেফারেন্স ও রিভিউ নিন।
  • কীভাবে কাজ করলে আপনি সবচেয়ে ভালো ডেলিভারি দিতে পারেন, সেটি ঠিক করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ শিখুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে কাজ শেখার কোনো বিকল্প নেই। আপনি হয়তো মনে করতেই পারেন, “আগে শুরু করি। এরপর একটু একটু শিখে নিলেই হবে।” কিন্তু এভাবে ভালো কাজের ডেলিভারি দেয়া প্রায় অসম্ভব। বরং কাজের কোয়ালিটি খারাপ হলে নতুন কাজ পাবার সম্ভাবনা একেবারে কমে যাবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য যে আপনাকে সব কাজ আগেভাগে পুরোপুরি শিখে নিতে হবে, তা কিন্তু নয়। যে ক্যাটাগরির কাজে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বা যে ক্যাটাগরি নিয়ে তাড়াতাড়ি শিখতে পারেন, সে ক্যাটাগরি দিয়েই শুরু করুন। পরে অন্য ক্যাটাগরিতে ফোকাস করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ করুন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুতে অনেকে একসাথে কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট বানান। এতে করে কাজ পাওয়া ও ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সময়েরও অপচয় হয়। তাই যেকোনো ১টি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ করুন। স্কিল আর কনফিডেন্স থাকলে সর্বোচ্চ ২টি প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নিতে পারেন। তবে একবারে ২টি অ্যাকাউন্ট কতটুকু ম্যানেজ করতে পারবেন, সেটা আগে ভাবুন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে শুধু সাইন-আপ করাই যথেষ্ট নয়। বরং ভালো কোয়ালিটির প্রোফাইল বানাতে হবে আপনাকে। কারণ, ক্লায়েন্টকে ইমপ্রেস করার জন্য এটিই আপনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়। তাই:

  • সময় নিয়ে খুব ভালোভাবে ও নির্ভুল ভাষায় আপনার প্রোফাইল টাইটেল ও ডেসক্রিপশন লিখুন। কীভাবে আপনার স্কিল ক্লায়েন্টদের প্রজেক্টে সাহায্য করবে, সেটা যেন এ লেখাতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, তা নিশ্চিত করুন।
  • ক্লায়েন্টের সাথে আপনি কীভাবে কাজ করবেন, তার ধারণা দিতে পারেন। যেমন, কোন সময়ে আপনার সাথে ক্লায়েন্ট যোগাযোগ করলে সাথে সাথে রেসপন্স পাবেন, সে ব্যাপারে তথ্য দিন।
  • প্ল্যাটফর্মে থাকা স্কিল লিস্ট থেকে স্কিল বাছাই করুন। দরকার হলে পরবর্তীতে আপডেট করুন।
  • প্রফেশনাল প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করুন।
  • কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে উল্লেখ করুন।
  • স্কিল সার্টিফিকেট থাকলে উল্লেখ করুন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে আপনার কাজের পারিশ্রমিক আপনিই ঠিক করবেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কম রেটের উপর ফোকাস না করে আপনার স্কিলের ভিত্তিতে রেট বেছে নিন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত কাজ খুঁজুন।

আপনার স্কিল অনুযায়ী প্রতিনিয়ত আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ খুঁজতে হবে। যত্রতত্র প্রজেক্টে অ্যাপ্লাই না করে ক্লায়েন্টের পোস্ট ভালোভাবে পড়ে প্রজেক্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন। যদি প্রজেক্ট আপনার স্কিলের সাথে যায় ও কোয়ালিটি কাজের ডেলিভারি দেবার কনফিডেন্স থাকে, তাহলেই শুধু কাজের প্রপোজাল পাঠান।

ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী কাজের প্রপোজাল সাবমিট করুন।

কাজের প্রপোজালে ক্লায়েন্টের প্রতিটি ডিমান্ডকে গুরুত্ব দিন। কীভাবে তার সমস্যার সমাধান করবেন, সে সম্পর্কে লিখুন। আগে এ ধরনের কাজ করে থাকলে তার কথাও উল্লেখ করতে পারেন। এতে করে আপনার স্কিল ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্লায়েন্ট ভরসা পাবেন।

কাজ পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকভাবে কাজের ডেলিভারি দিন।

প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্টের ডেলিভারির জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেটি ১ দিন হতে পারে। আবার ১ মাসও হতে পারে। আপনি যেমন প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করুন না কেন, ক্লায়েন্ট নির্ধারিত ডেডলাইনের মধ্যে ডেলিভারি নিশ্চিত করুন। নাহলে পেমেন্ট আটকে যাওয়া ও খারাপ রিভিউসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে আপনাকে।

কোনো প্রজেক্টে কাজ করার সময় যদি দেখেন যে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় দরকার, তাহলে ক্লায়েন্টকে ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলুন ও ডেডলাইন বাড়ানোর অনুরোধ করুন। এতে করে অযাচিত সমস্যায় পড়তে হবে না।

নিয়মিত পোর্টফোলিও আপডেট করুন।

প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট আপনার জন্য একেকটি নতুন অর্জন। তাই একটি প্রজেক্ট শেষ করার সাথে সাথে আপনার পোর্টফোলিও আপডেট করুন। কারণ আপডেটেড পোর্টফোলিওর ভিত্তিতেই নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়া সহজ হবে আপনার জন্য।

ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রেফারেন্স ও রিভিউ নিন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভালো কোয়ালিটির প্রজেক্ট ডেলিভারি দিতে পারলে যেকোনো ক্লায়েন্ট আপনার যোগ্যতায় বিশ্বাস করবেন। তাই আপনার করা প্রজেক্ট ক্লায়েন্টের পছন্দ হলে তার কাছ থেকে রেফারেন্স ও রিভিউ নিয়ে রাখুন। প্রতিটি ভালো রিভিউ ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে আপনার ক্রেডিবিলিটি বাড়াবে। ফলে আপনি নিজের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

কীভাবে কাজ করলে আপনি সবচেয়ে ভালো ডেলিভারি দিতে পারেন, সেটি ঠিক করুন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভালো কাজের ডেলিভারি দেয়া চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ, বিশেষ করে একসাথে ২-৩টি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করলে। তাই আপনার স্কিলের লেভেল, কাজ করার স্টাইল, কাজ করার সময় আর প্রজেক্টের ডিমান্ডসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে একটি ওয়ার্কফ্লো (Workflow) দাঁড় করান। এটি আপনার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টকে অনেকাংশে সহজ করে দেবে।

আপনার ওয়ার্কফ্লো বানানোর সময় কয়েকটি প্রশ্ন বিবেচনা করতে পারেন। যেমন:

  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোন কাজের জন্য আপনি কোন টুল ব্যবহার করেন?
  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একেকটি কাজ করার জন্য আপনার গড়ে কত সময় দরকার হয়?
  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন কাজের জন্য আপনার রেডিমেড কোনো টেমপ্লেট আছে কি না?
  • দিন/রাতের ঠিক কোন সময়ে কাজের উপর আপনি বেশি ফোকাস রাখতে পারেন?

ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালিয়ে আয়

আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উপর কমপক্ষে ১-২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে নিজের এজেন্সি দেবার কথা চিন্তা করতে পারেন। দুইভাবে এজেন্সি দিতে পারবেন:

  • পরিচিত অন্য ডিজিটাল মার্কেটারের সাথে পার্টনারশিপ করে
  • সরাসরি নিয়োগ দিয়ে টিম বানানোর মাধ্যমে

ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালানো মানেই একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করা। তাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার সময় ৫টি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ:

  • আপনার অভিজ্ঞতা ও পোর্টফোলিও
  • এজেন্সি চালানোর খরচ
  • আপনার টিম ম্যানেজমেন্ট স্কিল
  • আপনার নেটওয়ার্কিং স্কিল
  • আপনার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট স্কিল

উপরের ৫টি বিষয়ে কনফিডেন্স থাকলে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালিয়ে ভালো আয়ের সুযোগ রয়েছে আপনার জন্য। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালিয়ে কত আয় করা যায়?

ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালিয়ে শুরুতে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। তবে এটি সম্পূর্ণরূপে ক্লায়েন্টসংখ্যা, সার্ভিসের ধরন ও সার্ভিসের কোয়ালিটির উপর নির্ভরশীল। তাই শুরুতেই মাসিক কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জনে যেতে এজেন্সি দেবার আগে থেকে ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে আপনার ও আপনার টিমের ভালো পরিচিতি থাকা জরুরি।

ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিতে কী কাজ করতে হয়?

আপনি যদি নিজের ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালান, তাহলে আপনার মূল কাজ হবে:

  • আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিসের ব্যাপারে সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের জানানো – প্রোমোশন চালিয়ে কিংবা সরাসরি ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করে
  • ক্লায়েন্টের প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিসের প্রজেক্ট প্রপোজাল পাঠানো
  • ক্লায়েন্টের সাথে আলোচনা করে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রজেক্টের স্কোপ অফ ওয়ার্ক  (Scope of Work) বানানো
  • ডিজিটাল মার্কেটিং প্রজেক্টের ভিত্তিতে আপনার টিমের জন্য কাজ নির্ধারিত করে দেয়া
  • ডিজিটাল মার্কেটিং প্রজেক্টের প্রগ্রেস নিয়ে আপনার টিমের কাছ থেকে নিয়মিত আপডেট নেয়া
  • ডিজিটাল মার্কেটিং প্রজেক্ট অনুযায়ী ক্লায়েন্টের কাছে কাজের ডেলিভারি দেয়া
  • ক্লায়েন্টকে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রজেক্টের প্রগ্রেস সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট জানানো
  • দরকার হলে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রজেক্টের উপর রিপোর্ট বানিয়ে ক্লায়েন্টের কাছে পাঠানো
  • প্রজেক্টের আগে-পরে ক্লায়েন্টের সাথে কাজের পেমেন্ট বা বিলিং সংক্রান্ত ব্যাপার সামলানো

ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কীভাবে শুরু করবেন?

  • আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির মাধ্যমে কী কী সার্ভিস দিতে চান, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস দেবার জন্য এজেন্সিতে কত জন মার্কেটারের দরকার হবে, তা হিসাব করুন।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস দেবার জন্য অন্য মার্কেটারদের সাথে পার্টনারশিপ করবেন নাকি কাউকে নিয়োগ দেবেন, সেটা ঠিক করুন।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিসের রেট নির্ধারণ করুন।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিসের যাবতীয় তথ্য নিয়ে ক্যাটালগ ও পোর্টফোলিও তৈরি করুন।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির ওয়েবসাইট বানান।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চালানোর জন্য দরকারি ব্যবসায়িক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করুন।

নিজের ওয়েবসাইট থেকে আয়

নিজের ওয়েবসাইট বানিয়ে আয় কেমন?

নিজস্ব ওয়েবসাইট বানানোর প্রথম ৩ – ৬ মাসে কয়েকশো টাকা থেকে কয়েক হাজার টাকা মাসিক আয় হতে পারে আপনার। ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যা আর ভিজিটর কোয়ালিটি ভালো হলে লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব।

একটা উদাহরণ দেখা যাক। ওয়েবসাইট থেকে আয় করার জন্য Google AdSense পাবলিশারদের মধ্যে জনপ্রিয়। ভিজিটর সংখ্যা, লোকেশন আর কন্টেন্ট ক্যাটাগরির ভিত্তিতে আপনার সম্ভাব্য ইনকাম কত, সেটার ধারণা দেবার জন্য অ্যাড নেটওয়ার্কটির একটি ক্যালকুলেটর রয়েছে।

ধরে নিলাম, আপনি বাংলাদেশি কাস্টমারদের জন্য গেমিংয়ের উপর বাংলা কন্টেন্ট পাবলিশ করবেন আপনার সাইটে। এক্ষেত্রে মাসে গড় পেইজ ভিউ ৫০,০০০ হলে পুরো বছরে আপনার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ইনকাম হবে ৩৪৮০ ডলার। অর্থাৎ, মাসে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ইনকাম ২৯০ ডলার।

বাস্তবতা হলো, বাংলা কন্টেন্টের জন্য আপনি ক্যালকুলেটরে দেখানো ইনকামের ধারেকাছেও যেতে পারবেন না। তাই শুরুতেই ইনকামের আশা কম রাখুন। অবশ্য এটা শুধু বাংলা কন্টেন্টের বেলায় ঘটে না। ইংরেজি কন্টেন্টের ক্ষেত্রেও ইনকামের অনুমান করা কঠিন। এ কারণে Google AdSense যে ফ্যাক্টরগুলো উল্লেখ করে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • কন্টেন্ট ক্যাটাগরি
  • ভিজিটরের লোকেশন
  • অ্যাডভার্টাইজারের ডিমান্ড
  • ভিজিটরের ডিভাইস
  • কন্টেন্টের স্ট্রাকচার (Google-এর ভাষায় “Content Vertical”)
  • সিজনালিটি (Seasonality)
  • অ্যাডের সাইজ
  • কারেন্সি এক্সচেইঞ্জ রেট (Currency Exchange Rate)

নিজের ওয়েবসাইট থেকে কীভাবে আয় করবেন?

নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে মূলত ৪টি উপায়ে আয় করতে পারবেন:

  • অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে
  • অ্যাড স্পেস বিক্রি করে
  • ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে
অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে

আপনার ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিটর আসা শুরু করলেই অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইনকাম বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। এর জন্য প্রথমে ভালো কোনো অ্যাড নেটওয়ার্কে সাইন-আপ করুন (যেমন, Google AdSense)। এরপর কোন ধরনের অ্যাড আপনার ওয়েবসাইটে দেখাবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন। অ্যাড নেটওয়ার্ক থেকে দেয়া কোড ওয়েবসাইটে ব্যবহার করলে ভিজিটরদের কাছে অ্যাড দেখানো শুরু হবে।

আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাড দেখা গেলেই যে সেখান থেকে ইনকাম আসবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিজিটরদের ক্লিকও দরকার হবে। অর্থাৎ, আপনাকে যত বেশি সম্ভব ভিজিটর নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। আবার ভিজিটররা কোন দেশ বা জায়গা থেকে আসছেন, সেটাও ইনকামে প্রভাব ফেলবে। যেমন, বাংলাদেশের ৫ জন ওয়েবসাইট ভিজিটরের ৫টি ক্লিকের জন্য আপনি যে টাকা পাবেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ জন ওয়েবসাইট ভিজিটরের ১টি ক্লিকের জন্য হয়তো ইনকাম তার চেয়েও বেশি হবে। কারণটা হলো, উন্নত দেশের কাস্টমাররা অনলাইনে কেনাকাটা বেশি করেন বলে তাদের জন্য অ্যাডভার্টাইজাররা অ্যাড নেটওয়ার্কগুলোতে বেশি খরচ করে।

অ্যাড স্পেস বিক্রি করে

অ্যাড নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে ইনকাম করার একটা সমস্যা হলো, অ্যাড লিংকে ভিজিটরদের ক্লিক সংখ্যা কম হলে আপনার আয় কম হবে। অর্থাৎ, ক্লিক কম পড়লে প্রতি মাসে ৫০,০০০ ভিজিটর এনেও খুব একটা লাভ হবে না।

শুধু ভিজিটর সংখ্যার ভিত্তিতে ভালো ইনকাম নিশ্চিত করার জন্য অনেকে নিজেদের সাইটের স্পেস বিক্রি করেন কোম্পানি ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে। যেমন, প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে এ ধরনের অ্যাড প্লেসমেন্ট দেখা যায়।

অ্যাড স্পেস বিক্রির জন্য আপনাকে প্রথম আলোর মতো বড় পাবলিশার হতে হবে না। কিন্তু আপনার সাইটে মাসে কমপক্ষে ৩০,০০০ – ৫০,০০০ ভিজিটর না আসলে অ্যাড স্পেস বিক্রি করা কঠিন হয়ে যাবে।

অ্যাড স্পেস বিক্রি করার সুবিধা হলো:

  • অ্যাডে কম ক্লিক পড়লেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইনকাম করা যায়
  • অ্যাড স্পেসের সাইজ ও দাম আপনিই ঠিক করতে পারবেন
  • অ্যাড স্পেস বিক্রির ইনকাম পুরোটাই আপনার হবে

অ্যাড স্পেস থেকে ইনকাম করার অসুবিধা হলো:

  • আপনাকে নিজে থেকে কোম্পানি ও ব্র্যান্ডগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে হবে
  • আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক ভালো না হলে অধিকাংশ কোম্পানি ও ব্র্যান্ড অ্যাড প্লেসমেন্টে আগ্রহী না হবার সম্ভাবনা বেশি
  • অ্যাড স্পেসের দাম নিয়ে কোম্পানি ও ব্র্যান্ডগুলোর সাথে নেগোসিয়েশনে যেতে হবে
  • অ্যাড ম্যানেজমেন্টের পুরো দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে

আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ক্যাটাগরি যদি নির্দিষ্ট হয়, তাহলে সেটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য উপযুক্ত হবে। এ উপায়ে আয় করার জন্য:

  • মার্কেট রিসার্চ করে লাভজনক কন্টেন্ট ক্যাটাগরি বেছে নিন
  • আপনার বাছাই করা কন্টেন্ট ক্যাটাগরির উপর নিয়মিত কন্টেন্ট ওয়েবসাইটে পাবলিশ করুন
  • ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যা বাড়লে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যাকাউন্ট বানিয়ে ফেলুন
  • আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্টে অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করুন

যেসব কন্টেন্ট ক্যাটাগরিতে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের সংখ্যা বেশি, সেসব কন্টেন্ট অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বেশি লাভজনক। যেমন:

  • টেকনোলজি
  • ভ্রমণ
  • ফ্যাশন
  • রান্নাবান্না ও খাবার
  • ফাইন্যান্স
  • স্বাস্থ্য
  • শিক্ষা
  • গেমিং
  • ব্যবসা ও মার্কেটিং

কন্টেন্ট ক্যাটাগরি ঠিক করার আগে আপনাকে অবশ্য প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের সংখ্যার বাইরেও আরো কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যেমন:

  • যে লাভজনক কন্টেন্ট ক্যাটাগরিতে আপনি ফোকাস করতে চাইছেন, সে ক্যাটাগরিতে কেমন কন্টেন্ট ইতোমধ্যে অনলাইনে রয়েছে?
  • যে ক্যাটাগরির কন্টেন্ট আপনি বানাতে চাইছেন, সে ক্যাটাগরি নিয়ে আপনি কতটুকু জানেন?
  • কন্টেন্ট বানানোর জন্য আপনাকে কতটুকু রিসার্চ করতে হবে?
  • কন্টেন্ট বানাতে আপনার কেমন খরচ বা রিসোর্স দরকার হবে?

নামকরা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে যত্রতত্র অ্যাকাউন্ট বানানো সম্ভব নয়। এর জন্য অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে আপনাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক কন্টেন্ট আর ভিজিটর চায় এসব প্ল্যাটফর্ম। তাই অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট বানানোর আগেই আপনার সাইটের নিয়মিত ভিজিটর থাকা দরকার।

একেক ধরনের কন্টেন্ট ক্যাটাগরির জন্য একেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম ভালো। তাই আপনাকেই রিসার্চ করে দেখতে হবে কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে আপনার ইনকাম হবার সম্ভাবনা বেশি। জনপ্রিয় কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রয়েছে:

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মগুলোর বাইরে বহু কোম্পানি ও ব্র্যান্ড নিজস্ব অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম চালায়। এগুলোতেও সরাসরি অ্যাপ্লাই করা সম্ভব। যেমন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ক্যাটাগরিতে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন আর হোস্টিংয়ের উপর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সুযোগ বেশি। আবার আপনি যদি ভ্রমণ সংক্রান্ত কন্টেন্ট নিয়ে লিখতে চান, তাহলে Booking.com-এর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আপনার ইনকামের জন্য ভালো অপশন হতে পারে।

কোনো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে সাইন-আপ করার আগে আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে রিসার্চ করুন। যেমন:

  • অ্যাফিলিয়েট লিংক কীভাবে কাজ করে
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আপনি কতটুকু সেলস কমিশন পাচ্ছেন
  • ইনকাম করা কমিশন কত দিন পর আপনি পুরোপুরি তুলতে পারবেন
  • ইনকাম করা কমিশন কীভাবে আপনার কাছে পৌঁছাবে

অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে কমিশন দেয়া হয় PayPal-এর মাধ্যমে। অথচ আমাদের দেশ থেকে আপনি PayPal অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ, পেমেন্ট নিয়ে ঝামেলায় পড়বেন।

ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে

নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে খুব ভালো ইনকাম করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আপনার কাজ শুধু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। পুরো একটি ব্যবসা চালানোর প্রস্তুতি লাগবে আপনার। অর্থাৎ, আপনার ইনকামের সম্ভাবনা নির্ভর করবে ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মার্কেট ডিমান্ড, কোয়ালিটি, দাম, কাস্টমার সাপোর্টসহ বহু বিষয়ের উপর। এ কারণে অধিকাংশ বিগিনারের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।

আপনার ওয়েবসাইটে কোন ধরনের ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করবেন, সে সিদ্ধান্ত আপনিই নেবেন। যেমন:

  • ফ্রিল্যান্সিং বা কনসাল্টিং সার্ভিস
  • ইবুক
  • ওয়ার্ক টেমপ্লেট
  • ওয়েবসাইট টেমপ্লেট বা থিম ও প্লাগইন
  • ডিজাইন টেমপ্লেট
  • অনলাইন কোর্স
  • অনলাইন সেমিনার

নিজের ওয়েবসাইট কীভাবে বানাবেন?

সহজে ওয়েবসাইট বানানোর জন্য এখন অনলাইনে বহু টুল পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করতে আপনার ওয়েব ডেভেলপমেন্ট জানার কোনো প্রয়োজন নেই। কিছু বেসিক বিষয় জানা থাকলে আর টুলগুলোর ডকুমেন্টেশন ঠিকভাবে ফলো করলে আপনিও স্ট্যান্ডার্ড একটি কন্টেন্ট ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন, যেখান থেকে ইনকাম করা সম্ভব।

ওয়েবসাইট বানাতে আপনার দরকার হবে:

  • ডোমেইনের নাম
  • হোস্টিং সার্ভিস
  • কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
  • ওয়েবসাইটের থিম বা টেমপ্লেট
  • ওয়েবসাইটের প্লাগইন বা সফটওয়্যার

ডোমেইনের নাম আর হোস্টিং সার্ভিসে কিছু খরচ থাকে বলে অনেকে একেবারে ফ্রি টুল খোঁজেন। যেমন:

  • Blogger
  • Wix-এর ফ্রি ভার্সন
  • Weebly-এর ফ্রি ভার্সন

সম্পূর্ণ ফ্রি এ টুলগুলো হয়তো ওয়েব ডিজাইনের বেসিকস নিয়ে আপনাকে আইডিয়া দেবে। কিন্তু ভালো আয় করার জন্য এসব টুল তেমন সাহায্য করবে না। Blogger প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে কাস্টম ডোমেইন ব্যবহার করতে পারলেও ডিজাইনের অপশন সীমিত।

নিজস্ব ওয়েবসাইট চালানোর জন্য যে খরচ হয়, সেটাকে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং স্কিল আর ভবিষ্যৎ ইনকামের উপর একটা বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করুন।

ডোমেইনের নাম

আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি নাম ঠিক করে সেটির জন্য ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করুন।

.com ডোমেইন সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাই আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন ভার্সন .com হলে ভালো।

ডোমেইনের জন্য বছরে আপনার খরচ হবে ৬০০ – ১৫০০ টাকা। উল্লেখ্য যে, .com.bd ভার্সনের বেলায় আপনাকে আলাদাভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বিটিসিএলের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি .com.bd ভার্সনের ডোমেইন অর্ডার করতে পারবেন। তবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হতে ২ – ৩ দিন সময় লাগবে।

হোস্টিং সার্ভিস

আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় কোড, ফাইল, ফোল্ডার আর ডেটাবেইজের জন্য সার্ভারের প্রয়োজন। হোস্টিং সার্ভিসগুলোর কাছে আপনি এমন সার্ভার পাবেন।

হোস্টিং সার্ভিসের জন্য মাসে বা বছরে আপনার কত খরচ হবে, তা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। যেমন:

  • কোন ধরনের সফটওয়্যার বা কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে আপনি ওয়েবসাইট বানাচ্ছেন
  • ওয়েবসাইটে কোন ধরনের কন্টেন্ট আপলোড করছেন
  • ওয়েবসাইট কন্টেন্টের সাইজ
  • ওয়েবসাইট ভিজিটরের সংখ্যা

অর্থাৎ, আপনার ওয়েবসাইটে যত বেশি কন্টেন্ট থাকবে বা ভিজিটরের সংখ্যা যত বাড়বে, খরচও সে অনুযায়ী বাড়বে। শুরুর দিকে অবশ্য মাসে কয়েকশো টাকা দিয়েই ওয়েবসাইট চালাতে পারবেন।

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System) মূলত আপনার ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট আপলোড, পাবলিশিং আর আপডেটের কাজকে সহজ করে দেয়।

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress.org) সবচেয়ে ভালো অপশন। এর সুবিধা হলো, এটি সম্পূর্ণ ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন। আবার সারা বিশ্বে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে আপনার ওয়েবসাইট বানানোর জন্য অনলাইনে প্রচুর টিউটোরিয়াল আর সাপোর্ট পাবেন। এমনকি ১ দিনের মধ্যে একটি ফাংশনাল ওয়েবসাইট বানানো সম্ভব ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে!

উল্লেখযোগ্য আরো ২টি ফ্রি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হলো:

প্রিমিয়াম ওয়েবসাইট বিল্ডার দিয়ে ওয়েবসাইট বানানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন:

  • Squarespace (যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইটের জন্য)
  • Wix-এর প্রিমিয়াম ভার্সন (যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইটের জন্য)
  • Weebly-এর প্রিমিয়াম ভার্সন (যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইটের জন্য)
  • Shopify (ইকমার্স সাইটের জন্য)
ওয়েবসাইটের থিম বা টেমপ্লেট

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসাবে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করলে আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইনের জন্য দরকার হবে থিম (Theme)। ওয়ার্ডপ্রেসের থিম ডিরেক্টরি থেকেই পছন্দ অনুযায়ী ফ্রি থিম সরাসরি ইন্সটল করতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেসের প্রিমিয়াম থিম আর প্লাগইনও রয়েছে অনেক। তবে শুরুতে থিম আর প্লাগইনের জন্য কোনো খরচ করার দরকার হয় না সাধারণত।

ওয়েবসাইটের প্লাগইন বা সফটওয়্যার

প্রতিটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে কিছু বেসিক ফিচার থাকে। যেমন, ওয়ার্ডপ্রেসে সহজে আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে ব্লগ পোস্ট পাবলিশ করা যায়।

আপনার ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করার জন্য স্পেশাল কিছু ফিচার দরকার হতে পারে। যেমন, আপনি হয়তো ইমেইল মার্কেটিংয়ের জন্য ভিজিটরদের ইমেইল সংগ্রহ করতে চান। এক্ষেত্রে আপনাকে কাস্টম প্লাগইন ব্যবহার করতে হবে।

নিজের ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিং

নিজের ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিং করার সুবিধা কী কী?

নিজের ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিং করলে আপনি যেসব সুবিধা পাবেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বানানোর সুবিধা
  • ডিজিটাল মার্কেটিং বাজেট নিয়ন্ত্রণের সুবিধা
  • ব্র্যান্ডকে ঠিকভাবে প্রেজেন্ট করার স্বাধীনতা
  • ডিজিটাল মার্কেটিং টিম নিয়োগের সুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বানানোর সুবিধা: কাস্টমারদের সাথে আপনাকেই হয়তো সবচেয়ে বেশি ইন্টারঅ্যাকশন করতে হয়। ফলে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে তাদের মতামত ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানার সুযোগ আপনার বেশি, যা ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বানানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ডিজিটাল মার্কেটিং বাজেট নিয়ন্ত্রণের সুবিধা: নিজের ব্যবসার ব্যাপারে দরকারি সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা থাকে আপনার। ফলে দরকার অনুযায়ী ডিজিটাল মার্কেটিং বাজেটে পরিবর্তন আনতে পারেন আপনি।

ব্র্যান্ডকে ঠিকভাবে প্রেজেন্ট করার স্বাধীনতা: কাস্টমারদের সামনে আপনার ব্র্যান্ডকে ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা থাকে আপনার।

ডিজিটাল মার্কেটিং টিম নিয়োগে সুবিধা: নিজের ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিং করলে আপনি যে প্র্যাকটিক্যাল স্কিল ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, তা আপনাকে পরবর্তীতে ডিজিটাল মার্কেটিং টিম বা এজেন্সি নিয়োগের সময় সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে কাজে দেবে।

নিজের ব্যবসায় কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন?

  • আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাস্টমারদের মতামত ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব জানার চেষ্টা করুন। এটি আপনার কাস্টমার রিসার্চের অংশ।
  • কাস্টমার রিসার্চের ভিত্তিতে ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বানান।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি অনুযায়ী ক্যাম্পেইন প্ল্যানিং করুন।
  • ক্যাম্পেইন প্ল্যান অনুসারে ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেলগুলোতে কন্টেন্ট পোস্ট করুন।
  • ক্যাম্পেইনের পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং করুন। Microsoft Excel বা Google Sheets-এর মাধ্যমে পারফরম্যান্সের ডকুমেন্টেশন রাখুন।
  • ক্যাম্পেইন চলার সময় কাস্টমারদের রেসপন্স ও ইন্টারঅ্যাকশনের উপর আলাদাভাবে ফোকাস করুন।
  • পারফরম্যান্স ও কাস্টমার রেসপন্স অনুযায়ী ক্যাম্পেইনে পরিবর্তন নিয়ে আসুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বানানোর সময় আপনাকে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যেমন:

  • প্ল্যানিংয়ের ধরন
    • পুরো বছরের ক্যাম্পেইন প্ল্যানিং একবারে করবেন নাকি পুরো বছরকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ক্যাম্পেইন চালাবেন?
  • ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য
    •  ক্যাম্পেইন থেকে মূলত আপনার চাওয়া কী? সেলস নাকি ব্র্যান্ডের পরিচিতি?
  • ক্যাম্পেইনের ধরন
    • ক্যাম্পেইন কি অর্গানিক হবে নাকি পেইড? নাকি ২ ধরনের ক্যাম্পেইন একই সাথে চালাবেন?
  • ক্যাম্পেইনের বাজেট
    • ক্যাম্পেইনের বাজেট কি শুরুতেই ঠিক করে নেবেন? নাকি কম বাজেট দিয়ে শুরু করে পারফরম্যান্স ও কাস্টমার রেসপন্স অনুযায়ী বাজেট বাড়াবেন?
  • ক্যাম্পেইনের সময়
    • ঈদ বা এ ধরনের বড় উপলক্ষের কতটুকু আগে বা পরে আপনার অন্য ক্যাম্পেইনগুলো সাজাবেন?
  • ক্যাম্পেইন ম্যাটেরিয়াল
    • পুরো ক্যাম্পেইনের ম্যাটেরিয়াল কীভাবে প্রস্তুত করবেন? নিজের টিম দিয়ে নাকি কোনো এজেন্সির মাধ্যমে?

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরি

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরিতে বেতন কত?

আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে যোগ দিলে আপনার মাসিক বেতন গড়ে ৳২০,০০০ – ৳৩০,০০০ হবে। অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বেতন বাড়বে।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জব সার্কুলারগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করলে একটা ব্যাপার লক্ষ করবেন। বেতনের জায়গায় অনেক সময় “Negotiable” লেখা থাকে। বাস্তবতা হলো, ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা না থাকলে বা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ডিগ্রি না থাকলে এক্ষেত্রে ৳২০,০০০ – ৳৩০,০০০ স্যালারি নিশ্চিত করা কঠিন। তাই এ ধরনের সার্কুলার দেখে অ্যাপ্লাই করার আগে কাজের পোর্টফোলিও বানিয়ে ফেলা ভালো।

উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের বাইরে আলাদা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন:

  • লাঞ্চ
  • যাতায়াতের ব্যবস্থা
  • পারফরম্যান্স বোনাস
  • ঈদ বা এ ধরনের উৎসব ভাতা

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরিতে অ্যাপ্লাই করার সময় বেতনের পাশাপাশি এসব সুবিধাও বিবেচনা করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরিতে কী কাজ করতে হয়?

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অধিকাংশ এন্ট্রি-লেভেলের চাকরিতে আপনার কাজ হবে:

  • ক্যাম্পেইন প্ল্যান অনুযায়ী প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রোমোশনাল কন্টেন্ট রেডি করা ও কন্টেন্টগুলো বিভিন্ন ডিজিটাল চ্যানেলে পোস্ট করা
  • প্রোমোশনাল কন্টেন্টগুলোর পারফরম্যান্স ট্র্যাক করা
  • প্রোমোশনাল কন্টেন্টগুলোর পারফরম্যান্সের ডেটা অ্যানালিসিস করা ও রিপোর্ট বানানো
  • ক্যাম্পেইন প্ল্যান ও স্ট্রাটেজি বানানোর সময় মার্কেটিং টিমকে সাহায্য করা

সাধারণত ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ২-১টি ক্যাটাগরিতে আপনার ফোকাস বেশি থাকবে। এক্ষেত্রে সে ক্যাটাগরির দায়িত্বগুলো আপনাকে পালন করতে হবে। যেমন, আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া এক্সিকিউটিভের পজিশনে থাকেন, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলো ভালোভাবে চেক করার কাজ থাকবে আপনার।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরি কীভাবে খুঁজবেন?

পত্রপত্রিকা থেকে শুরু করে অনলাইন জব পোর্টাল – বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরি খুঁজতে পারবেন আপনি। পত্রপত্রিকার চেয়ে অবশ্য অনলাইনেই সার্কুলারগুলো বেশি পাবেন।

আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জব পোর্টাল bdjobs.com সাইটে কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরি খুঁজবেন, সেটা দেখা যাক।

Bdjobs.com সাইটে গেলে হোমপেইজ থেকেই সরাসরি কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করতে পারবেন। যেমন:

  • Digital Marketing
  • Social Media
  • SEO

রেজাল্ট পেইজে লাল রং দিয়ে কীওয়ার্ড মার্কড করা থাকে, যেন সহজে চোখে পড়ে।

রেজাল্ট পেইজে অ্যাডভান্সড ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখান থেকে আপনি কাস্টমাইজড সার্চ করতে পারবেন। যেমন:

  • Category
  • Industry
  • Location

যেহেতু এন্ট্রি-লেভেলের জব ক্যান্ডিডেট হিসাবে আপনি অ্যাপ্লাই করার সুযোগ বেশি চান, সেহেতু অ্যাডভান্সড ফিল্টারিং ব্যবহার না করাই ভালো। বরং সময় নিয়ে মানানসই সার্কুলারগুলো বের করুন।

LinkedIn-এর মাধ্যমে আপনি আরো ভালোভাবে জব সার্কুলার খুঁজে পাবেন। এর সুবিধা হলো, একেবারে ইন্টার্নশিপের মতো এন্ট্রি লেভেলের ডিজিটাল মার্কেটিং জব খোঁজার ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি বিদেশি কোম্পানিগুলোর রিমোট জবেও সরাসরি অ্যাপ্লাই করা সম্ভব। ঠিকভাবে সার্কুলার খুঁজতে LinkedIn-এর অ্যাডভান্সড জব ফিল্টারিং কাজে দেবে।

LinkedIn-এ ডিজিটাল মার্কেটিং জব খোঁজার সময় আপনার প্রোফাইল আপডেট করে ফেলুন। প্রোফাইলের মূল সেকশনগুলোর সাথে অন্য কী সেকশন যোগ করবেন, সে সিদ্ধান্ত আপনার। তবে নিশ্চিত করুন যে:

  • প্রোফাইলে প্রফেশনাল হেডলাইন ব্যবহার করেছেন
  • নিজের প্রফেশনাল ছবি আপলোড করেছেন
  • নির্ভুল ভাষায় প্রোফাইল সামারি লিখেছেন
  • Experience ও Education সেকশনে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন
  • Skills সেকশনে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের স্কিলগুলো যোগ করেছেন

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাকরি কীভাবে পাবেন?

  • পত্রপত্রিকা, অনলাইন জব পোর্টাল ও LinkedIn-এ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জব সার্কুলারগুলোর নিয়ে নিয়মিত ঘাঁটাঘাঁটি করুন।
  • ইমেইলের মাধ্যমে নতুন সার্কুলারের আপডেট পেতে Google Alerts ও LinkedIn-এর Job Alert চালু করুন।
  • LinkedIn-এ অন্যান্য মার্কেটারদের সাথে যত বেশি সম্ভব নেটওয়ার্কিং করুন। তবে তা যেন প্রফেশনালিজমের বাইরে না যায়। যেমন, যত্রতত্র কাউকে জব দেবার জন্য অনুরোধ করবেন না।
  • ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জব সার্কুলারগুলোর নিয়ম অনুযায়ী অ্যাপ্লাই করুন।
  • অ্যাপ্লিকেশনের সময় প্রয়োজনে কাস্টমাইজড সিভি ব্যবহার করুন, যেন জব সার্কুলারে চাওয়া যোগ্যতাগুলোর সাথে আপনার সিভি মিলে যায়।
  • ইন্টারভিউর জন্য নির্বাচিত হলে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও অ্যাপ্লাই করা জবের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংগ্রহ করুন।
  • ইন্টারভিউর আগে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং স্কিল, অভিজ্ঞতা ও পোর্টফোলিও নিজেই একবার রিভিউ করে নিন, যেন নিজেকে ভালোভাবে প্রেজেন্ট করতে পারেন।
  • দরকার হলে ইন্টারভিউর আগে পরিচিত কোনো প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটারের সাথে কথা বলে নিন।
  • সঠিক সময়ে ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করুন – সেটা অনলাইনে হোক বা অফলাইনে।
শেয়ার করুন

Leave a Comment