ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং কী ও কীভাবে করবেন?

ফটো ও ভিডিও শেয়ারিংভিত্তিক জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিংয়ের জন্য কার্যকর একটি মাধ্যম। এ প্ল্যাটফর্মে আগে কাজ না করে থাকলে আপনার জন্য টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানো কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু সাধারণ কিছু উপায় দিয়ে আপনি ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং শুরু করতে পারেন।

ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং কী?

ইন্সটাগ্রামের নানা ফিচারকে কাজে লাগিয়ে কোনো প্রোডাক্ট, সার্ভিস, ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানের প্রচারণাই হলো ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং।

প্রধানত দুই ভাগে আপনি ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং করতে পারেন –

  • অর্গানিক: অর্গানিক (Organic) কন্টেন্ট ব্যবহার করে। যেমন, ‘Story’ পোস্ট করা।
  • পেইড: বিজ্ঞাপন দিয়ে ও ইনফ্লুয়েন্সারদের (Influencer) সাহায্যে।

আপনি যে উপায়েই ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং চালানোর চেষ্টা করেন না কেন, এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা আর প্ল্যাটফর্মের ফিচারগুলোর দক্ষ ব্যবহার। এছাড়া, আপনার সামগ্রিক মার্কেটিং প্রচেষ্টার সাথে মানানসই হতে হবে একে। চ্যালেঞ্জিং এ প্রক্রিয়াকে আয়ত্ত করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করতে পারেন।

ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ কেন?

  • প্রতি মাসে ১০০ কোটি ইউজার ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেন। অর্থাৎ, ব্র্যান্ডগুলো পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পায়।
  • ৮৩% ইন্সটাগ্রাম ইউজার এ প্ল্যাটফর্ম থেকে নতুন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে জেনে থাকেন। অর্থাৎ, ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়ানোতে এটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • ইন্সটাগ্রাম ফেসবুকের একটি অংশ। তাই ফেসবুক মার্কেটিং করার সময়েই ইন্সটাগ্রামে প্রচারণা চালাতে পারবেন।

ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং কীভাবে করবেন?

  • ‘Business’ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন
  • আপনার বিজনেস অ্যাকাউন্ট প্রোফাইল ঠিকভাবে সাজান
  • কন্টেন্টের বৈচিত্র্য বজায় রাখুন
  • সুন্দর ক্যাপশন লিখুন
  • ভেবেচিন্তে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন
  • ‘Instagram Story’ ফিচারের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন
  • নিয়মিত লাইভে যান
  • পোস্টের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করুন
  • সম্ভব হলে ইন্সটাগ্রাম শপ ব্যবহার করুন
  • অ্যানালিটিক্সে মনোযোগ দিন

‘Business’ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন

বিশেষ এ প্রোফাইলে আপনার জন্য এমন কিছু সুবিধা রয়েছে যা আপনি পার্সোনাল প্রোফাইলে পাবেন না। যেমন:

  • আপনার পোস্ট ও স্টোরির পারফরম্যান্স ডেটা দেখার ব্যবস্থা
  • আপনার ফলোয়ারদের বিস্তারিত তথ্য
  • মেসেজ, পোস্ট কমেন্ট ও ইন্টারঅ্যাক্টিভ স্টিকারের মাধ্যমে ফলোয়ারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুবিধা
  • বিজ্ঞাপন দেবার সহজ ব্যবস্থা

ইন্সটাগ্রামে বিজনেস অ্যাকাউন্ট বানাতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১: সাইন-আপ (যদি কোনো অ্যাকাউন্ট না থাকে)

ধাপ ১ সাইন-আপ (যদি কোনো অ্যাকাউন্ট না থাকে)
ইন্সটাগ্রাম সাইন-আপ
  • ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
  • অ্যাপ চালু করে অ্যাকাউন্ট বানানোর জন্য ইমেইল বা ফোন নাম্বার লিখুন ও ‘Next’ অপশনে ট্যাপ করুন।
  • ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
  • প্রোফাইলের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে ‘Next’-এ ট্যাপ করুন।

ধাপ ২: ‘Business’ অ্যাকাউন্টে রূপান্তর

ধাপ ২ ‘Business’ অ্যাকাউন্টে রূপান্তর
Business অ্যাকাউন্টে রূপান্তর
  • নিজের প্রোফাইলে যান ও ডান পাশে উপরে হ্যামবার্গার আইকনে ট্যাপ করুন।
  • ‘Settings’-এ ট্যাপ করুন। এরপর অ্যাকাউন্ট।
  • ‘Switch to professional account’-এ ট্যাপ করুন।
  • ‘Business’-এ ট্যাপ করে পরের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

আপনার বিজনেস অ্যাকাউন্ট প্রোফাইল ঠিকভাবে সাজান

ইন্সটাগ্রামে মাত্র ১৫০ ক্যারেক্টারের মধ্যে আপনার বায়ো (Bio) লিখতে হবে। অর্থাৎ, প্রথম দেখাতেই আপনার কাস্টমারের কাছে নিজের ব্র্যান্ডকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আপনি মাত্র ১৫০টি ক্যারেক্টার পাচ্ছেন। এর বাইরে আপনাকে আরো কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।

  • আপনার নাম: নাম লেখার জন্য ৩০টি ক্যারেক্টার ব্যবহার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনাকে সার্চ করা যাবে।
  • আপনার ইউজারনেম: এটাকে অনেকে ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেল (Handle) বলে থাকেন। এখানেও ক্যারেক্টারের সীমা ৩০।
  • আপনার ওয়েবসাইট: আপনার ওয়েবসাইটের লিংক এখানে দিতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবার কারণ হলো, ইন্সটাগ্রাম সব জায়গায় লিংক ব্যবহার করতে দেয় না। তাই আপনার কাঙ্ক্ষিত লিংকে টার্গেট অডিয়েন্সকে নিয়ে যেতে এটি ভালো একটি সুযোগ।
  • ক্যাটাগরি: তালিকা থেকে আপনার ব্যবসার ধরন নির্বাচন করুন।
  • যোগাযোগের তথ্য: কীভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করা যাবে, সে সম্পর্কিত তথ্য দেবার সুবিধা রয়েছে। 
  • ‘Action’ বাটন: অপশনটি ব্যবহার করে টার্গেট অডিয়েন্সকে বুকিং বা অর্ডার দেবার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
  • ফেসবুক পেইজ: ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইল থেকে আপনার ব্র্যান্ডের ফেসবুক পেইজ যোগ করুন। এতে করে দুই প্ল্যাটফর্মে একসাথে মার্কেটিং চালাতে পারবেন।

কন্টেন্টের বৈচিত্র্য বজায় রাখুন

আপনাকে মনে রাখতে হবে, ইন্সটাগ্রাম একটি ভিজ্যুয়াল মাধ্যম। তাই একদিকে আপনাকে যেমন প্রতিনিয়ত গ্রাহককে প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট দেখাতে হবে, অন্যদিকে কন্টেন্টে থাকা চাই বৈচিত্র্য।

শুধু ছবি পোস্ট না করে অন্যান্য ফরম্যাটের কন্টেন্ট ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করুন। যেমন:

  • ফলোয়ারদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা পোস্ট,
  • আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কিত উক্তি বা টেক্সটনির্ভর ছবি,
  • ইউজারদের বানানো কন্টেন্ট,
  • ছোট টিউটোরিয়াল, যেগুলো টার্গেট অডিয়েন্সকে নতুন কিছু শেখাতে পারে।

সুন্দর ক্যাপশন লিখুন

ইন্সটাগ্রামে ক্যাপশন নিয়ে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। ক্যাপশন কীভাবে লিখছেন, কী ধরনের শব্দ নির্বাচন করছেন, টার্গেট অডিয়েন্সের মনোযোগ কতটা কাড়তে পারছেন – তার উপর আপনার ব্র্যান্ড ভয়েস (Brand voice) নির্ভর করে।

ইন্সটাগ্রামে ক্যাপশনের জন্য ২২০০ ক্যারেক্টার পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ‘More’ ট্যাপ করার আগে ক্যাপশনে মাত্র দুই লাইন দেখা যায়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে অর্গানিক পোস্টের ক্ষেত্রে ১৩৮ – ১৫০ ক্যারেক্টার আর বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ১২৫ ক্যারেক্টারের মধ্যে ক্যাপশন লিখুন। অবশ্য কপিরাইটিংয়ে অভিজ্ঞ হয়ে থাকলে আপনি এর চেয়েও লম্বা ক্যাপশন ব্যবহার করতে পারেন।

ভেবেচিন্তে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন

ইন্সটাগ্রামে কন্টেন্টের রীচ বাড়াতে হ্যাশট্যাগ বেশ কাজে দেয়। আপনি চাইলে একটি পোস্টে ৩০টি পর্যন্ত হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রতি পোস্টে সর্বোচ্চ ৫ – ৯টি হ্যাশট্যাগ রাখুন। খেয়াল রাখুন যেন হ্যাশট্যাগ আপনার ব্র্যান্ডের সাথে প্রাসঙ্গিক হয়।

‘Instagram Story’ ফিচারের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন

‘Instagram Story’ ফিচারের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন
ইন্সটাগ্রাম স্টোরি – ১ম উপায়
ইন্সটাগ্রাম স্টোরি – ২য় উপায়

বিশেষ ধরনের এ কন্টেন্ট ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত দেখা যায়। স্টোরিতে বাস্তব জীবনের সাথে যায় এমন ছবি বা ভিডিও যত বেশি থাকে, এনগেজমেন্ট তত বাড়ে।

ভালোভাবে স্টোরি ফিচার ব্যবহার করতে ব্র্যান্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো বার্তা দিন। প্রথম ৩ সেকেন্ডের মধ্যে সে বার্তা যেন টার্গেট অডিয়েন্স পেয়ে যান, সে চেষ্টা করুন। আরো ভালো হয় যদি ভিউয়ারকে কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে উৎসাহ দেন। যেমন, আপনার সাইট ভিজিট করা।

নিয়মিত লাইভে যান

নিয়মিত লাইভে যান
ইন্সটাগ্রাম লাইভ

টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে ইন্সটাগ্রাম লাইভ ব্রডক্যাস্টিং খুব কার্যকরী উপায়। এ ফিচারকে নানাভাবে কাজে লাগাতে পারেন আপনি। যেমন:

  • ‘Add a Guest’ অপশনের মাধ্যমে কোনো ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট বা ইনফ্লুয়েন্সারের সাথে লাইভে আসুন।
  • প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ওয়ার্কশপ বা টিউটোরিয়াল দেখান।
  • কারো ইন্টারভিউ নিন।
  • প্রোডাক্ট বা সার্ভিস রিভিউর জন্য কাস্টমার বা ক্লায়েন্টের সাথে লাইভে আলোচনা করুন।

পোস্টের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করুন

যে সময়ে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স ইন্সটাগ্রামে বেশি থাকে, সে সময়ে পোস্ট করলে রীচ আর এনগেজমেন্ট ভালো পাবেন। কিন্ত পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করে আপনার ব্যবসার অবস্থান ও ধরনের উপর। যেমন, বাংলাদেশে যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটি থাকে শুক্রবার-শনিবার, সেহেতু বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত এনগেজমেন্ট হয়তো বেশি হতে পারে।

ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিংয়ের শুরুতে দিনের বিভিন্ন সময়ে পোস্ট করুন। এরপর অ্যানালিটিক্স থেকে বুঝতে পারবেন কোন সময় আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো সাড়া পাওয়া যায়।

সম্ভব হলে ইন্সটাগ্রাম শপ ব্যবহার করুন

ইন্সটাগ্রামের শপ ট্যাবটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি সরাসরি আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস টার্গেট অডিয়েন্সের সামনে তুলে ধরতে পারেন। তাদেরকে ওয়েবসাইটেও নিয়ে যেতে পারবেন। সেলস বাড়ানোর জন্য এটি সাহায্য করবে।

অ্যানালিটিক্সে মনোযোগ দিন

ইন্সটাগ্রাম অ্যানালিটিক্স

আপনি যত ভালোভাবে ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং করুন না কেন, আরো ভালো করার সুযোগ ও সম্ভাবনা সবসময় থাকে। এ কাজে আপনাকে সহযোগিতা করবে ইন্সটাগ্রাম ইনসাইটস (Instagram Insights)।

অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে আপনি যেসব তথ্য পাবেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে  –

  • কোন ধরনের ফরম্যাট ফলোয়ারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে,
  • কোন সময়ে করা পোস্টের রীচ ও এনগেজমেন্ট ভালো হয়,
  • কোন বয়সের, জায়গার, ভাষার ও জেন্ডারের ইউজার আপনার ব্র্যান্ডকে ফলো করে,
  • আপনার ফলোয়াররা কোন কোন বিষয় বা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আগ্রহী।

ইন্সটাগ্রাম অ্যানালিটিক্স থেকে পাওয়া ডেটা অ্যানালিসিস করে ভবিষ্যতের জন্য নতুন পরিকল্পনা করতে পারেন।

ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিংয়ে ভালো হয়ে উঠুন

ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং থেকে সাফল্য পেতে বিজনেস অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ঠিকভাবে গুছিয়ে নিন। পাশাপাশি নিত্যনতুন ভিন্ন ফরম্যাটের কন্টেন্ট পোস্ট করুন প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ আর ক্যাপশন দিয়ে। এর সাথে সঠিক সময়ে ‘Story’ আর লাইভ ব্রডক্যাস্টিংয়ের মতো ফিচার ব্যবহারের মাধ্যমে ব্র্যান্ডের ফলোয়ারদের এনগেজমেন্ট বাড়ান। সেলসের জন্য শপ ফিচার তো আছেই! আপনার যাবতীয় কাজের পারফরম্যান্স অ্যানালিটিক্সের সাহায্যে ট্র্যাক করে পরিবর্তন আনতে পারবেন মার্কেটিং পরিকল্পনায়।

মার্কেটিং বিষয়ক টিপস ও কন্টেন্ট ইমেইলে পেতে চান?

নিচের ফর্মটি পূরণ করে জমা দিলেই সাবস্ক্রাইবড হয়ে যাবেন আমাদের মার্কেটিং নিউজলেটারে।

শেয়ার করুন

8 thoughts on “ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং কী ও কীভাবে করবেন?”

Leave a Comment