লাইভ বনাম প্রি-রেকর্ডেড অনলাইন কোর্স

বিগত এক দশকে অনলাইন কোর্স এর মাধ্যমে লার্নিংয়ের চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে তাল রেখে নিত্যনতুন উদ্ভাবনের সাহায্যে সকল বয়সী ও সকল শ্রেণীপেশার মানুষ ঘরে বসে নিজের মত করে শেখার সুযোগ পাচ্ছে। কেউ হয়তো ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে শিখছে। আবার কেউ কেউ শিখছে ইনফোগ্রাফিক্স বা স্লাইড শো’র মাধ্যমে। এই বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমের সমন্বয়ের কারণে অনলাইন লার্নিংয়ের জনপ্রিয়তা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। 

পৃথিবীর সকল অনলাইন লার্নিং প্রক্রিয়াকে আমরা দু’টো ভাগে ভাগ করতে পারি: 

১. সিনক্রোনাস (Synchronous) লার্নিং ও 

২. এসিনক্রোনাস (Asynchronous) লার্নিং 

সিনক্রোনাস লার্নিং এমন এক ধরনের শিখন পদ্ধতি যা রিয়েল-টাইমে ঘটে থাকে। অর্থাৎ আপনি, আপনার ক্লাসমেট এবং আপনার ইন্সট্রাকটর, শিক্ষক বা ফ্যাসিলিটেটর (এই লেখাতে এই তিনটি নাম বিভিন্ন সময়ে সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও এদের মধ্যে দায়িত্ব ও কাজের ধরনে পার্থক্য রয়েছে) একই সময়ে একটা নির্দিষ্ট ভার্চুয়াল স্পেসে উপস্থিত থেকে ক্লাস করেন।

সিনক্রোনাস লার্নিংয়ের সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে জুম বা গুগল মিটের মাধ্যমে ক্লাস – যেখানে বাস্তব ক্লাসরুমের মতই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে। অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে কনফারেন্সিং, টেলিকনফারেন্সিং, লাইভ চ্যাটিং, লাইভ-স্ট্রিমড লেকচার ইত্যাদি। 

পক্ষান্তরে, এসিনক্রোনাস লার্নিং এমন এক ধরনের পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীর নিজস্ব শিডিউলের উপর নির্ভর করে। এই পদ্ধতিতে আপনার ইন্সট্রাকটর আপনাকে শেখার জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতকৃত ভিডিও ও রিডিং ম্যাটেরিয়াল দিয়ে দিবেন এবং ইভালুয়েশনের জন্য এসাইনমেন্ট ও পরীক্ষা নিবেন।

এই পদ্ধতিতে একটি সুনির্দিষ্ট ডেডলাইনের মধ্যে আপনার সুবিধাজনক সময়ে আপনি আপনার মত করে ভিডিও দেখে, আর্টিকেল পড়ে, সমস্যার সমাধান করে কিংবা নানা ধরনের এসাইনমেন্ট ও প্রজেক্ট করার মাধ্যমে কোনো বিষয় শিখবেন।

অনলাইন লার্নিংয়ের মধ্যে ভিডিও, অডিও, রিডিং ম্যাটেরিয়াল, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সচরাচর ভিডিওর উপরেই বেশি জোর দএয়া হয়। কারণ অন্যান্য ফরম্যাটের তুলনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিডিও বেশি আকর্ষণীয়, সহজ ও কার্যকরী হয়।

সিনক্রোনাস ও এসিনক্রোনাস পদ্ধতির উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম বা ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে আমরা লাইভ ও প্রি-রেকর্ডেড – এই দুই ধরনের ক্লাস তথা কোর্স দেখা যায়। স্পষ্টতই, লাইভ ভিডিও সিনক্রোনাস লার্নিংয়ের অন্তর্ভুক্ত আর প্রি-রেকর্ডেড ভিডিও এসিনক্রোনাস লার্নিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।

আজকাল লাইভ ও প্রি-রেকর্ডেড এই দুই পদ্ধতিই বহুল ব্যবহৃত। আজ আমরা এই দুই পদ্ধতির মধ্যে একটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো এবং কার জন্য কোন পদ্ধতি বেশি সুবিধাজনক সেটি বুঝার চেষ্টা করবো।

লাইভ ক্লাস ও অনলাইন কোর্স

অনলাইনে সিনক্রোনাস লার্নিংয়ের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর একটি হচ্ছে লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে কোর্স করা। চলুন জেনে নেয়া যাক, এই লাইভ ক্লাসের শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলো নিয়ে –

লাইভ কোর্সের সুবিধা বা শক্তিশালী দিক

সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে শিক্ষকের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারা। শিখতে শিখতে কোনো প্রশ্ন মাথায় আসলে বা কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে তা আপনি সাথে সাথেই শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আবার অনেক সময়ে শিক্ষকের সাথে কথা না বলে ক্লাসের অন্যান্য বন্ধুদের সাহায্যে পিয়ার লার্নিং (peer learning) এর মাধ্যমেও শেখা সম্ভব।

অনলাইনে লাইভ ক্লাসে প্রায় একইরকম সুযোগ থাকে। একটি লাইভ ক্লাসে যেমন চাইলেই শিক্ষককে প্রশ্ন করা যায়, একইভাবে শিক্ষকও শিক্ষারথীদের প্রশ্ন করতে পারেন। আবার শিক্ষক প্রয়োজন বোধ করলে শিক্ষার্থী কতটুকু বুঝেছে তা যাচাই করতে পারেন – যেটাকে কাগুজে ভাষায় বলা হয় Check for Understanding (CFU).

এমনকি কোনো কোনো প্ল্যাটফর্ম, যেমন: জুম বা গুগল মিটের মাধ্যমে লাইভ ক্লাস পরিচালনা করলে ব্রেকআউট রুমের মাধ্যমে গ্রুপ ডিস্কাশন বা গ্রুপ প্রোজেক্টও করা সম্ভব। তাই লাইভ ক্লাসের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে ফিজিক্যাল ক্লাসরুমের অভিজ্ঞতাকে অনুকরণ করা যায়।

শিক্ষার্থীদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লেকচারের কাঠিন্য (Difficulty level) পরিবর্তনের সুযোগ

ধরুন ইন্সট্রাক্টর কোনো একটি লাইভ ক্লাস নিচ্ছেন এবং মিয়োসিস কোষ বিভাজন পড়াচ্ছেন। পড়াতে যেয়ে তিনি দেখলেন অনেক শিক্ষার্থীর মাইটোসিস কোষ বিভাজন সম্পর্কেই পরিষ্কার ধারণা নেই। যেহেতু এটা একটা লাইভ ক্লাস, তিনি কিন্ত চাইলেই ১৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় নিয়ে মাইটোসিস কোষ বিভাজনটা বুঝিয়ে দিতে পারবেন।

কিংবা হয়তো ইন্সট্রাক্টর এতো দ্রুত কথা বলছেন যে অনেক শিক্ষার্থী তার লেকচারের গতির সাথে তাল রাখতে পারছে না। এরকম কোনো ফিডব্যাক পাওয়ার সাথে সাথেই লাইভ ক্লাস চলাকালীন সময়েই ইন্সট্রাক্টর তার লেকচারের গতি কমিয়ে ফেলতে পারবেন বা পুনরায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারবেন। এই ফ্লেক্সিবিলিটি লাইভ ক্লাসে পাওয়া সম্ভব, যা শেখার প্রক্রিয়াকে আরো কার্যকরী করে তোলে।

আরও পড়ুনঃ কীভাবে যে কোনো কিছু শিখবেন?

প্রাসঙ্গিকতার বিচারে কনটেন্ট পরিবর্তনের সুযোগ

বর্তমান পৃথিবীতে গবেষণা ও যোগাযোগের প্রাচুর্যের কারণে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ধারণা আবিষ্কৃত ও চর্চিত হচ্ছে। যে কোনো বিষয়ে আজ আমরা যা পড়ছি, কয়েক বছর পরেই হয়তো সে বিষয়ে আমাদের ধারণা আমূল পাল্টে যাচ্ছে। লাইভ ক্লাসের ক্ষেত্রে খুব সহজেই যে কোনো টপিকের নতুন ধারণাগুলোকে যুক্ত করে নতুন একটি ক্লাস নিয়ে ফেলা সম্ভব।

লাইভ কোর্সের অসুবিধা বা দুর্বল দিক

কনটেন্টের গভীরতা কম

লাইভ ক্লাসে অডিয়েন্স রিটেনশনের (Audience retention) অর্থাৎ দর্শক ঝরে পড়ার বিষয়টি প্রতি ইন্সট্রাকটরকে খেয়াল রাখতে হয়। অডিয়েন্স যেন আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে সেজন্য ইন্সট্রাকটর অনেক সময় কোন বিষয়ের গভীরে না গিয়ে চটকদার বিষয়ের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দেন।

একইসাথে লাইভ ক্লাসে অডিয়েন্সের সাথে সবসময় কমিউনিকেট করতে যেয়ে সময়ের দিকে খেয়াল রেখে অনেকেই কনটেন্টের পরিমাণ কমিয়ে ফেলেন বা বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করেন না। ফলে মোটের উপরে কনটেন্টের গভীরতা কমে যায়।

ইন্টারনেটের অস্থিতিশীলতা

লাইভ ক্লাসের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে যথেষ্ট ভালো ইন্টারনেট সুবিধা থাকতে হয়। ইন্টারনেট কানেকশন স্থিতিশীল না থাকলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ক্লাস করা সম্ভব হয় না। ফলে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। তাই লেকচারের মান যতই ভালো হোক না কেন, যথাযথ ইন্টারনেট সুবিধা না থাকলে লাইভ ক্লাস করা খুব একটা উপভোগ্য হয় না।

ক্লাসের গতি সবার জন্য একরকম নয়

আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শিখি। একটি ক্লাসরুমের উদাহরণ দিয়ে এই ব্যাপারটা খুব সহজেই আমরা বুঝতে পারি। ক্লাসে কেউ হয়তো অংক খুব দ্রুত বুঝে ফেলে, আবার কারো কারো হয়তো সময় একটু বেশি লাগে। ব্যাপারটা মোটেই এমন নয় যে, যে দ্রুত শিখে সে বেশী ভালো শিক্ষার্থী, আর যার বুঝতে একটু সময় লাগে সে খারাপ শিক্ষার্থী। ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক যে একেক জন একেক গতিতে শিখবে।

তেমনিভাবে, একই লাইভ ক্লাসের গতি কারো কাছে বেশি মনে হতে পারে, আবার কারো কাছে মনে হতেই পারে যে ইন্সট্রাকটর খুবই ধীরে পড়াচ্ছেন। ফিজিকাল ক্লাসরুমে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা উতরে ফেলা যায়। কারণ যার সমস্যা হচ্ছে তিনি সহজেই তা শিক্ষককে জানাতে পারেন বা জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

কিন্তু লাইভ ক্লাসে একইসাথে অনেক অপরিচিত মানুষের সাথে ক্লাস করতে হয়। তখন অনেকেই এই বিষয়টি শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে সংকোচ বোধ করেন। এতে দুই ধরনের ক্ষতি হয় – প্রথমত ঐ শিক্ষার্থীর প্রশ্ন করার তথা ভালোভাবে বোঝার সুযোগ নষ্ট হয় ও দ্বিতীয়ত শিক্ষার্থীর মনযোগে ব্যঘাত ঘটে।

লাইভ ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা সময় বের করতে হয়

ফিজিকাল ক্লাসরুমের জন্য যেমন আলাদা সময় বের করতে হয়, লাইভ ক্লাসের জন্যও ঠিক একই কাজ করতে হয়। হয়তো অফিস থেকে ফেরার পথে আপনি জ্যামে আটকে আছেন, কিন্ত লাইভ ক্লাসটি তখনই শুরু হবে। হয় আপনি ক্লাসটি তখন করবেন না বা করলেও যথাযথভাবে করতে পারবেন না। আর কোনো কারণে একটি ক্লাস মিস হয়ে গেলে সেটি কভার করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এই আলাদা সময় বের করার জটিলতার কারণে অনেকেই লাইভ ক্লাস থেকে ভালোভাবে শিখতে পারেন না।

যদিও এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইন্সট্রাক্টররা ক্লাসগুলো রেকর্ড করে রাখেন, যাতে মিস হলে সেগুলো দেখে শিখে নেয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে লাইভ ক্লাস ঠিক যে কারণে আকর্ষণীয়, সেই আকর্ষণগুলোই মিস হয়ে যাচ্ছে! বহুব্রীহি-তে বিভিন্ন সময়ে আমরা সাপ্লিমেন্টারি লাইভ ক্লাস করাতে যেয়ে এই সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি দেখেছি।

প্রি-রেকর্ডেড ক্লাস ও অনলাইন কোর্স

প্রি-রেকর্ডেড অনলাইন কোর্সের সুবিধা বা শক্তিশালী দিক

লেকচার ও কনটেন্টের কোয়ালিটি অপটিমাইজেশন

প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিস্তর সময় পান। সাধারণত প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসের পূর্বে সিলেবাস নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ গবেষণা করা হয়। ক্লাস কী রকম হবে, কোন বিষয় নিয়ে কতটুকু আলোচনা হবে, কী ধরনের উদাহরণ দেয়া হবে, কোন টোনে কথা বলতে হবে, কোন প্রপস ব্যবহার করা হবে কিংবা গ্রাফিক্স ও এনিমেশন থাকবে কী থাকবে না – এসব কিছু নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চিন্তাভাবনা করে ও প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাস রেকর্ড করা হয়।

লাইভ সেশনে যেমন অনেকটা Freestyle মেথডে ন্যাচারালি একজন শিক্ষক লেকচার দিয়ে যান, রেকর্ডেড কনটেন্টের বেলায় সেই লেকচার আরও অনেক বেশি ক্যালকুলেটিভ থাকে। এজন্য একই টপিক বুঝানোর ক্ষেত্রে লাইভ ক্লাসের চেয়ে রেকর্ডেড ক্লাসে সময় কম লাগে এবং কোয়ালিটি ভাল রাখার সুযোগ বেশি থাকে।

আপনি হয়ত খেয়াল করে দেখবেন, ক্লাসরুম বা জুম সেশনে শিক্ষক ১ ঘণ্টায় যা পড়ান, সেগুলো ১০-১৫ মিনিটের রেকর্ডেড ভিডিও থেকে আপনি সুন্দরভাবে বুঝে ফেলতে পারছেন (যদি সেই রেকর্ডেড ভিডিওর মান ভাল হয় আরকি!) একইসাথে কনটেন্টকে আকর্ষণীয় ও Engaging করে তোলার সুযোগও প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসে বেশি থাকে।

তাছাড়া দিন/ঘণ্টা বা ক্লাসের সংখ্যার লিমিটেশন না থাকায় প্রি-রেকর্ডেড কোর্সে যেকোনো টপিকের অনেক গভীর পর্যন্ত আলোচনা করার সুযোগ তুলনামূলক বেশি থাকে। অবশ্য গভীরে যাওয়ার সেই সুযোগ কতটুকু কাজে লাগানো হচ্ছে তা কোর্স এবং শিক্ষকের উপর নির্ভর করে!

নিজের মত করে পড়ার সুযোগ

একজন শিক্ষার্থীকে দৈনন্দিন নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, টিউশন, নিজের পড়াশোনা – এসব কিছুর মাঝেই তাকে অনলাইন কোর্স করতে হয়। প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসের ক্ষেত্রে এসব কাজ শেষে নিজের সুবিধাজনক সময়ে ক্লাস করার সুযোগ থাকে।

বিশেষ করে চাকরিজীবীদের জন্য এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহায়ক কারণ নানা ব্যস্ততার মাঝে অনলাইন ক্লাসের জন্য আলাদা নির্দিষ্ট কিছু সময় বের করা তার জন্য কষ্টসাধ্য। তবে প্রি-রেকর্ডেড ক্লাস হলে সে সহজেই তার সুবিধাজনক সময়ে ক্লাস করতে পারবে।

কম প্রাসঙ্গিক বা কম প্রয়োজনীয় কনটেন্ট বাদ দেওয়ার সুযোগ

প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসে পূর্ব থেকেই অনেক চিন্তাভাবনা করে শিক্ষক ক্লাস পরিকল্পনা (Lesson plan)  করেন। তাই অপ্রাসঙ্গিক বা অপ্রয়োজনীয় কনটেন্ট শুরুতেই বাদ দেয়ার সুযোগ থাকে। আবার লাইভ ক্লাসে কথাপ্রসঙ্গে অনেক অপ্রয়োজনীয় তথ্য চলে আসে বা অনেক সময় শিক্ষক ডিস্ট্র‍্যাকটেড হয়ে যেতে পারেন। প্রি-রেকর্ডেড ক্লসে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়ার সুযোগ খুব কম।

টেকনিক্যাল সমস্যা নিয়ে কম চিন্তা করতে হয়

প্রি-রেকর্ডেড অনলাইন কোর্স-এ আপনি সুবিধামত সময়ে যখন ইচ্ছা তখন ভিডিও দেখতে পারেন। তাই পড়তে বসার পর ইন্টারনেটে যথেষ্ট গতি না থাকলেও পরে আবার তা দেখে নিতে পারেন। তাই প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসে টেকনিক্যাল বাধার সুযোগ কম।

রেকর্ডেড কোর্সের অসুবিধা দুর্বল দিক

মোটাদাগে প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসের দুর্বল দিক বলতে গেলে মূলত সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ না থাকাকে উল্লেখ করতে হয়। অর্থাৎ ক্লাসটি দেখতে দেখতে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে বা বুঝতে সমস্যা হলে আপনি শিক্ষককে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন না। এবং ক্লাসে বসে ‘একসাথে শেখা’র ব্যাপারটি না থাকায় নিজ উদ্যোগে একটি প্রি-রেকর্ডেড কোর্স করতে গিয়ে শেখার আনন্দ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।

একটি ভাল প্রি-রেকর্ডেড কোর্স যথেষ্ট এংগেজিং ও আনন্দদায়ক হলেও মোটামুটি মানের কোর্সগুলোতে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। এসব কারণে যারা Direct Real-time Engagement পছন্দ করেন তারা অনেকে লাইভ ক্লাসে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না।

বহুব্রীহি-র অনলাইন কোর্স ও চিন্তাভাবনা

বহুব্রীহির সবগুলো অনলাইন কোর্সক্যারিয়ার ট্র্যাকে আমরা লাইভ ক্লাসের চেয়ে প্রি-রেকর্ডেড কনটেন্টের উপর বেশি আস্থা রেখেছি। কাজেই ‘লাইভ বনাম রেকর্ডেড কোর্স’ এর বিতর্কে আমরা স্বভাবতই কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট! প্রি-রেকর্ডেড কোর্সকে পছন্দ করার কারণগুলোও এই আলোচনায় উঠে এসেছে।

আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শিখন পদ্ধতি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছি, লাইভ ক্লাসের শক্তিশালী দিকগুলো কিভাবে প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসে নিয়ে আসা যায়, বা প্রি-রেকর্ডেড ক্লাসের দুর্বল দিকগুলো কিভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি!

যেমন বহুব্রীহি-র ক্যারিয়ার ট্র্যাকের প্রোগ্রামগুলোতে প্রচুর হাই কোয়ালিটি প্রি-রেকর্ডেড টিউটোরিয়ালের পাশাপাশি আমরা লাইভ সেশনও আয়োজন করি। ২/৩ সপ্তাহ পর পর আয়োজিত এসব লাইভ ক্লাসে গত কয়েক সপ্তাহের শিক্ষার্থীদের প্রগ্রেস, বিভিন্ন সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সরাসরি আলোচনার সুযোগ থাকে।

কিছুটা ইনফরমাল স্টাইলেই শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের ইন্সট্রাক্টর ও মেন্টরের আড্ডা হয়ে যায় এতে। এসব আড্ডায় মন খুলে যেকোনো কিছু আলোচনা করে নেয়ার পাশাপাশি  আমাদের সবার মধ্যে দারুণ একটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্কও তৈরি হয়ে যায়!

অনলাইন লার্নিংয়ের টিচিং-লার্নিং প্রসেস (Teaching learning process) নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। প্রযুক্তি, মানুষের লাইফস্টাইল ও আচরণগত পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের শেখার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসছে। সেই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে ও শিক্ষার্থীদের ফীডব্যাক অনুযায়ী বহুব্রীহির কোর্স ও ক্যারিয়ার ট্র্যাক প্রোগ্রামগুলো আমরা প্রতিনিয়ত আরও আপডেট করছি। সিনক্রোনাস ও এসিনক্রোনাস – উভয় ধরনের পদ্ধতির সমন্বয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি গ্রহণ করার চেষ্টা করছি।

লাইভ বনাম রেকর্ডেড কোর্স – কোনটি ভালো?

আমরা মনে করি এই প্রশ্ন বা বিতর্কের কোনো “সঠিক” উত্তর নেই! দিন শেষে আপনার পছন্দ, অভ্যাস ও প্রয়োজনের উপর নির্ভর করবে কোন ধরনের কোর্স আপনার জন্য বেশি উপযুক্ত। আর আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেটি বেশি উপযুক্ত, সেটিই আপনার জন্য ‘ভালো’! 

আপনি কোন ধরনের পদ্ধতির সাথে অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? কেনো? সেই পদ্ধতির কোন কোন বিষয় আপনার কাছে কার্যকর মনে হচ্ছে না? আর কী কী করা যেতে পারে? আসুন এই বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করা যাক!

হ্যাপি লার্নিং!

শেয়ার করুন

1 thought on “লাইভ বনাম প্রি-রেকর্ডেড অনলাইন কোর্স”

Leave a Comment