ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে মানসিক প্রস্তুতি

বছর ঘুরে আবারো ফিরে এলো ভর্তি কোচিং এর মৌসুম, ভীতিকর চারটি মাসের শুরু। আজ থেকে দুই বছর আগে এই সময়টায় নিজের কোচিং শুরু করার সময় আমিও বেশ দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থাতেই ছিলাম। কি না কি পড়াবে, হয়তো অনেক কঠিন, কিংবা সারা দেশের এত এত ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে আমি কি আদৌ টিকে থাকতে পারবো – এইরকম হাজারো দুশ্চিন্তাই এই মুহূর্তটাতে সবচেয়ে বেশি কাজ করে।

ভর্তি কোচিং এর শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা হয়, সেটা হচ্ছে – কতটুকু পড়বো আর কোনটা কোনটা পড়বো না, সেটা বুঝতে না পারা। কোচিংগুলো থেকে ইয়া মোটা মোটা গাইড বই আর লেকচার শীট দেয় , কিন্তু মাত্র তিনঘণ্টার ক্লাসে আসলে তার খুব সামান্য অংশই কভার করা সম্ভব হয়। আজকে ফিজিক্স পড়ালো, তো কালকে বাদ দিয়ে পরশুই আবার ম্যাথ ক্লাস, তারপর একদিন বাদেই আবার কেমিস্ট্রি। এই স্বল্প সময়ে সিলেবাস কভার করতে পারাটাই আসলে কোন একজন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

আরেকটা বড় সমস্যা হয় – মডেল টেস্টগুলোর নাম্বার নিয়ে। সারাবছর স্কুল-কলেজে ফার্স্ট হয়ে আসা অনেকেই প্রথম প্রথম কোচিংয়ে এসে এই মডেল টেস্টগুলোতে ১০০ তে ৩০-৪০ বা আরো কম মার্ক্সও পায়। তীব্র হতাশা তখন তাদেরকে জেঁকে ধরে। আত্মবিশ্বাসের পারদ নেমে যায় একেবার নিচে।

সত্যি বলতে, ভর্তি যুদ্ধের এই চার মাস শেষে কে সফল আর কে ব্যর্থ হয়ে বেরিয়ে আসবে – তা কারো মেধার উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে এই হতাশা আর আত্মবিশ্বাসের খরা কাটিয়ে কে কত বেশি পরিশ্রম করতে পারে – তার উপর। ভর্তি কোচিংগুলোর লেকচার শীট বা গাইডগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি তথ্য দেওয়া থাকবে , যার অনেক কিছুই ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে হলে লাগে না বললেই চলে, ওগুলো লাগে ভালো পজিশনের জন্য। তুমি কতটুকু পড়বে – সেটা তোমাকেই ঠিক করে নিতে হবে তোমার সামর্থ্য বুঝে। সবচেয়ে ভালো হয় – ক্লাস চলাকালে যদি অন্ততঃ basic conceptগুলো ভালোভাবে বুঝে নেওয়া যায়।

আর মডেল টেস্টে নাম্বার কম পাওয়াটা আসলে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আরে, তুমি যদি কোচিং করতে এসে প্রথম থেকেই মডেল টেস্টে ১০০তে ৭০-৮০ করে পাও, তাহলে তোমার তো আর কোচিং করারই দরকার নাই, তুমি তো এমনিতেই সব পারো।

একটা ভিন্ন প্রশ্নপদ্ধতিতে এসে শুরুর দিকে খারাপ তুমি করতেই পারো – লজ্জার কিছু নাই

কিন্তু আজকে যে অঙ্ক পার নাই, সেই অঙ্ক যদি দুই মাস পরেও তুমি না পারো – তখন অবশ্যই লজ্জার কারণ আছে। তাই যখনই পরীক্ষা খারাপ হবে, পরীক্ষা শেষে সাথে সাথে সল্ভ শীট দেখে সেখান থেকে তোমার না পারা অঙ্কগুলো শিখে নিবে, যেন পরেরবার আর ভুল না হয়। হতাশ হয়ে হাল ছেঁড়ে দিয়ে যদি কান্নাকাটি শুরু কর, তাহলে তো কোন লাভ হবে না।
মনে রাখবে, মেধা তোমাদের সবারই আছে, আগামী চার মাসে সেই অনুযায়ী পরিশ্রম করে তা কাজে লাগাচ্ছো কিনা – আসল পার্থক্যটা সেটাই গড়ে দিবে। চার মাস প্রচুর সময়, প্রায় ৩০০০ ঘন্টা। Make each of them count.

শেয়ার করুন

Leave a Comment