ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট ব্যক্তি চেনার ১০ টি উপায়

https://youtu.be/EgyL5mj1vmo

ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট বা উচ্চ আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে জানবার আগে আমাদের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা EQ সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। EQ হচ্ছে সেই সক্ষমতা এবং ইন্টেলিজেন্স যার মাধ্যমে আপনি আপনার এবং অন্যের ইমোশন বুঝতে, পড়তে এবং ম্যানেজ করতে পারবেন। সেই সাথে অন্যদের ইমোশনকে প্রভাবিতও করতে পারবেন।      

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আপনার কাজকর্মগুলোর রেসপন্স এবং রিয়েকশনগুলো বেশিরভাগই আপনার ইমোশন বা আবেগের উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। আর এই ইমোশন এমন একটি জিনিস যা আমাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর যেমন, ডিসিশন মেকিং, সম্পর্ক উন্নয়ন, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, সুযোগ-সম্ভাবনা লুফে নেওয়া ইত্যাদিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের জীবনের ৮০ শতাংশ সফলতা নির্ভর করে আমরা কতোটা ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট তার উপর।  

EQ এর তাৎপর্য অনস্বীকার্য। কিন্তু এটি গণনা করার পন্থা এবং আমাদের মাঝে কি মাত্রায় এর অভাব বা  উপস্থিতি রয়েছে তা জানা খুব কঠিন। আবার EQ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের কী কী করা উচিত তা জানাও সহজ নয়। কেননা ব্যক্তিভেদে এর দাওয়াই আলাদা! অবশ্য বৈজ্ঞানিকভাবে অনুমোদিত একটি পরীক্ষা আপনি চালাতে পারেন ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ২.০’ বইটির সাহায্য নিয়ে।   

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত EQ টেস্ট আপনি ফ্রি’তে করতে পারবেন না। তবে প্রায় ১০ লক্ষাধিক ডাটা ঘেঁটে গবেষকরা কিছু আচরণ ও বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন যেগুলো উচ্চতর EQ প্রকাশ করে। আর সে বৈশিষ্ট্যগুলো থেকেই আমরা উচ্চতর EQ এর কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

একজন ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট এর লক্ষণ সমূহ
একজন ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট ব্যক্তির লক্ষণ সমূহ

১। আপনি সমালোচনা, উদ্বেগ, অজুহাত সামলাতে পারদর্শী হবেন

ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট ব্যক্তির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আত্ম-সচেতনতা। আত্ম-সচেতনতা এমন এক বৈশিষ্ট্য যা আপনার মাঝে সঞ্চার করে গভীর উপলব্ধি। এই উপলব্ধি আপনাকে কোন বিষয়ে আগ্রহী করে, রুদ্ধ করে, বিরক্ত করে কিংবা আনন্দিত করে তোলে। এর সাহায্যে আমরা সততা ও স্পষ্টতার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভুলত্রুটি এবং সমস্ত বিষয়াদি মূল্যায়ন করতে পারি।

High EQ সম্পন্ন ব্যক্তিরা যখন কোন ভুল করেন কিংবা সমালোচিত হন, তখন এটি তাদেরকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। আত্ম-সচেতনতার গুণে তারা সহজেই সমালোচনা, উদ্বেগ, অজুহাত সামলাতে পারেন। 

২। আপনি হবেন খোলা মনের মানুষ

ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট ও আত্ম সচেতন হলে আপনি খোলা মনের মানুষও হবেন। প্রথমেই কাউকে কোন বিষয়ে সমালোচনা করা বা মন্তব্য করা ইত্যাদি না করে বরং আপনি মানুষটির কথা শুনতে চাইবেন। নিজের মতের বিরোধী হলেই যে তা মানা যাবে না তা নয়! আপনি বরং বিরোধী চিন্তাভাবনার কথাগুলো শুনবেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন।

এই মানুষগুলো কিন্তু খুব জনপ্রিয় হয়ে থাকে। তারা যেকোনো বিপদ-আপদ ও চ্যালেঞ্জের মুখে সহনশীলতার পরিচয় দেয়। তাদেরকে সাধারণত নেতিবাচক কোনো কথা বলতে বা কাজ করতে দেখা যায় না। উল্টো এই মানুষগুলো অন্যের সাহায্যে প্রথমেই এগিয়ে আসেন এবং কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কাজে লেগে পড়েন।

৩। ভালো শ্রোতার সব গুণাবলীই থাকবে আপনার মাঝে

একজন ভালো শ্রোতা নিজের মাঝে একটি ইউনিক শ্রবণ কাঠামো তৈরি করে। এই কাঠামোর গুণে সে কোনো বক্তব্যের শুনে তার অর্থ, প্রতিক্রিয়া এবং পরিণাম ইত্যাদি আলাদা করতে পারে। আপনি যদি উচ্চ EQ সম্পন্ন কেউ হোন, তাহলে আপনার মাঝেও এই গুণ থাকতে পারে। আপনি কোন বক্তব্য, বিষয় শুনবার সময় অপ্রয়োজনীয় আবেগকে বাদ দিয়ে বক্তব্যের মূল বিষয়ে ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারবেন।

৪। ক্ষমা চাওয়ার মন মানসিকতা সম্পন্ন হবেন আপনি

আপনি যদি High EQ সম্পন্ন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার মাঝে ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা থাকবে। অজুহাত খুঁজে কিংবা নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে সময় ব্যয় না করে আপনি বরং সমাধানের খোঁজ করবেন। আর সমাধান পেতে যদি ক্ষমা চাওয়া লাগে, তবে আপনি তাই করবেন।

৫। চারপাশের মানুষ সম্পর্কে সবসময়ই কৌতূহলী থাকবেন

আপনি যদি উচ্চ EQ সম্পন্ন হয়ে থাকেন তাহলে চারপাশের মানুষ সম্পর্কে আপনার মাঝে সবসময়ই কৌতূহল থাকবে। আপনি জানতে চাইবেন, বুঝতে চাইবেন চারপাশের মানুষ সম্পর্কে। অন্তর্মুখী বহির্মুখী যে স্বভাবেরই মানুষ আপনি হয়ে থাকেন আপনার এই কৌতূহলী বৈশিষ্ট্যটা থাকবে। এই স্বভাবটা আপনার সহানুভূতিশীল মনকে প্রকাশ করে, যা উচ্চ সংবেদনশীল মানুষদের অন্যতম পরিচায়ক। এই চর্চার ফলে আপনি অন্য মানুষদের ব্যাপারে যত্নশীল হয়ে উঠবেন, তাদের চাওয়া পাওয়া ইত্যাদির প্রতি সম্মান জানাতে শিখবেন। 

আরও পড়ুনঃ গ্রোথ মাইন্ডসেটঃ আপনার ব্রেইনকে কীভাবে পরিবর্তন করবেন?

একজন ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট এর লক্ষণ সমূহ
একজন ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট এর লক্ষণ সমূহ

৬। বিস্তৃত শব্দভাণ্ডারের অধিকারী হবেন

আমরা সবাই আবেগ অনুভূতি সম্পন্ন, কিন্তু তার মাঝে কিছু মানুষ থাকে যারা আবেগের মর্মার্থ বুঝে আবেগটিকে বিচার করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৬ শতাংশ মানুষ আছে যারা এই বিচারটা করতে পারে না, ফলে নানা ধরণের সমস্যায় পড়ে। অন্যদিকে আপনি যদি High EQ সম্পন্ন হয়ে থাকেন তবে এই আবেগগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে আপনার কাছে। এই আবেগ অনুভূতিগুলোর এক বিস্তৃত শব্দভাণ্ডার থাকবে আপনার কাছে। একটি ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্ট ব্যক্তি সঠিক শব্দচয়নের  মাধ্যমে সহজেই পিনপয়েন্ট করতে পারে তার আবেগ ও অনুভূতিজাত বিষয়গুলো। 

৭। নিজের শক্তি ও দুর্বল জায়গাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন

আপনি High EQ সম্পন্ন হলে নিজের শক্তি ও দুর্বল জায়গাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। মানে আপনি শুধু ইমোশন বুঝেন তা না, সাথে সাথে আপনি আপনার ভালো দিক ও দুর্বলতা নিয়ে ধারণা রাখবেন। ফলে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার উপায়ও বের করতে পারবেন।

৮। ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র যাচাইয়ে পাকা হবেন

আপনি High EQ সম্পন্ন ব্যক্তি হলে যেকোনো মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র যাচাইয়ে পাকা হবেন। মানুষের স্বভাব ও চরিত্র বুঝতে পারার এই ক্ষমতা থাকায় আপনি সহজেই মানুষগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। নেতৃত্বমূলক অবস্থানে  থাকলে এই গুণটি বেশ কাজে দেয়। গবেষণায়ও দেখা গেছে High EQ সম্পন্ন ব্যক্তিরা বেশিরভাগই নেতৃত্বদানে পারদর্শী হয়।   

৯। খারাপ মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হবেন না

খারাপ বা নেগেটিভ মানুষদের সাথে ডিল করা বেশিভাগের কাছে খুবই ক্লান্তিকর ও হতাশাজনক এক ব্যাপার। কিন্তু আপনি যদি  High EQ সম্পন্ন হয়ে থাকেন তাহলে নেগেটিভ মানুষদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তাদের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আপনার মানুষ ও চরিত্র চিনবার গুণ আপনাকে এই মানুষগুলোর ইনসাইট পড়তে সাহায্য করবে। ফলে আপনি সহজেই তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবার উপায় খুঁজে বের করতে পারবেন।  

আরও পড়ুনঃ IQ নাকি EQ? কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

১০। নেতিবাচক চিন্তা, বিরক্তি সহজেই এড়িয়ে যেতে পারবেন আপনি

মনের মাঝে নেতিবাচক চিন্তা বা বিরক্তির কোন বিষয় নিয়ে বসবাস করা খুব কঠিন এক কাজ। কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্তি বা নেতিবাচক চিন্তা থাকলে তা আপনার সহজাত কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। High EQ সম্পন্ন মানুষরা এই বিরক্তি ও নেতিবাচক চিন্তাপ্রসূত বিষয়গুলো সহজেই এড়িয়ে যেতে পারে। এতে মানসিক চিন্তা যেমন দূর হয় তেমনি শারীরিকভাবেও আপনি সুস্থ থাকতে পারেন।       

সর্বোপরি, মানুষের EQ কিন্তু অপরিবর্তনীয় না। এটি বাড়ানো কমানোটা অনেকটা অভ্যাস ও চর্চার উপর নির্ভর করে। উপরের আচরণগুলোর মতো আপনি যখন প্রতিনিয়ত আপনার মস্তিস্ককে নতুন নতুন আচরণ অনুশীলনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেন, তখন তা এগুলো অভ্যাসে পরিণত করার পথ তৈরি করে ফেলে। আপনার মস্তিষ্কে নতুন এই আচরণগুলো যেমন স্থান করে নেয়, তেমনি পুরনো খারাপ অভ্যাসগুলোকে ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে আপনি উচ্চ সংবেদনশীল বুদ্ধিমত্তার (High EQ)  অধিকারী হয়ে উঠেন।  

ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স অনলাইন কোর্স!

বর্তমান দশকের কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দশটি দক্ষতার একটি হলো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। বহুব্রীহির সংক্ষিপ্ত এই অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে একজন ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট হয়ে উঠুন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাগুলো সম্পর্কে জানুন, ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সেগুলো প্রয়োগ করতে চেষ্টা করুন এবং নিজের ও আশেপাশের মানুষের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করুন!


এখানে ক্লিক করুন

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স

শেয়ার করুন

2 thoughts on “ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট ব্যক্তি চেনার ১০ টি উপায়”

  1. বহুব্রীহি অনেকদিন থেকেই ভাল কাজ করে আসছে। আমি নিজেও আপনাদের কোর্স করেছি এবং উপকৃত হয়েছি। এই লিখাটা প্রশংসার দাবি রাখে। আরও এমন উদ্দীপনামূলক লিখা পাব আশা করি। শুভ কামনা বহুব্রীহি টিমের জন্য।

    শান ইস্ফার
    অ্যাপ ডেভলপার লীড
    অ্যাপলাভিয়া

    Reply
  2. বহুব্রীহি সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি অনেক আগে থেকে জানি। এই লিখাটা খুবই গোছানো এবং সুন্দর। ধন্যবাদ লেখক কে।

    নিয়ন
    ফাউন্ডার
    সেরিব্রাল ইকুএশন
    Cerebral Equation

    Reply

Leave a Comment