শর্টকাট আর কনসেপ্ট বুকঃ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি প্রস্তুতি

ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ভর্তি কোচিং ক্লাস, আশা করি সবাই ঠিকভাবে ক্লাসগুলো করছো। আজকে দুটি Common ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবো- Concept book এবং Shortcut। সম্প্রতি একটি ছবি দেখলাম যেখানে কোন একটি কোচিং কিভাবে পড়তে হবে তার একটি list দিয়ে দিয়েছে। সেই list এ প্রায় শেষের দিকে ছিলো পাঠ্যবই আর প্রশ্নব্যাংক। অনেকেই বলবে “ভাইয়া আমাদের বইতে তো কিছুই নেই, এই বই পড়ে কি হবে?” অনেক অভিভাবককে আমি দেখেছি বলতে “Concept book এর ম্যাথ কেন করবে না? বই করে কি হবে!”

তো এই নিয়ে কিছু কথা বলার আছে। প্রথমতই বুঝতে হবে Concept book ব্যাপারটা আসলে কী এবং সেটা আমাদের কেন দেওয়া হয়? Concept book খুললে তোমরা দেখতে পাবে,কয়েকটি অধ্যায় একসাথে কতকগুলো পেইজের মাঝে দিয়ে দেওয়া আছে। সেখানে অধ্যায়গুলোর প্রয়োজনীয় সূত্র, কিছু উদাহরণ, কিছু Excercise দেওয়া আছে। সূত্র গুলোর কোন বর্ণনা নেই। সৃজনশীল পদ্ধতিতে এখন আর সূত্রের প্রমাণ আসে না বলে আমরাও এখন এগুলো আর পড়ি না। কিন্তু এগুলো খুবই দরকার।

আমার মতে, একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র/ছাত্রীর যেভাবে প্রতিদিনের পড়া প্রস্তুত করা উচিত:
১. প্রথমেই পাঠ্যবই। যে অধ্যায়গুলোর উপর আজকে ক্লাস হয়েছে সেগুলো পাঠ্যবই থেকে Reading পড়া। Reading পড়া মানে line to line না। প্রতিটা সূত্র দেখা এবং সূত্রের কিছু বর্ণনা থাকলে তা পড়া। এরপর বই এর সমস্ত Example ও Excercise করা। তোমার কাছে যতগুলো বই আছে সবগুলো। এর মাঝে Physics এর জন্য তপন স্যার ও ইসহাক স্যার এর বই খুবই দরকারী। Math আর Chemistry তে বোর্ড এক্সামের জন্য যে বই পড়েছ সেটা আবশ্যক।
২. এরপর প্রশ্নব্যাংক। প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশ্নব্যাংক শেষ করো অধ্যায় ভিত্তিকভাবে। তারপর ভার্সিটি প্রশ্নব্যাংক। তারপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সবশেষে কৃষি। প্রশ্ন করতে পারো,”ভাইয়া ভার্সিটি বা বাকিগুলো কেন করবো?” অনেকসময় দু একটি করে Conceptual বা একেবারেই Theory ভিত্তিক প্রশ্ন আসে ভর্তি পরীক্ষায়। সেগুলোর জন্য তুমি পুরো বই পড়তে পারলে খুব ভালো কিন্তু অধিকাংশ সময় তা করা যায় না। তাছাড়া এগুলো করলে তোমার বিভিন্ন ভার্সিটি পরীক্ষায় সুবিধা পাবে।
৩. এখন তোমার class lecture দেখ। ক্লাসে অবশ্যই কিছু না কিছু ম্যাথ করে দেওয়া হয়। সেগুলা আবার নিজে কর।
৪. Concept book এখন করার সময় হয়েছে, প্রথমে তুমি উদাহরণ গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিও। দেখে নিও কোন কোন অংকটা একটু ভিন্ন লাগছে। সেটি করে ফেলার চেষ্টা করবে। এরপর Practice math গুলো দেখ। এখন প্রশ্ন হলো Concept book কেন সবার শেষে করবো? ধরে নাও তুমি ১,২ এগুলো চিনো না তাহলে তুমি কিভাবে ১+২ বের করবে? Concept book করার আগে তোমার নিজের বইগুলো সম্পর্কে আর অধ্যায় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা দরকার। তোমার যদি অধ্যায় সম্পর্কে ভালো ধারণা নাই থাকে সেক্ষেত্রে Concept book এর ম্যাথ করলে তুমি সর্বোচ্চ ৩-৪ দিন ঐটা মনে রাখতে পারবে। তারপর পুরোপুরি ভুলে যাবে। Concept book এর ম্যাথগুলো খুব ইন্টারেস্টিং আমিও মানি, কিন্তু সবার আগে এটা পড়ার দরকার দেখি না।

Related: তোমরা যারা ইঞ্জিনিয়ারিং এডমিশন টেস্ট দিবে

আরেকটা common সমস্যা Shortcut । বিশেষ করে যারা ভার্সিটি ভর্তি কোচিং এ তাদের জন্য এটি। Shortcut অবশ্যই তোমাকে এগিয়ে দিবে পরীক্ষার হলে,তোমার সময় কমিয়ে দিবে। কিন্তু এটির বেশ কতকগুলো সমস্যা আছে:
১. প্রতি অধ্যায়ের জন্য অনেকগুলো করে Shortcut। তুমি কালকে Daily exam এ খুব ভালো করে পেরে গেলে কিন্তু ৩ মাস পর ৬টি বই এর সবগুলো শর্টকাট মিলে কতগুলো হয় তা খেয়াল করেছ? সেগুলো কি সব তোমার মনে থাকবে?
২. অধিকাংশ Shortcut এ বেশ কতগুলো করে শর্ত থাকে। যেমন ধরো, ফিজিক্সে নদীর অংকে নৌকার বেগ স্রোতের বেগের দ্বিগুণ হলে এবং নৌকাটি সরাসরি অপর পাড়ে যেতে চাইলে নৌকাকে স্রোতের সাথে ১২০ ডিগ্রী কোণ করে আগাতে হবে। সবচেয়ে সোজা Shortcut গুলোর মাঝে সম্ভবত এটা আছে। কিন্তু শুধু একবার চিন্তা করে দেখ এখানে কতগুলো শর্ত আছে? – ১.নৌকার বেগ দ্বিগুণ হতে হবে। ২.নদীর ঠিক অপর পাড়ে যেতে হবে। খুব সাধারণ একটি Shortcut এ এই দুইটি শর্ত। তাহলে পুরো বইয়ের সবগুলো শর্টকাটে কতগুলো করে শর্ত থাকবে এবং সেগুলো সব মনে রাখা লাগবে।এই ব্যাপারটি একটু হলেও বেশী কষ্টদায়ক না!

তাহলে কি করতে হবে? প্রতি অধ্যায়ে খুব বেশী হলে ৩টি শর্টকাট থাকবে। এবং সেগুলো কোন একটি আলাদা খাতায় (আমি Notebook কে প্রাধান্য দেই) লিখে রাখবে। লেখার নিয়ম হলো এরকম, ” কোন প্রাসের পাল্লা এবং তার সর্বোচ্চ উচ্চতা সমান হতে হলে ভূমি হতে নিক্ষেপের সময় কোণ ৭৬ ডিগ্রী হতে হবে। কিংবা “d” পুরুত্বের কোন একটি দেয়ালে একটি বুলেট প্রবেশ করার সাথে সাথে তার বেগ অর্ধেক হয়ে গেলে বুলেটটি আর d/3 দুরুত্ব অতিক্রম করতে পারবে। ” এবং পারলে শর্টকাটটি কিভাবে এসেছে তা দেখিয়ে দিতে পারো। আবার অনেক সময় তুমি চাইলে নিজের জন্য শর্টকাট বানিয়ে নিতে পারো (এটা আমি করতাম)। যেমন উপরে উল্লিখিত বুলেটের বেগ যদি আদিবেগের n% হয়ে যায় তাহলে কতটুকু যাবে? (n = 1-99) এটির জন্য আমি n ধরে নিয়ে অংকটি সমাধান করে তারপর নিচে Shortcut টি লিখে রেখেছিলাম। বা তুমি যে ম্যাথটি করার সময় Shorctut টি প্রয়োগ করেছ তার নাম্বার লিখে রাখতে পারো। যেমন ” r ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট শুধুমাত্র একটি বৃত্ত পাওয়া যাবে যা দুটি নির্দিষ্ট বিন্দুগামী”। এই Shortcut এর পাশে আমি এভাবে লিখে রেখেছিলাম EQB.516P.05N. মানে হলো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশ্ন ব্যাংক, ৫১৬ নাম্বার পেইজের ৫ নাম্বার ম্যাথ। এটা লিখে রাখার কারণে যতবার আমি এই শর্টকাট পড়েছি আমি সাথে সাথে ম্যাথটি দেখে নিতাম।

এই তো এভাবে নিজেকে ভর্তি যুদ্ধের জন্য তৈরি করতে থাকো এবং চেষ্টা করতে থাকো।নিজে নিজে পদ্ধতি আবিষ্কার করো পড়াশুনাকে কেমনে আত্মস্থ করা যায় সহজে।তোমাদের সবার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।

শেয়ার করুন

Leave a Comment