You are currently viewing সাবজেক্ট রিভিউঃ  বস্তু ও ধাতব কৌশল (MME)

সাবজেক্ট রিভিউঃ বস্তু ও ধাতব কৌশল (MME)

Materials & Metallurgical Engineering (MME)

(বস্তু ও ধাতব কৌশল)

কয়েক বছর আগেও এই ডিপার্টমেন্টের নাম ছিলো প্রায় অজানা। ২০১১ সালে আমি যখন ভর্তি হই, তখনও প্রায় সবার মত আমারও এই ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো শুন্যের কোঠায়। অথচ এই ডিপার্টমেন্ট অন্য বাকী ডিপার্টমেন্ট যেমন ইলেক্ট্রিকাল, কম্পিউটার, মেকানিক্যাল কিংবা সিভিলের মতই শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত। অটোচয়েজ হিসেবে চলে আসায় ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম, তবে খারাপ লাগাটা ছিলো শুরুর দিকে। কিন্তু এখন যখন পাশ করে বের হচ্ছি, তখন সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যায়। এই রিভিউটি তাদের জন্যে যারা আমার মতই পরিস্থিতির শিকার। আশা করছি, ইনফরমেশনগুলো পরবর্তীতে ভর্তিচ্ছু এবং কারেন্ট স্টুডেন্টদের কাজে লাগবে।

১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গবেষণামূখী এই ডিপার্টমেন্টের মূল উদ্দেশ্যই দেশের শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। একটি দেশের শিল্প মূলত ধাতু, সিরামিক, পলিমার, সেমিকন্ডাক্টার, কম্পোজিট এই পাঁচ ধরনের পদার্থের উন্নয়নের উপর নির্ভর করে। আর এসব পদার্থের ম্যাক্রো, মাইক্রো, এমনকি ন্যানো লেভেলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উন্নতি সাধনেই এই ডিপার্টমেন্ট প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

#Admission

পূর্বে এই সাবজেক্টটি সবার অগোচরে ছিলো বলে তেমন সাড়া ছিলো না ভর্তির ব্যাপারে; কিন্তু বর্তমানে সচেতন সমাজ গুরুত্ব ও কার্যকারিতা বুঝতে পেরে সাবজেক্ট চয়েস লিস্টে এই ডিপার্টমেন্টকেও রাখছে উপরের দিকে। গত ছয় বছরের পরিসংখ্যান তা ই বলেঃ

সাবজেক্ট রিভিউঃ  বস্তু ও ধাতব কৌশল (MME)
বিগত ছয় বছরে বুয়েটে MME ডিপার্টমেন্ট নেয়া প্রথম এবং শেষ শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন

Materials & Metallurgical Engineering (MME) নামে ডিপার্টমেন্টটি আছে শুধু বুয়েটই। তবে কুয়েট, রুয়েট এবং রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে আছে Materials Science & Engineering (MSE)

#Academic

Level 1 & 2: বেশ কিছু নন-ডিপার্টমেন্টাল কোর্স এর সাথে বেসিক কিছু ডিপার্টমেন্টাল কোর্স থাকবে। যেমনঃ Math- Calculus, Vector, Matrices, Mechanics, Statistics, Probability etc.; Physics – Basic Physics, Electronics, Optics, Waves etc.; Chemistry- Inorganic & Organic; এছাড়া ইংরেজী, একাউন্টিং/ইকোনমিক্স ও পড়ানো হয়। অন্যদিকে ডিপার্টমেন্টাল কোর্স আর ম্যাটেরিয়াল টেস্টিং, ড্রয়িং-ডিজাইন রিলেটেড কিছু সেশনাল থাকে যা পরবর্তী লেভেলগুলোর বেসিক তৈরী করবে।

Level 3 & 4: এখানে প্রায় সব ডিপার্টমেন্টাল কোর্সের সাথে গুটিকয়েক প্রফেশনাল লার্নিং এর জন্য নন-ডিপার্টমেন্টাল কোর্স। পূর্বে উল্লেখিত পাঁচ ধরনের পদার্থের নিষ্কাশন, ফরমেশন, কম্বিনেশন থেকে শুরু করে টেস্টিং, প্রপার্টি, এপলিকেশন এবং এর সুক্ষাতিসূক্ষ উন্নয়ন এখানে পড়ানো হবে। কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন কোর্স হলোঃ Crystal Defects, Physical Properties of Materials, Foundry Engineering, Metal Joining, Materials Characterization, Heat Treatment, Material Selection, Metal Working Process & Ceramic রিলেটেড কোর্স। নন ডিপার্টমেন্টালের মধ্যে IPE এর কয়েকটা ম্যানেজারিয়াল কোর্স করানো হবে। এছাড়া নিতে হবে ফাইনাল ইয়ার থিসিস, যাতে কোন একটি নির্দিষ্ট টপিকের উপর রিসার্চ করে এক্সপেক্টেড রেজাল্ট বের করে আনতে হয়। টপিকটি সাধারনত থিসিস সুপারভাইজারের সাথে আলোচনা করে নিতে হয়। যাদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী তাদের এই দুইটি লেভেল বিশেষ গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত।

#Job Field: Present & Future

এখানে শুরুতেই বলে নিতে হয় সবচেয়ে বড় পজিটিভ দিকটি। একদিকে জব সেক্টর দিন দিন বুম করছে, অন্যদিকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছরের জন্য MME’র গ্র্যাজুয়েট বলতে আমরা বাংলাদেশে মাত্র এই ৫০ জনই। কাজেই দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার ফান্ডিং পাওয়ার জন্য কিংবা দেশে জব এর ক্ষেত্রে অন্যান্য পপুলার ডিপার্টমেন্টের তুলনায় এখানে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়।

১। বর্তমান বিশ্ব একমাত্র টিকে আছে গবেষণা আর এর দ্বারা নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে। যেহেতু গবেষণাধর্মী সাবজেক্ট, তাই বুঝতেই পারছো কত বড় জব সেক্টর এখানে আছে আমাদের। দেশে গবেষনার সুযোগ কম থাকলেও দেশের বাইরে প্রচুর ফান্ডিং হয় শুধু এই ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স এ। এই ডিপার্টমেন্টটি অন্যান্য সব ডিপার্টমেন্টের একটি কমন প্লাটফর্ম বলে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে নিজের পছন্দের একটা স্বাধীনতা পাওয়া যায়। ডিপার্টমেন্টের এলামনাইরা অনেকেই আছেন, যারা MIT, Carnegie Mellon University, University of Alberta etc. এর মত বহুল আকাঙ্ক্ষিত জায়গায় উচ্চশিক্ষায় আছেন।

২। দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা শেষ করেও অনেক বিচিত্র জবের দিকে সুইচ করার অপশন রয়েছে। যেমন এই ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন শ্রদ্ধেয় এলামনাইরা আছেন IBM, Intel এর মত কোম্পানীর বড় বড় প্রজেক্টের অংশীদার হিসেবে। এছাড়া NASA’র মত বড় বড় রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্টিস্ট প্রয়োজন হয় বলে সেখানেও আছে সুযোগ। বর্তমানে ন্যানোটেকনোলজি, বায়োমেডিকেল কিংবা বায়োম্যাটেরিয়ালের সামগ্রিক উন্নতির ফলে এই ডিপার্টমেন্টের সায়েন্টিস্টরা কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন মেডিকেল সেকশনেও।

৩। অনেকেরই ইচ্ছা দেশেই সেটেল হবার। তাদের জন্য কয়েকটি কথা-

দেশে গত কয়েক বছরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জব তৈরী হয়েছে প্রচুর। তার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। আগে হয়ত মেকানিকাল কিংবা ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেশি ছিলো এসব ক্ষেত্রে, কিন্তু বর্তমান সমাজ যথেষ্ঠ সচেতন বলে পন্যের গুনগত মানের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়; তাই বেশির ভাগ ইন্ডাস্ট্রি’র কোয়ালিটি কন্ট্রোল সেকশনে তৈরী হচ্ছে ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারদের বিশাল জাল। জব সেক্টর মূলত স্টিল, গ্লাস-সিরামিক, গার্মেন্টস কিংবা প্লাস্টিকের অসংখ্য ইন্ডাস্ট্রিগুলো। এর মধ্যে ওয়ালটন, আবুল খায়ের স্টিল, BSRM, KSRM, RSRM, বন্দর স্টিল, শাহরিয়ার স্টিল, আনোয়ার ইস্পাত, DBL Ceramics etc. শীর্ষে। এছাড়া সরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত কয়েকটি সেক্টর আছে যেমনঃ BCSIR, Atomic Energy Commission, DPDC etc. যেখানে MME’র জব সেক্টর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে RUET, RU সহ কয়েকটি ভার্সিটিতে ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স নিয়ে নতুন ডিপার্টমেন্টের সূচনায় তৈরী হয়েছে আরো কিছু কাজের ক্ষেত্র।

অনেকের ইচ্ছে থাকে জবের পাশাপাশি মাস্টার্স কমপ্লিট করার। কিংবা মাস্টার্স কমপ্লিট করে তারপরে উচ্চশিক্ষায় যাওয়া। সেক্ষেত্রেও বলতে হয়,ছাত্র সংখ্যা কম হওয়ায় অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের তূলনায় এখানে মাস্টার্সে এনরোল করা অনেক বেশি সহজ।

আরও পড়ঃ বুয়েট ভর্তি প্রস্তুতি- সহায়ক টিপস

#কিছু কথা

১। আরো একটিবার তোমার মন ভেঙ্গে দিয়ে হলেও বলতেই হচ্ছে, সিজিপিএ এর বিকল্প নেই। ভার্সিটিতে আসার পর অনেক সিনিয়র/ব্যাচমেটই বলবে বুয়েটে পড়ছো, আর কি লাগে, এটাই জীবন। কথাটায় প্রচন্ড গলদ আছে। সিজিপিএ কমে যাওয়া মানে তুমি তোমার ভবিষ্যতের ১০টি রাস্তার মধ্যে ৬-৭টি বন্ধ করে দেয়া। তার থেকেও বড় কথা, তুমি ভার্সিটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিছু করবে, কিন্তু লো সিজিপিএ সবকিছুতেই গলার কাটার মত বিঁধে থাকবে, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে, অন্যদিকে ভালো সিজিপিএ তোমাকে মানসিক শান্তি দিবে, আর সাথে কনফিডেন্স দিবে আরো ভালো কিছু করার, নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার। স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বলতে গেলে, কমপক্ষে 3.50, এর উপরে যত উঠাতে পারো তোমার ভবিষ্যত ততই সুগম হবে। The choice is yours!

২। ভার্সিটির বেশিরভাগ ছাত্রজীবনে, সময়ের সাথে সাথে সিজিপিএ’র ঢাল নেগেটিভ। কাজেই, শুরুতে যত বেশি জিপিএ উঠিয়ে রাখা যায় তত উত্তম। ফার্স্ট/সেকেন্ড ইয়ারে নন-ডিপার্টমেন্টাল কোর্স আছে বলে তা তুলনামূলক সহজই। এমনিতে সচরাচর দেখা যায়, শুরুর দিকে রেজাল্ট ভালো হলে, পরবর্তীতে বড় দুর্ঘটনা না হলে তা সহজে আবার নেমে যায় না।

৩। MME এর কিছু কোর কোর্স আছে যেগুলোতে ভালো জ্ঞান তোমার উচ্চশিক্ষার্থে খুবই সাহায্য করবে। সেরকম কয়েকটি কোর্স হলোঃ Crystallography, Materials Thermodynamics, Phase Diagram, Physical Properties of Materials, Foundry Engineering, Heat Treatment, Materials Selection ইত্যাদি।

৪। এডমিশনের রেজাল্টের পরে বেশ লম্বা একটা সময় পাওয়া যায়, যা বেশিরভাগই হেলায় নষ্ট হয়। ওই সময়টায় কিছু প্রোডাক্টিভ কাজ করতে পারো, যা পরবর্তীতে তোমার একাডেমিকে অনেক হেল্প করবে। MS Word, Powerpoint, Excel, Adobe Photoshop এই তিন চারটা জিনিসের জ্ঞান তোমার সারাজীবনই লাগবে। এছাড়া MME তে AutoCAD, SolidWorks, C Programming, MATLAB সহ পূর্বোক্ত সফটওয়্যার গুলোর কোর্স করানো হয়, যা একাডেমিক প্রেসার ঠেকিয়ে অতো ধৈর্য নিয়ে সবার শিখে উঠা সম্ভব হয় না। এই সফটওয়্যার প্রতিভা জব পাবার ক্ষেত্রে সবার থেকে তোমাকে অনেকাংশে এগিয়ে রাখবে।

৫। ফাইনাল ইয়ার থিসিসটিকে হুজুগের বশে সিলেক্ট না করে এমন কিছু সিলেক্ট করা উচিত যা আসলেই তোমার পছন্দ বা তুমি করতে আগ্রহী হবে এবং সর্বোপরি তুমি কিছু কন্ট্রিবিউট করে ভ্যালু এড করতে পারবে। আর থিসিস টাকে শুধু কোর্স হিসেবে না দেখে সেটাকে ফিউচার রিসার্চজীবনের ABCD হিসেবে ধরাই ভালো, মানে ন্যুনতম দুই একটি পাবলিকেশন যাতে হয়, যা তোমার উচ্চশিক্ষার্থে ফান্ড পেতে অনেক বেশি হেল্পফুল হবে।

৬। যাদের একান্তই দেশের বাইরে টার্গেট, তারা ফাইনাল ইয়ারেই GRE/IELTS/TOEFL দেয়ার মাইন্ডসেট তৈরী করা উচিত যেন পাশ করেই বাইরে এপ্লাই করা যায়, সেক্ষেত্রে থার্ড ইয়ার থেকেই আস্তে আস্তে প্রিপারেশন নেয়া উচিত।

৭। স্কুল/কলেজ এর সাথে ভার্সিটি’র পড়ার ধরনে বেশ তফাত আছে, এই তফাতটি তুমি যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে, রেজাল্ট তত ভালো হবে। যেমনঃ এখানে আগের মত নির্দিষ্ট কোন সিলেবাস নেই, নির্দিষ্ট টপিকে নেই সুনির্দিষ্ট কোন বই, এখানে কেউ হয়ত শুধু ক্লাশ লেকচার পড়েই খুব ভালো করছে, আবার অনেকে এক্সট্রা বই পড়ে কিংবা নেট ঘেটে পড়ে বেশ জ্ঞানার্জন করলেও পরীক্ষায় আশানুরূপ ভালো ফল করতে পারছে না; তোমার পড়াশোনার ধরন অনুযায়ী, তুমি অনুকূল ধরন খুঁজে বের করবে; তোমার বন্ধু কি করছে সেটা দেখার দরকার নেই, তোমার কম্পিটিশন হোক নিজের সাথে, নিজেকে প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যাবার, তাহলেই সাফল্য আসবে।
[su_button url=”https://blog.bohubrihi.com/motivational/10-ways-of-self-learning/” target=”blank” style=”soft” background=”#60b9b3″ wide=”yes” center=”yes” icon=”icon: pencil”]আরও পড়ঃ স্বশিক্ষিত হওয়ার ১০টি কৌশল[/su_button]
এই ডিপার্টমেন্টটি অনেক ছোট। তাই খুব সহজেই আমরা একে অন্যের আপনজনে পরিনত হয়ে যাই। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সবসময়েই বলতে শুনেছি, MME একটি ডিপার্টমেন্ট না, এটা একটা পরিবার। নতুন যারা এই ডিপার্টমেন্টে আসছো, তাদেরকে এই পরিবারে স্বাগতম, অনেক সুন্দর একটি ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য; সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

#ডিপার্টমেন্টের ফেইসবুক পেজঃ

https://www.facebook.com/materialsandmetallurgybuet

#BUET MME Department’s contribution to the country:

https://www.youtube.com/watch?v=eIf8RIB9wdA

#MME, Dr. A.K.M. Bazlur Rashid, Life Carnival:

https://www.youtube.com/watch?v=_TQmicshhh8%20

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments