বার্নসের আকাঙ্ক্ষা ছিল সুনির্দিষ্ট। তিনি Thomas Alva Edison এর “সাথে” কাজ করতে চেয়েছেন, এডিসনের “জন্য” নয়। তার মাথায় যখন এই চিন্তা আসে তখন সেটা বাস্তবায়ন করার মত কোন অবস্থাতেই তিনি ছিলেন না। মূলত তার সামনে ছিল দুইটি বাঁধা । এক তিনি এডিসনকে চিনতেন না আর দুই তার এডিসনের কাছে যাওয়ার মত পর্যাপ্ত ট্রেনভাড়া ছিল না। এই দুইটি কারণ-ই অসংখ্য মানুষের বাসনায় জল ঢেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বার্নস ছিলেন তার আকাঙ্খাপূরণে অটল।অর্থাভাবের কারণে তিনি মালবাহী ট্রেনে করে যান। টমাস এডিসনের গবেষণাগারে গিয়ে জানান যে এডিসনের সাথে ব্যবসা করে চান। অনেক বছর পরে এডিসন তার সাথে বার্নসের প্রথম সাক্ষাতের ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে-
[su_quote]সে আমার সামনে নিতান্ত সাধারণ মানুষের মত দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু তার চেহারায় কিছু একটা ছিল,তার ভাবভঙ্গিমায় ফুটে উঠছিল সে যেটার জন্য এসেছে সেটা পেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি মানুষের সাথে কাজ করার অনেক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি যে কোন মানুষ যখন একবার চাকা ঘুরার উপর তার সবকিছু বাজি ধরে তখন সে তা পেয়েই ছাড়ে। আমি দেখেছিলাম সে তার মনকে প্রস্তুত করে রেখেছে,সফলতা অর্জন না করে সে একচুলও নড়বে না। পরবর্তী ঘটনাগুলো বুঝিয়েছিল আমার দেখায় কোন ভুল ছিল না।[/su_quote]
ওই সময়ে তরুণ বার্নস এডিসনকে কি বলেছিলেন তার চেয়ে বড় কথা হল তিনি কি ভেবেছিলেন। এডিসন নিজেই বলেছিলেন যে বার্নসের বেশভূষা তাকে এডিসনের অফিসে কাজ শুরু করার সুযোগ এনে দেয়নি, কেননা সেটা তার পুরোপুরি বিপক্ষে ছিল। বার্নসের চিন্তাধারাই তার সুযোগ তৈরী করেছিল। বার্নস প্রথম সাক্ষাতেই এডিসনের ব্যবসায়িক সহযোগি হয়ে যাননি। বরং তিনি নামমাত্র বেতনে এডিসনের অফিসে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কাজটা ছিল ঝাড়ুদারের। এই কাজ এডিসনের কাছে গুরুত্ববহ ছিল না অথচ বার্নসের কাছে ছিল মহামূল্যবান। কেননা এই কাজ তাকে সুযোগ দিয়েছিল নিজের উপযোগিতা এডিসনের কাছে তুলে ধরার। মাসের পর মাস কেটে গেল, বার্নস তার প্রবল বাসনার ধারে কাছেও যেতে পারলেন না।কিন্তু তিনি নিরাশ হোননি। বরং তিনি তার এই টমাস এডিসনের ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলতে লাগলেন। বার্নস নিজেকে কখনোই বলেন নি –‘কি লাভ এভাবে কাজ করে? বরং নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে অন্য কিছু করি’ বরং তিনি বলেছিলেন-
[su_quote]আমি এখানে এডিসনের সাথে ব্যবসা করতে এসেছি এবং আমার জীবনের শেষদিনকে কাজে লাগিয়ে হলেও তা করেই ছাড়ব।[/su_quote]
হয়ত তরুণ বার্নস সে সময়ে জানতেন না,কিন্তু তার ইস্পাতদৃঢ় প্রতিজ্ঞা, এক আকাঙ্ক্ষার পিছনে তীব্রভাবে লেগে থাকা- তার সকল প্রতিদ্বন্দীকে ধরাশায়ী করে তাকে তার সুযোগের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সুযোগ আসল অপ্রত্যাশিত ভাবে,বার্নস তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেন নি। এটাই সুযোগের খেলা। সুযোগ আসে পেছনের দরজা দিয়ে চুপিসারে,কখনো দুর্ভাগ্য অথবা সাময়িক পরাজয় হিসেবে। হয়তো এজন্যই অনেকে সুযোগকে চিনতে পারেনা। এডিসন তখন নতুন একটি যন্ত্র বানিয়েছেন- Edison Dictating Machine (পরে এটি এডিফোন নামে প্রচলিত)। এটি একধরনের অডিও রেকর্ডার। তবে তার কোন বিক্রেতাই এটা নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। তারা ভেবেছিলেন এটা বিক্রয় করা দুঃসাধ্য হবে। কিন্তু বার্নস তার সুযোগ খুঁজে পেলেন এক অদ্ভুত দর্শন যন্ত্রের মাঝে এবং তা লুফে নিলেন। বার্নস জানতেন তিনি এই যন্ত্র বিক্রি করতে পারবেন। তিনি এডিসনকে যন্ত্রটি বিক্রয়ের জন্য তার মার্কেটিং প্ল্যান জানালেন। এডিসন সানন্দে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। বার্নস প্রাথমিকভাবে শিকাগোতে এই যন্ত্র বিক্রয় ও পরিবেশনের অধিকার পেলেন। তিনি এতটাই সফলতার সাথে এই যন্ত্র বিক্রি করতে পেরেছিলেন যে এডিসন তার সাথে সারা আমেরিকাতে বিক্রয় ও পরিবেশনের চুক্তি করলেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে এক স্লোগান জাগ্রত হল-‘Made by Edison & Installed by Barnes‘ ।
এই ব্যবসায়িক সম্পর্ক ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে ছিল। এর মাধ্যমে বার্নস প্রচুর বিত্তবিভবের মালিক হয়েছিলেন। তবে তিনি আরো বড় কিছু করে গেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন- Think & Grow Rich
মূলঃ The man who ‘thought’ his way into partnership with Thomas A. Edison | Think & Grow Rich- Napollian Hill
- Think & Grow Rich: গল্প ০১ - June 4, 2017