পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং: বর্তমান দশকের প্রস্তুতি

রাহাত আর শাহেদ বিবিএ থার্ড ইয়ারে পড়া দুই বন্ধু। দুইজনেরই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং নিয়ে অনেক প্যাশন। কিন্তু শাহেদ রাহাতের তুলনায় এতে বেশ পারদর্শী।

রাহাতের ফেসবুকের কভার পিকচারে তার নিজের ডিজাইন করা একটা অ্যানিমেশনের ছবি দেয়া। এই ছবি দেখেই সবাই রাহাতের কাজের ধরন আঁচ করে ফেলতে পারে। সে তার বিভিন্ন কাজের ছবি প্রায়ই আপলোড করে। তার বেশিরভাগ পোস্টও একে কেন্দ্র করেই।

রাহাতের ফলোয়ারের সংখ্যা তেমন বেশি না কিন্তু ডিপার্টমেন্টের যেকোনো কাজের জন্য প্রায়ই তার ডাক পড়ে। সিনিয়র ও শিক্ষকদের মাঝে তার বেশ সমাদর।

অপরদিকে শাহেদের হাজারখানেক ফলোয়ার। ফেসবুকে সে খুবই অ্যাক্টিভ আর ডিপার্টমেন্টেও খুব পরিচিত। কিন্তু রাহাতের মতো কাজের বেলায় তাকে কখনো ডাকা হয় না।

উপরের দুই বন্ধুর গল্পেই একটা জিনিস লক্ষণীয়, তা হচ্ছে, এরা দু’জনই করছে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। কিন্তু দু’জনের প্রক্রিয়াটা কি সঠিক? দু’জনই কি এর থেকে সমান ভাবে উপকৃত হবে? এসবের উত্তরের জন্য প্রথমেই জানতে হবে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কী।

পার্সোনাল-ব্র্যান্ডিং-বর্তমান-দশকের-প্রস্তুতি

পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কী?

প্রতিযোগিতার এই যুগে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন যে শব্দগুলো শুনে থাকি তার মাঝে বহুল প্রচলিত হচ্ছে, Personal Branding। ব্র্যান্ডিং শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। আক্ষরিক অর্থে ব্র্যান্ডিং হল যেকোনো ব্যবসা বা পণ্যকে স্বকীয়তা প্রদান করে এমন চিহ্ন।

তবে এখন ব্র্যান্ডিং বলতে শুধু ব্যবসাকে স্বকীয়তা প্রদান করাই বোঝায় না। বরং এই স্বকীয়তাকে মানুষের সামনে ফুটিয়ে তোলা এবং তা বজায় রাখার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকেই বোঝানো হয়। কিন্তু পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং? সে আবার কী? নিজেকে নিজে আবার কিভাবে ব্র্যান্ডিং করব? এসব প্রশ্নের উত্তরই আমরা এখন জানব!

বেশিরভাগ মানুষের কাছেই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বিষয়টা এখনো অজানা। অথচ বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এ সম্পর্কে জানা অনেকটা আবশ্যক। কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমেই Personal Branding কী তা বোঝা খুব সহজ।

      • আপনি কী কখনো নিজের নাম গুগলে সার্চ করে দেখেছেন?
      • আপনার নাম সার্চ করলে কোন বিষয়গুলো গুগল উপস্থাপন করে?
      • আপনি কি চান এ বিষয়গুলো দিয়েই মানুষ আপনাকে চিনুক?

এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে এ বিষয়গুলোকে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য যা করবেন তাই হচ্ছে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। আবার উত্তর না হলে, আপনি আপনার যেই বিষয়গুলো মানুষকে জানাতে চান, সেগুলোকে আরো সুন্দরভাবে তুলে ধরাই হবে আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং।

Wall Street Journal, CES, Intel, NASDAQ এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অভিজ্ঞ সিরিয়াল উদ্যোক্তা জাস্টিন উ বলেছেন,

“আপনার নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করার মাধ্যমে আপনি আপনার আশেপাশের মানুষের কাছে নিজের যে গল্পটি বলতে চান তা নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ তৈরি করে নিতে পারেন। আপনার ব্যবসার সাথে একযোগে একটি Personal Brand তৈরি করে আপনি আপনার মত একই অভিজ্ঞতা, কর্ম-প্রক্রিয়া এবং দক্ষতার অধিকারী মানুষদের নিয়ে একটি কমিউনিটি তৈরি করতে পারেন।

এতে আপনার ব্যবসা সম্ভাব্য স্টেকহোল্ডারদের মাঝে একটি গো-টু প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে কারণ পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং-এর মাধ্যমে আপনি বিক্রি করার আগেই পণ্যের মান সম্পর্কে ক্রেতাকে নিশ্চিত করে দিতে পারবেন।”

আরও পড়ুনঃ আপনার অনুভুতিগুলো আপনি কতটুকু বুঝতে পারেন?

পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কাদের জন্য?

অপ্রাহ উইনফ্রেকে আমরা কে না চিনি! কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না অপ্রাহ Personal Branding এর এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অপ্রাহ একবার তার শো-তে এক নারীর কথা বলেছিলেন, যিনি তার সন্তানের প্রতি খুবই রূঢ় ছিলেন।

পরবর্তীতে সেই নারী তিনদিন অপ্রাহর প্যারেন্টাল অ্যাবিউজের বিপক্ষে বানানো ভিডিও দেখে তার আচরণ পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন। এর থেকে বোঝা যায় Personal Branding-এর প্রভাব কত বিস্তৃত।

অপ্রাহ পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বিষয়টি  ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন এবং একে তার স্বপ্ন পূরণের মূলধন হিসেবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তাকে তার স্বপ্নের জীবনযাপন করতে সহায়তা করেছে এবং পরবর্তীতে তার বিলিওনিয়ার হওয়ার পথও সুগম করেছে।

তবে Personal Branding-এর অর্থ অপ্রাহর জন্য বিস্তৃত। তিনি বুঝতে পেরেছেন, তার ব্র্যান্ডিংটি তিনি মানুষের ক্রিয়াকলাপে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ব্যবহার করতে পারেন।

অপ্রাহর মতে, তার Personal Branding-এর দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটা হচ্ছে, ধারাবাহিকতা। তার টার্গেটেড অডিয়েন্স যদি ধারাবাহিকভাবে তার কার্যকলাপ দেখেন তবে তা তাদের ভাবতে বাধ্য করে এবং তা তাদের আচরণে ইতিবাচক  পরিবর্তন আনে।

দ্বিতীয়ত, উদ্দেশ্য। তিনি বিশ্বাস করেন ইতিবাচক উদ্দেশ্য কার্যকর ব্র্যান্ডিং-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এখন আপনার মনে হতেই পারে যে, অপ্রাহ তো এক মহারথী, সেখানে আমি একজন নগন্য শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবী। আমি Personal Branding করলেই কী আর না করলেই কী? এমন চিন্তাধারা একদম ভুল। একটু ভাবলে বুঝতে পারবেন, ছোটবেলায় আমরা নিজের অজান্তে ক্লাস ক্যাপ্টেইন নির্বাচনের  সময় থেকে Personal Branding করে আসছি। যা থেকে বোঝা যায় যে, এই জিনিসটা জীবনের যেকোনো সময়ই দরকারি।

পেশাদারিত্বের দিক থেকে Personal Brand আপনার জন্য অত্যাবশ্যক হতে পারে। Personal Branding হল কিভাবে আপনি আপনার বর্তমান এবং সম্ভাব্য স্টেকহোল্ডারের কাছে নিজেকে  উপস্থাপন করবেন। এটি আপনাকে স্টেকহোল্ডারদের সামনে ইতিবাচকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দেয়।

Personal Branding আপনাকে আপনার সামর্থ্য, প্যাশন এবং দক্ষতা তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের সামনেও নিজেকে বিশ্বস্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন।

এ কারণে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি আর্টিস্টদের জন্যও Personal Branding খুবই দরকারি।

কেন করব পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং?

Personal Brand তৈরির অনেক কারণ আছে। তবে বিশেষ ভাবে বলতে গেলে কয়েকটা কারণ বলা বাঞ্ছনীয়ঃ

কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিজেকে “গো-টু পার্সন” হিসেবে পরিচিত করতে চাইলে

ধরুন, আপনি কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে পারদর্শী। আর আপনি চান ঐ বিষয়ে কারো কোনো প্রয়োজনে সবার আগে আপনার কথাই মাথায় আসুক। এমনটা চাইলে আপনি মানুষকে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানাতে হবে। আর এর জন্য আপনাকে একটি শক্তিশালী Personal Brand তৈরি করতে হবে। আপনার Personal Brand আপনাকে অন্য সবার থেকে আলাদা হতে সহায়তা করবে। 

নিত্যনতুন সুযোগ পাওয়ার জন্য

একটি শক্তিশালী Personal Brand আপনার জন্য প্রচুর পরিমাণে সুযোগ তৈরি করবে, যার মধ্যে রয়েছেঃ

      • জব ইন্টারভিউ
      • ইন্টার্নশীপ
      • স্পিকিং এঙ্গেজমেন্ট
      • নেটওয়ার্কিং
      • পদোন্নতি
      • পার্টনারশিপ

আপনার Personal Brand হল ইটের মতো; এটি ভিত্তি গেড়ে আপনাকে ভবিষ্যতের বড় সাফল্যের দিকে পরিচালিত করবে। ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় লক্ষ্যেই পৌঁছাতে সহায়তা করবে এবং ক্যারিয়ারে অগ্রগতির অনেক সুযোগ সঞ্চার করবে।

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, একাডেমিক রেজাল্ট ভাল, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসের রেকর্ডও ভালো, তাহলে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং আর কী এমন যোগ্যতা বৃদ্ধি করবে?

টার্গেটেড ক্লায়েন্টের কাছে পৌঁছানোর জন্য এবং লিংকডইন-এ ইতিবাচক চিত্র তৈরিতে সহায়তার জন্য বড় বড় কোম্পানিগুলো আজকাল তাদের কর্মীদের তাদের ব্র্যান্ডের সম্প্রসারক হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী,

      • সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মীদের শেয়ার করা ব্র্যান্ড সম্পর্কিত পোস্টের Reach কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা পোস্টের চেয়ে ৫৬১℅ বেশি।
      • কর্মীদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা পোস্ট গড়ে ২০ বারের মত রি-শেয়ার করা হয়।
      • গড়ে কর্মীদের, তাদের প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের চেয়ে দশগুণ বেশি ফলোয়ার রয়েছে।
      • কর্মীদের শেয়ার করা পোস্ট তাদের কোম্পানীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা পোস্টের চেয়ে ৮ গুণ বেশি এনগেজমেন্ট পেয়ে থাকে। (Source: Markivis.com)

কাজেই বর্তমান নিয়োগকর্তারা আপনাকে আরও যোগ্য ও মূল্যবান মনে করবেন যদি আপনি  একটি শক্তিশালী Personal Brand তৈরি করতে পারেন এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এভাবে Personal Branding-এর মাধ্যমে আপনি পেয়ে যেতে পারেন আপনার স্বপ্নের চাকরি!

অনেকের মধ্যে অনন্য হতে

বিভিন্ন উপায়ে, আপনার Personal Brand আপনাকে স্মরণীয় করে তোলে। প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে কোনো একটা বিষয়ে আপনি একমাত্র দক্ষ হবেন, এমনটা কল্পনাও করা যায় না। Personal Brand আপনাকে একই বিষয়ে দক্ষ হাজার হাজার মানুষ থেকে পৃথক হতে সহায়তা করে। Personal Brand আপনাকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে, একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার কথা শুনলেই সবার আপনার কথা মাথায় আসবে।  

নিজের মাধ্যমে পণ্যের ব্র‍্যান্ডিং করতে

বর্তমান প্রজন্মের বেশ কিছু ব্র্যান্ডের প্রতি বিতৃষ্ণা রয়েছে। এক গবেষণায় দেয়া যায় যে, মিলেনিয়ালদের ৮৪%ই কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন কিংবা ব্র্যান্ডকে ভরসা করে না অথচ সেই ব্র্যান্ডের ব্যাক-এন্ডে কাজ করে এমন অনেক মানুষকে তারা অনুসরণ করে এবং এই মানুষগুলোকে দিয়েই পণ্যের বেশি ব্র্যান্ডিং হয়। একারণেই আজকাল ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রসারের জন্য

একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তিদের Personal Brand-এর জন্যও অনেক সময় ব্যবসার প্রসার হয়। যেমন, টেন মিনিট স্কুলের আয়মান সাদিক। 

ছোট ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এটি অনেক সহজ হলেও বড় সংস্থাগুলির পক্ষে অনেকটা কঠিন। কিন্তু এরপরেও অ্যাাপেলের স্টিভ জবস কিংবা টেসলার ইলন মাস্ক Personal Branding এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসাকে অনেক জনপ্রিয় করতে পেরেছেন। তাই সফল ব্যবসার জন্য, ব্যবসা শুরুর দিকেই প্রতিষ্ঠাতার উচিৎ Personal Brand তৈরির মাধ্যমে সম্ভাব্য স্টেকহোল্ডারদের মাঝে নিজেকে উপস্থাপন করা। 

সর্বোত্তম প্রথম ইম্প্রেশনের জন্য

অনেক আগে এক আমেরিকান রাজনীতিবিদ বলেছিলেন, আজ থেকে ২০ বছর পরে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেটদের ২০ বছর আগের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখতে হবে যে আসলেই সেই ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্য কিনা।

বর্তমানে শুধুমাত্র চাকরির ক্ষেত্রে নয়, বরং যে ক্ষেত্রেই মানুষ আপনার নাম প্রথমবারের মত শুনবে, সর্বপ্রথম সে যে কাজটি করবে তা হল, ফেসবুক কিংবা গুগলে আপনার নাম সার্চ দেয়া। আমরা জানি “First impression is the last impression”। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি দেখা করে কাউকে আপনার ফার্স্ট ইম্প্রেশন দিতে পারবেন না। সে পূর্বেই আপনার অনলাইন অ্যাক্টিভিটি থেকে ফার্স্ট ইম্প্রেশন নিয়ে নিবে।

কেন-করবেন-পার্সোনাল-ব্র্যান্ডিং
আরও পড়ুনঃ গ্রোথ মাইন্ডসেটঃ আপনার ব্রেইনকে কীভাবে পরিবর্তন করবেন?

কীভাবে অনলাইন প্রেজেন্স পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং-এ প্রভাব ফেলে?

যেমনটা মাত্র বললাম, বর্তমান যুগে মানুষ কারো সাথে কথা বলার আগেই ইন্টারনেটে তাকে খোঁজে এবং সেখান থেকে অনুমান করার চেষ্টা করে মানুষটা কেমন হবে। গবেষণা দেখায়, কমপক্ষে ৮০% লোক কেনাকাটা করার আগে অনলাইনে গবেষণা করে।

তদুপরি, হ্যারিস ইন্টারেক্টিভ গ্রুপের একটি সমীক্ষায় ৫৬% লোক বলেছিলেন, কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার এর সাথে ব্যবসা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে কাজ করেছে তাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিটি।

একই সমীক্ষায়, ৭৫% উত্তরদাতারা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ও গুগলে নাম সন্ধানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং তাদের প্রায় অর্ধেক জানিয়েছিলেন তারা যা পেয়েছিল তা ইতিবাচক নয়। বাকি ২৫% বলেছেন এভাবে নাম দিয়ে খুঁজে তারা প্রাসঙ্গিক কিছুই পায়নি।

তাই ভালো পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর জন্য অনলাইন প্রেজেন্সের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।

কীভাবে তৈরি করবেন আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ড?

খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে, অনলাইনে একটা থিম ঠিক করুন, আপনি কী হিসেবে নিজেকে পরিচিতি দিতে চান তা ঠিক করুন। যেকোনো রকমের পোস্ট দেয়ার সময় তা থিমের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে দিন। এ ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ গুলো নিতে পারেন,

আপনার দক্ষতার ক্ষেত্রটি চিহ্নিত করুন

প্রত্যেকেই কোনও কিছুর বিশেষজ্ঞ, তা হতে পারে স্টক মার্কেট কিংবা সমসাময়িক নাটক-সিনেমা। আপনার বুঝতে হবে কোন ধরনের পোস্ট দিতে আপনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন এবং আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্সরা কী ধরনের পোস্ট দেখতে বেশি আগ্রহী। সে ধরনের পোস্টই বেশি দেয়ার চেষ্টা করুন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি সম্পূর্ণ আপডেট করুন

কোন সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টে আপনি ফোকাস করতে চান তা স্থির করুন এবং কোনও পুরানো অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলুন যা আপনি আর ব্যবহার করছেন না। আপনি যে নেটওয়ার্কগুলো ব্যবহার করবেন তার জন্য প্রদত্ত আপনার সমস্ত তথ্য সম্পূর্ণ এবং সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করুন।

বিগত বছরগুলোর বিতর্কিত পোস্ট সরিয়ে ফেলতে পারেন যা আপনার পেশাদার জীবনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

নিয়মিতভাবে পোস্ট শেয়ার করুন

সোশ্যাল মিডিয়ার শুরুর দিনগুলিতে, আপনি যত বেশি পোস্ট করতেন, তত বেশি মানুষ আপনাকে খেয়াল করত। তবে আজকাল অতিরিক্ত পোস্টিং ক্লান্তিকর এবং বিরক্তির উপদ্রব ঘটায়। আপনি আপনার শ্রোতাদের সাথে যোগাযোগ বিরতিহীন রাখতে চান, কিন্তু আপনি এতটা ওভারশেয়ারও করতে চান না যা আপনাকে বিরক্তিকর সাব্যস্ত করে। এইজন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩-৪ বার পোস্ট করা যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

“অন্ট্রাপ্রিনিউর কোচ” এর প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল নয়েস ব্যাখ্যা করেছেন, “একটি সাপ্তাহিক টুইটার পোস্ট বা মাসিক ইনস্টাগ্রামের ছবি তেমন কিছু অর্জন করতে সক্ষম হয় না। এই কারণে, বিভিন্ন সাইটে বিক্ষিপ্তভাবে আধা-ডজনে পোস্ট দেওয়ার চেয়ে সাপ্তাহিক অন্তত দু’বার সাবধানতার সাথে নির্বাচিত সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে মনোনিবেশ করা এবং এগুলিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করা ভাল। “

বর্তমানে ট্রেন্ডে আছে এমন বিষয়ে পোস্ট করার চেষ্টা করুন সবসময়। তবে অবশ্যই বিষয়টা নিয়ে ভালমতো জেনে।

এংগেজিং পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করুন

অন্যের প্রদত্ত পোস্ট পুনরায় পোস্ট করার চেয়ে নিজের লিখিত বা তৈরিকৃত পোস্ট শেয়ার করুন, যা আপনার Personal Brand এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

মাঝে মাঝে নিজের অর্জন সম্পর্কেও কথা বলুন। এমনকি আপনার ব্যক্তিগত জীবন (যেমন ভ্রমণ, শখ ইত্যাদির মতো উপযুক্ত বিষয়গুলি) নিয়ে আকর্ষণীয় পোস্ট করুন। এ ধরনের পোস্ট মানুষকে আপনি কী ধরনের মানুষ তা বুঝতে সাহায্য করে।

আপনি যদি নিজের কর্মক্ষেত্রের বিষয়ে অনলাইনে কথা বলতে চান, তবে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রচার সম্পর্কিত নির্দেশিকা অনুসরণ করছেন কিনা।

টার্গেটেড অডিয়েন্সদের দিয়ে আপনার কনট্যাক্ট লিস্ট সমৃদ্ধ রাখুন এবং প্রত্যেক মিডিয়াতে একই মানুষ রাখার জন্য কন্ট্যাক্ট এক্সপোর্ট করুন।

সোশ্যাল মিডিয়া ইতিবাচক রাখুন

বিতর্কিত পোস্ট এড়িয়ে চলুন এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কথাবার্তা বুঝেশুনে বলুন যাতে করে আপনার Personal Brand আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।

প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট আলাদা রাখুন।

বাছাইকৃত কিছু গ্রুপে যোগদান করুন

ফেসবুক এবং লিংকডইন উভয় প্লাটফর্মে বিভিন্ন বিষয় ফোকাসড গ্রুপ রয়েছে। আপনার নির্দিষ্ট দক্ষতার ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত গ্রুপগুলোতে যোগ দিন কারণ এগুলো আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর জন্য বেশ ফলপ্রসূ হতে পারে।

অফলাইন Personal Branding

অনলাইন ব্র্যান্ডিং-এ ফোকাস করে অফলাইন জগতটিকে ভুলে যাবেন না। আপনার Personal Branding এর জন্য এমন সমস্ত জায়গা মাথায় রাখা আবশ্যক যেখানে আপনার স্টেকহোল্ডাররা আপনার মুখোমুখি হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট আপনার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আপনার ট্রেডিশনাল ব্যবসায়িক কার্ড। খেয়াল রাখবেন যেন সবকিছুতে সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে।

আপনি যেখানেই যান আপনার সাথে ব্যবসায়িক কার্ড বহন করুন। এটি এখনো তেমনই প্রাসঙ্গিক যেমনটা চল্লিশ বছর আগে ছিল। যখনই আপনি আপনার সম্ভাব্য স্টেকহোল্ডারের  সাথে নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ দেখবেন তখন একটি কার্ড বের করুন।

অবশ্যই আপনি চাইবেন যাতে আপনার Personal Brand আপনার জীবন যাপনের ধরনকে পুরোপুরিভাবে উপস্থাপন করে তাই পোশাকও সেভাবেই বাছাই করুন। ধূসর রঙ্গের টিশার্ট দেখলেই যেমন মার্ক জাকারবার্গের কথা মনে পড়ে এবং সেই সাথে এও মনে পড়ে যায় যে, বিলিওনিয়ার হলেও তার জীবনটা একদম সাদামাটা। এভাবে করে যেমন জাকারবার্গের পোশাকই তার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে তেমনি আপনার পোশাকও যেন এমন একটি বার্তাই প্রদান করে যা আপনাকে এক শব্দে বিশ্লেষণ করতে পারে।

কীভাবে-তৈরি-করবেন-পার্সোনাল-ব্র্যান্ড-পার্সোনাল-ব্র্যান্ডিং-বর্তমান-দশকের-প্রস্তুতি

পরিশেষে…

Personal Branding ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। এই বিষয় নিয়ে অনেক বছর ধরে কাজ করা বিশেষজ্ঞরাও বলেন, Personal Branding-এর কোনো শাশ্বত নিয়ম নেই। তবে উপরে আলোচিত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে Personal Branding অনেক সহজ হয়ে যায় আর এর কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স অনলাইন কোর্স!

বর্তমান দশকের কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দশটি দক্ষতার একটি হলো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। বহুব্রীহির সংক্ষিপ্ত এই অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাগুলো সম্পর্কে জানুন, ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সেগুলো প্রয়োগ করতে চেষ্টা করুন এবং নিজের ও আশেপাশের মানুষের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করুন!


এখানে ক্লিক করুন

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স

শেয়ার করুন

2 thoughts on “পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং: বর্তমান দশকের প্রস্তুতি”

  1. Really helpful, Sadia. But, it’s challenging especially for introverts. Is there any way of personal branding without showing someone’s face in media?

    Reply
    • You can write content and publish it online, share opinion. Also, can work on improving public speaking & presentation skills.

      Reply

Leave a Comment