ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার যে প্রবণতা আপনার-আমার-সবার মধ্যে রয়েছে, সেখান থেকে গড়ে উঠেছে মার্কেটিংয়ের পুরো একটি সাবইন্ডাস্ট্রি। গালভরা ভাষায় এটি এসইও (SEO) নামে পরিচিত। আপনি হয়তো এর উপর কাজ করতে চাইলেও শুরুটা কোথায় করবেন, তা বুঝতে পারছেন না। এ গাইড থেকে ধাপে ধাপে জেনে নিন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের গুরুত্বপূর্ণ আর প্রাথমিক সব বিষয় সম্পর্কে। এরপর নিজে থেকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আরো ভালোভাবে শেখার চেষ্টা করতে পারবেন।
কাদের জন্য এসইও শেখার এ গাইড কাজে দেবে?
এ গাইড আপনার জন্য, যদি আপনি:
- ডিজিটাল মার্কেটার হবার ট্রেনিং নিতে চান।
- এসইও নিয়ে প্রাথমিক ধারণা পেতে চান।
- এসইওর মাধ্যমে নিজের অনলাইন ব্যবসা, প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের কাস্টমার বাড়াতে চান।
এসইও শেখার এ গাইড কীভাবে আপনাকে সাহায্য করবে?
এ গাইড পড়ার পর আপনি:
- জানবেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কী ও কেন গুরুত্বপূর্ণ।
- জানবেন সার্চ ইঞ্জিনগুলো সাধারণত কীভাবে কাজ করে।
- মানসম্মত বা কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরির প্রাথমিক পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের টেকনিক্যাল কয়েকটি পদ্ধতি প্রয়োগ করতে শিখবেন।
- অন্য ওয়েবসাইট থেকে লিংক অর্জনের উপায় সম্পর্কে জানবেন।
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের উপর কীভাবে আরো কাজ করা যায়, তা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
আপনি কি প্রস্তুত? শুরু করা যাক তাহলে!
এসইও গাইড (PDF) ডাউনলোড
৭৫০০+ শব্দের এ গাইড সংগ্রহে রাখার জন্য ডাউনলোড করে নিতে পারেন নিচের ফর্মটি পূরণ করে। হাতে সময় থাকলে ব্লগেই পড়া চালিয়ে যান!
এসইও বেসিকস

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলতে ঠিক কী বোঝায় ও কোন উদ্দেশ্য নিয়ে একে ব্যবহার করা যায়, তা না জেনে অনেকে সরাসরি অপটিমাইজেশনের কাজে হাত দেন। এতে করে পরবর্তীতে এমন সব সমস্যা তৈরি হতে পারে যা ঠিক করার জন্য প্রচুর সময় বা অর্থ ব্যয় করতে হয়।
এসইও নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে কয়েকটি ব্যাপার মনে রাখা জরুরি। যেমন:
- এসইওর মূল কাজ আপনার ইউজারদের কেন্দ্র করে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো সে কাজের একটি অংশ মাত্র।
- এসইও আর সার্চ ইঞ্জিনে বিজ্ঞাপন দেয়া এক নয়।
- এসইও দীর্ঘমেয়াদি ও চলমান একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে শুধু একবারের চেষ্টায় ভালো ফলাফল অর্জন করা ও তা ধরে রাখা অসম্ভব।
এসইও কী?
সার্চ ইঞ্জিনে আমরা যখন কোন কিছুর খোঁজ করি, তখন ফলাফলের একটি তালিকা দেখানো হয়। অধিকাংশ সময় তালিকার উপরের লিংকগুলোর দিকে আমাদের মনোযোগ যায়। সেগুলোতে ক্লিক করার সম্ভাবনাও থাকে বেশি। অবশ্য এসব লিংকের মধ্যে কয়েকটি হতে পারে বিজ্ঞাপন। বাকিগুলো সাধারণ লিংক।
কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন ব্যবহার না করে সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলে কোনো ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন ও কন্টেন্টের র্যাঙ্কিং ভালো করার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization) বা এসইও (SEO) বলা হয়। উল্লেখ্য যে, যিনি এ অপটিমাইজেশনের কাজ করেন, তিনিও একজন এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার হিসাবে পরিচিত। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে কাজ আর কাজির একই নাম!

এসইও বলতে অনেকে বোঝেন সার্চ ইঞ্জিনে বিজ্ঞাপন দেয়া। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। এসইওর মূল উদ্দেশ্য হলো, সার্চ ফলাফলে আপনার ওয়েবসাইট বা কন্টেন্টের র্যাঙ্কিং এমনভাবে বাড়ানো যেন সঠিক ইউজাররা তা খুঁজে পেয়ে আপনার সাইটে চলে আসে। অর্থাৎ, অর্গানিক সার্চ ফলাফলের (Organic Search Results) যথাসম্ভব উপরের দিকে জায়গা করে নেয়া। অন্যদিকে সার্চ ইঞ্জিনে সরাসরি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রোডাক্ট, সার্ভিস ও ওয়েবসাইটের প্রচারণা চালানোকে সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (Search Engine Marketing) বা এসইএম (SEM) বলে। ফলাফলের পেইজে “বিজ্ঞাপন” বা “Ad” ট্যাগ লাগানো থাকে এমন লিংকে। তবে সার্চ র্যাঙ্কিংয়ের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

এসইওর মাধ্যমে রাতারাতি সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কৌশল। আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বা কাস্টমারদের প্রয়োজন অনুযায়ী সে পরিকল্পনা আর কৌশলে নিয়মিত পরিবর্তন নিয়ে আসবেন আপনি।
এসইও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ধরা যাক, আপনি মোবাইল ফোন বিক্রি করেন। আপনি চান যে, মানুষ ইন্টারনেটে ফোন কেনার জন্য সার্চ করলে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানুক। কিন্তু অন্যান্য ফোন বিক্রেতাও একই জিনিস চান। সেক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলে কার ব্যবসার ব্যাপারে ইউজাররা আগে জানবেন, সেটা একটা প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রতিযোগিতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য এসইও হতে পারে খুব ভালো একটি উপায়।
এসইও গুরুত্বপূর্ণ হবার কারণ হলো, এর মাধ্যমে:
- তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগ করেও দীর্ঘ মেয়াদে প্রোডাক্ট, সার্ভিস বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালাতে পারবেন,
- সম্ভাব্য কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করা সহজ হয়,
- ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়াতে পারবেন।

শুধু অনলাইন ব্যবসা বা সার্ভিসের মধ্যে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সীমাবদ্ধ নয়। যেকোনো আকারের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালাতে এর ব্যবহার সম্ভব। এমনকি নিজস্ব ওয়েবসাইট না থাকলেও এসইও নিশ্চিত করা যায়। তবে এ গাইডে মূলত ওয়েবসাইটভিত্তিক অপটিমাইজেশনের উপর তথ্য থাকছে।
এসইও কত প্রকার ও কী কী?
কাজের দিক থেকে এসইও সাধারণত তিন প্রকার:
- অন-পেইজ এসইও বা অন-সাইট এসইও
- অফ-পেইজ এসইও বা অফ-সাইট এসইও
- টেকনিক্যাল এসইও
অন-পেইজ এসইও বা অন-সাইট এসইও
একটি ওয়েবপেইজের কন্টেন্টকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সাজানো ও উপস্থাপনের প্রক্রিয়াকে অন-পেইজ এসইও (On-page SEO) বা অন-সাইট এসইও (On-site SEO) বলা হয়। এর মাধ্যমে সাইটের ইউজারদের ও সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে আপনার ওয়েবপেইজের বিষয়বস্তু পরিষ্কার করে তুলে ধরবেন আপনি।
অন-পেইজ এসইওর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো:
- হেডিং,
- মূল কন্টেন্ট,
- কন্টেন্টে ব্যবহৃত লিংক,
- কন্টেন্টে ব্যবহৃত ছবি ও ভিডিও,
- মেটা ট্যাগ ইত্যাদি।

এ ব্যাপারগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন অন-পেইজ এসইও অধ্যায়ে।
অফ-পেইজ এসইও বা অফ-সাইট এসইও
ইউজার ও সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য মূল ওয়েবসাইটের বাইরে কিছু কাজ করতে হয়। যেমন, অন্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে লিংক নিয়ে আসা বা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। এ প্রক্রিয়াকে অফ-পেইজ এসইও (Off-page SEO) বা অফ-সাইট এসইও (Off-site SEO) বলে। অবশ্য এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় লিংক অর্জনের উপর।

কীভাবে অন্য ওয়েবসাইট থেকে আপনি লিংক অর্জন করতে পারেন, সে ব্যাপারে লিংক বিল্ডিং অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
টেকনিক্যাল এসইও
সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিং বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু টেকনিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে টেকনিক্যাল এসইও (Technical SEO) বলা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, আপনার ওয়েবসাইট ব্যবহারে ইউজারদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলো যেন সাইটটিকে সহজে খুঁজে পায়, তার ব্যবস্থা করা।
টেকনিক্যাল এসইওর মধ্যে রয়েছে:
- ওয়েবসাইটের স্পিড,
- ওয়েবসাইটের কাঠামো বা স্ট্রাকচার,
- মোবাইল ডিভাইসে ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স,
- সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে ক্রল (Crawl) করার সুবিধা (যা ‘Crawlability’ নামে পরিচিত),
- সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট বিশ্লেষণ ও ফলাফলে অন্তর্ভুক্ত করার সুবিধা (যা ‘Indexibility’ নামে পরিচিত)
- ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি।

প্রয়োজন অনুযায়ী এ গাইডের বিভিন্ন অধ্যায়ে টেকনিক্যাল এসইও নিয়ে আলোচনা করবো আমরা।
হোয়াইট হ্যাট এসইও ও ব্ল্যাক হ্যাট এসইও
সঠিক নিয়ম মেনে এসইও চালানো হচ্ছে কি না, তার ভিত্তিতে মূলত দুই ধরনের এসইও হয়।
হোয়াইট হ্যাট এসইও: সার্চ ইঞ্জিনগুলোর গাইডলাইন অনুযায়ী সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের চর্চাকে হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO) বলা হয়। মানসম্মত কন্টেন্ট ও অন্য ওয়েবসাইট থেকে লিংক অর্জন করার মাধ্যমে আপনি এ চর্চা নিশ্চিত করতে পারবেন।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও: সার্চ ইঞ্জিনগুলোর গাইডলাইনের বিরুদ্ধে যায়, এমন পদ্ধতি ব্যবহার করার চর্চাকে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) বলে। যেমন, সফটওয়্যারের মাধ্যমে কন্টেন্ট বানানো। এ উপায়ে কম সময়ের জন্য ভালো র্যাঙ্কিং পাওয়া সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য তা ক্ষতিকর। তাই ব্ল্যাক হ্যাট এসইও এড়িয়ে চলুন।
গ্রে হ্যাট এসইও: এসইওর এমন কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন নির্ধারিত গাইডলাইন সরাসরি ভঙ্গ করে না। আবার এগুলো গাইডলাইনের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়। এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহারের চর্চাকে গ্রে হ্যাট এসইও (Grey Hat SEO) বলা হয়। যেমন, অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে লিংক কেনা।
ব্ল্যাক হ্যাট বা গ্রে হ্যাট এসইও হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য আপনার উপকারে আসতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা আরো বেশি। আপনি যদি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে আসলেই লাভবান হতে চান, তাহলে আপনার উচিত সবসময় সার্চ ইঞ্জিন নির্ধারিত গাইডলাইন মেনে চলা।
সার্চ ইঞ্জিন বেসিকস

সার্চ র্যাঙ্কিং ভালো করার জন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোর ইঞ্জিনিয়ারিং দিক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না আপনাকে। কিন্তু সার্চ ফলাফল দেখানোর পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন:
- সার্চ ইঞ্জিনগুলো কীভাবে আপনার সাইট সম্পর্কে জানতে পারে।
- কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করে সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার সাইটের কন্টেন্ট দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
- সার্চ ফলাফলে আপনার সাইটের কন্টেন্ট কীভাবে উপস্থাপন করতে পারে সার্চ ইঞ্জিনগুলো।
সার্চ ইঞ্জিনগুলো কীভাবে কাজ করে?
সার্চ ইঞ্জিনে আপনি যা কিছু লিখে বা বলে তথ্য খোঁজেন, তাকে বলা হয় সার্চ কোয়েরি (Search Query)। এর বিপরীতে বিভিন্ন লিংকের তালিকা করা একটি পেইজ আসে। প্রথম পেইজে যদি মনের মতো তথ্য খুঁজে না পান, তাহলে পরের পেইজগুলোতে যাবার ব্যবস্থা থাকে। এসব পেইজ সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টস পেইজেস (Search Engine Results Pages = SERPs) নামে পরিচিত।

আপনার সামনে কোনো লিংক বা ফলাফল দেখানোর আগে সার্চ ইঞ্জিনগুলো বিশেষ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। যেমন, গুগলের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হয়:
- আপনি যে তথ্য খুঁজছেন, তার ধরন,
- আপনার খোঁজা তথ্যের সাথে ওয়েবপেইজগুলো কতটুকু প্রাসঙ্গিক,
- প্রাসঙ্গিক ওয়েবপেইজগুলোর কন্টেন্টের মান,
- সম্ভাব্য ওয়েবপেইজগুলো কতটা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ব্যবহার করা যায়,
- আপনার সার্চ সেটিংস, ডিভাইস, অবস্থান ইত্যাদি।
মানসম্মত ও প্রাসঙ্গিক ফলাফল দেখানোর জন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো তিনটি সাধারণ ধাপ অনুসরণ করে:
- ক্রলিং
- ইনডেক্সিং
- ফলাফল নির্বাচন
ক্রলিং
একটি ওয়েবসাইটের লেখা থেকে শুরু করে ছবি – যাবতীয় তথ্য ও ডেটা সংগ্রহ করতে সার্চ ইঞ্জিনগুলো স্পাইডার (Spiders) বা বট (Bots) ব্যবহার করে। এসব ওয়েব ক্রলার কোনো পেইজে লিংক খুঁজে পেলে সে লিংকে গিয়েও তথ্য ও ডেটা খোঁজে। পুরো ওয়েবসাইট স্ক্যানিং করার এ প্রক্রিয়াকে ক্রলিং (Crawling) বলা হয়। এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের অস্তিত্ব ও আপডেট সম্পর্কে জানার সুযোগ পায় সার্চ ইঞ্জিনগুলো।

ইনডেক্সিং
একটি ওয়েবসাইটকে স্ক্যান করার পর সংগৃহীত সব তথ্য একটি ডেটাবেইজে সাজিয়ে রাখে সার্চ ইঞ্জিনগুলো। এ প্রক্রিয়াকে ইনডেক্সিং (Indexing) বলা হয়।
যখনই আপনি কোনো ওয়েবপেইজে পরিবর্তন নিয়ে আসেন, ওয়েব ক্রলারগুলো সে আপডেট ইনডেক্সে যোগ করে।
ফলাফল নির্বাচন
একজন ইউজার সার্চ ইঞ্জিনে কোনো তথ্য খোঁজার সাথে সাথে ইনডেক্সড হওয়া প্রাসঙ্গিক ও মানসম্মত ওয়েব কন্টেন্টের তালিকা ফলাফলে চলে আসে। এর জন্য ঠিক কেমন অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়, সে সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনগুলো গোপনীয়তা বজায় রাখে। তবে তাদের গাইডলাইন থেকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব।

সার্চ র্যাঙ্কিং কীভাবে কাজ করে?
সার্চ ফলাফলের র্যাঙ্কিং নির্ধারণে সার্চ ইঞ্জিনগুলো কোন ধরনের মাপকাঠি প্রয়োগ করে, তা কেউ শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারেন না। সুখবর হলো, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার আর মার্কেটাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে র্যাঙ্কিংয়ের বিভিন্ন ফ্যাক্টর চিহ্নিত করেছেন। তার মধ্যে বাছাই করা দশটি ফ্যাক্টর নিয়ে এখানে জানা যাক।
কন্টেন্টের প্রাসঙ্গিকতা
একজন ইউজার যে ধরনের তথ্য খুঁজছেন, আপনার কন্টেন্ট সে তথ্য তাকে দিতে পারছে কি না, তা সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আপনি ফোনের ব্যবসা করেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোনের ভালো-মন্দ তুলনা করে আপনার কিছু ওয়েব কন্টেন্ট রয়েছে। এখন কেউ “Xiaomi vs Samsung” লিখে সার্চ করলেন। এখান থেকে পরিষ্কার যে, সে ইউজার এ দুই ব্র্যান্ডের ফোনের মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইছেন। এ বিষয়ের উপর আপনার যদি কোনো অপটিমাইজড ওয়েব কন্টেন্ট থাকে, তাহলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো তাকে প্রাসঙ্গিক মনে করবে ও সার্চ ফলাফলে দেখাতে পারে।

কন্টেন্টের মান
কন্টেন্ট শুধু প্রাসঙ্গিক হলেই হবে না, তা মানসম্মত হওয়া সমানভাবে জরুরি। কন্টেন্টের মান নির্ধারণে কিছু প্রশ্ন বিবেচনা করতে পারেন। আগের উদাহরণ থেকে এ প্রশ্নগুলো দাঁড় করানো যায়:
- আপনার কন্টেন্টে “Xiaomi” আর “Samsung” ফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলো উল্লেখ করা হয়েছে কি?
- ফিচারগুলো সম্পর্কে ইউজারকে সহজ ভাষায় বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে কি?
- ফোনগুলোর দামের বিপরীতে কেমন সার্ভিস পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে কন্টেন্টে বলা হয়েছে কি?
- ফোনগুলো কেনার সময় যেসব বিষয়ে ইউজারের নজর দেয়া উচিত, সে সম্পর্কে কিছু লেখা হয়েছে কি?
আপনার কন্টেন্টে যদি দরকারি সব তথ্য ইউজারকে দিতে পারেন, তাহলে হয়তো সে বিষয়ে তাকে নতুন করে সার্চ করতে হবে না। ফলে সার্চ ফলাফলের র্যাঙ্কিংয়ে উপরে থাকার সম্ভাবনাও বাড়বে।

কন্টেন্টের নতুনত্ব
ইন্টারনেটে একই ধরনের প্রচুর কন্টেন্ট রয়েছে। তাই আপনি কোনো বিষয়ের উপর নিয়মিত ভালো মানের নতুন কন্টেন্ট নিয়ে আসলে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে প্রাধান্য পাবেন।
অর্গানিক ক্লিকথ্রু রেট
একটি অর্গানিক সার্চ ফলাফলে যতগুলো ক্লিক পড়ে এবং যতবার সে ফলাফল দেখানো হয়, তার শতকরা অনুপাতকে অর্গানিক ক্লিকথ্রু রেট (Organic Clickthrough Rate) বলে।

ধরা যাক, “Buy a headphone” লিখে সার্চ করার পর একটি ইকমার্স সাইটের হেডফোন প্রোডাক্ট পেইজ ৪০,০০০ বার দেখানো হলো অর্গানিক ফলাফলে। এর বিপরীতে ক্লিক পড়লো ২০,০০০ বার। অর্থাৎ, ঐ পেইজের অর্গানিক ক্লিকথ্রু রেট ৫০%।
একটি ওয়েবপেইজের ক্লিকথ্রু রেট যত বেশি হবে, সে পেইজের র্যাঙ্কিং ভালো হবার সম্ভাবনা তত বেশি। তবে পেইজে আসার পর অধিকাংশ ইউজার যদি প্রাসঙ্গিক ও মানসম্মত কন্টেন্ট না পেয়ে আবার সার্চ ফলাফলে ফিরে যান, তাহলে পেইজের র্যাঙ্কিং নিচে নেমে যেতে পারে।
ওয়েবসাইটের বিষয় ও ক্যাটাগরি
দাঁতের সমস্যা দেখা দিলে আপনি দাঁতের ডাক্তারের কাছে যান, চোখের ডাক্তারের কাছে নয়। অর্থাৎ বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান কোনো সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্চ র্যাঙ্কিংয়ের বেলাতেও এটি প্রযোজ্য।
একটি ওয়েবসাইট যে বিষয়ের উপর নিয়মিত মানসম্মত কন্টেন্ট প্রকাশ করে, তার ভিত্তিতে র্যাঙ্কিং নির্ধারিত হতে পারে। যেমন, আপনার সাইটে আপনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের রেসিপি শেয়ার করেন। কেউ রেসিপি নিয়ে সার্চ করলে ফলাফলে আপনার ওয়েবপেইজগুলোর প্রাধান্য পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্যাকলিংক
অন্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে যে লিংকগুলো আসে, সেগুলো হলো ব্যাকলিংক (Backlink)। এদেরকে ইনবাউন্ড লিংকও (Inbound Link) বলা হয়। যত বেশি সংখ্যক ভালো মানের লিংক পাবেন, র্যাঙ্কিং তত ভালো হবে।
একটি লিংকের মান নির্ভর করে দুইটি বিষয়ের উপরঃ
- যে ওয়েবসাইট থেকে লিংক আসছে, সেটি আপনার ওয়েবসাইটের সাথে কতটুকু সম্পর্কিত
- যে ওয়েবসাইট থেকে লিংক আসছে, সেটি কতটা জনপ্রিয়

ধরা যাক, আপনি মেয়েদের ফ্যাশন নিয়ে ওয়েব কন্টেন্ট তৈরি করেন। যদি মেয়েদের কাপড়ের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে লিংক করা হয়, তাহলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো তা গুরুত্ব সহকারে নেবে। ফলে সার্চ র্যাঙ্কিংও বেড়ে যাবে আপনার সাইটের।
ওয়েবপেইজের স্পিড
ব্রাউজারে একটি ওয়েবপেইজ লোডিংয়ে দেরি হলে সেখান থেকে ইউজারদের চলে যাবার সম্ভাবনা বেশি। তাই ভালো স্পিডের ওয়েবসাইট নিশ্চিত করা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ডিভাইস
ইউজাররা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস ও ব্রাউজার থেকে একটি ওয়েবসাইটে আসতে পারেন। এ কারণে আপনার ওয়েবসাইট সব ডিভাইসে কাজ করে কি না, তা সার্চ ইঞ্জিনগুলো বিবেচনায় রাখে।
বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তাই আপনার ওয়েবসাইট মোবাইল ব্রাউজার থেকে ঠিকভাবে ব্যবহার করা না গেলে তা সার্চ ইঞ্জিনের র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে যাবে।
কন্টেন্ট স্ট্রাকচার বা কন্টেন্টের গঠন
সুন্দর উপস্থাপনা যে কেউ পছন্দ করেন। ওয়েব কন্টেন্টের বেলাতেও এ কথা খাটে।
আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট গোছানো অবস্থায় থাকলে ইউজারদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাবে।
কন্টেন্ট স্ট্রাকচার ভালো করার জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। যেমনঃ
- পেইজের লেআউট ও ডিজাইন,
- কন্টেন্ট হেডিং বা শিরোনাম,
- প্রয়োজনীয় সাবহেডিং,
- মূল কন্টেন্ট বা লেখা,
- কন্টেন্টের শব্দ সংখ্যা,
- ছবি ও লিংক ইত্যাদি।

ওয়েবসাইট ক্রলিং করার সুবিধা
একটি ওয়েবসাইট ক্রলিং করার সময় সার্চ ইঞ্জিনগুলো জানার চেষ্টা করেঃ
- ওয়েবসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লিংক কোনগুলো,
- লিংকগুলোর মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে,
- লিংকগুলোর কন্টেন্ট দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে।
এমনভাবে আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করুন যেন উপরের তথ্যগুলো একটি সার্চ ইঞ্জিনের কাছে পরিষ্কার হয়। এর জন্য রোবটস ডট টিএক্সটি (robots.txt) ফাইল আর সাইটম্যাপ (Sitemap) ব্যবহার করতে হবে। সাথে নিজের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেইজের মধ্যেও ঠিকভাবে লিংক করতে হবে।
রোবটস ডট টিএক্সটি ফাইল ও সাইটম্যাপ সম্পর্কে টেকনিক্যাল এসইও অধ্যায়ে জানতে পারবেন।
সার্চ কোয়েরি কত ধরনের হয়?
ইউজাররা সার্চ ইঞ্জিনে যেসব তথ্য খোঁজেন, সেগুলোকে সাধারণত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা সম্ভবঃ
- লেনদেনভিত্তিক জিজ্ঞাসা বা ট্রানজ্যাকশনাল কোয়েরিস (Transactional Queries)
- তথ্যভিত্তিক জিজ্ঞাসা বা ইনফরমেশনাল কোয়েরিস (Informational Queries)
- দিক নির্দেশনাভিত্তিক জিজ্ঞাসা বা ন্যাভিগেশনাল কোয়েরিস (Navigational Queries)
উপরের খটরমটর বাংলা শব্দগুলো মনে না রাখলেও চলবে। কিন্তু উদাহরণগুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখুন।
লেনদেনভিত্তিক জিজ্ঞাসা বা ট্রানজ্যাকশনাল কোয়েরিস
ধরা যাক, আপনি নতুন ফোন কিনতে চান। এর জন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে লিখলেন “Xiaomi phone price”। এ ধরনের জিজ্ঞাসা হলো লেনদেনভিত্তিক। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট একটি কাজ শেষ করতে চান। তবে “লেনদেন” বা “ট্রানজ্যাকশন” বলতে এখানে সবসময় টাকা-পয়সা বা অনলাইন কেনাকাটা বোঝানো হয় না। আপনি যখন ইউটিউবে একটি গান শোনার জন্য সার্চ করেন, সেটিও এ ধরনের একটি জিজ্ঞাসা বা কোয়েরি।

তথ্যভিত্তিক জিজ্ঞাসা বা ইনফরমেশনাল কোয়েরিস
আপনি হয়তো জানতে চান কীভাবে খিচুড়ি রান্না করা যায়। এ ব্যাপারে সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য খুঁজলে তা একটি ইনফরমেশনাল কোয়েরি হিসাবে গণ্য হবে।

দিক নির্দেশনাভিত্তিক জিজ্ঞাসা বা ন্যাভিগেশনাল কোয়েরিস
আপনি ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর বা মতিঝিল যাবার রাস্তা দেখার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে কিছু লিখলে তা এ শ্রেণিতে পড়বে। আবার যদি কোনো ওয়েবসাইটে যাবার জন্য তার নাম লেখেন (যেমন, “Facebook” বা “Wikipedia”), সেটিও এমন জিজ্ঞাসার অন্তর্ভুক্ত।

সার্চ ইঞ্জিনগুলো কোন ধরনের ফলাফল দেখায়?
প্রথম দিকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো জিজ্ঞাসার ভিত্তিতে শুধু লিংকের তালিকা দিয়ে ফলাফল দেখাতো। পরবর্তীতে ছবি, ভিডিও ও খবরসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে ফলাফল দেখানোর ব্যবস্থা তৈরি হয়। বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিনগুলো আরো উন্নত উপায়ে ইউজারদের কাছে তথ্য ও ডেটা উপস্থাপন করে। যেমনঃ
- ফিচারড স্নিপেট (Featured Snippets)
- আনসার বক্স (Answer Box), যা বিশেষ ধরনের ফিচারড স্নিপেট
- ক্যারাউজ্যাল (Carousal)
- ম্যাপ
- ইমেজ
- সাইটলিংকস (Sitelinks)

আপনি যে ধরনের সার্চ ফলাফলের জন্যই র্যাঙ্কিং পেতে চান না কেন, আপনার প্রথম ধাপ হবে কীওয়ার্ড রিসার্চ।
কীওয়ার্ড রিসার্চ

একটি ওয়েবসাইটে কোন ধরনের কন্টেন্ট রাখলে তা সম্ভাব্য ইউজার বা কাস্টমারদের নিয়ে আসতে পারে, তা নির্ধারণ করতে পারবেন কীওয়ার্ড রিসার্চ দিয়ে। আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু যেমনই হোক না কেন, আপনার জানা দরকার:
- আপনার ইউজার বা কাস্টমাররা সার্চ ইঞ্জিনে কী খুঁজছেন?
- কতজন ইউজার বা কাস্টমার একই ধরনের তথ্য খুঁজছেন?
- কোন সার্চ কোয়েরির বিপরীতে আপনার ইউজার বা কাস্টমাররা ঠিক কোন ধরনের ফলাফল আশা করেন?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা থাকলে আপনি বুঝবেন সম্ভাব্য ইউজার বা কাস্টমারদের লক্ষ্য করে কেমন কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
কীভাবে করবেন কীওয়ার্ড রিসার্চ?
ভালোভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় হলোঃ
- ইউজার বা কাস্টমাররা সম্ভাব্য যেসব তথ্য সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজতে পারেন, সেগুলোর তালিকা বানান।
- ২-৩টি কীওয়ার্ড রিসার্চ টুলের মাধ্যমে আপনার তালিকায় থাকা কোয়েরিগুলোর উপর ডেটা সংগ্রহ করুন।
- সংগৃহীত কীওয়ার্ড ডেটার ভিত্তিতে অর্গানিক সার্চ ফলাফলে থাকা লিংকগুলো পরীক্ষা করুন।
- আপনার জন্য কোন কোন কোয়েরি সবচেয়ে লাভজনক হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন।

কীওয়ার্ড রিসার্চে আপনার লক্ষ্য হলো, ইউজারের দিক থেকে বিবেচনা করে যতটা সম্ভব প্রাসঙ্গিক ও সুনির্দিষ্ট কোয়েরি নির্বাচন করা। এখানে উদাহরণ হিসাবে আমরা সাধারণ কোয়েরি (যেমন, “Coffee”) ব্যবহার করলেও বাস্তবে আপনাকে আরো স্পষ্ট কোয়েরি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। যেমন, আপনার ইকমার্স সাইটে ঘরোয়া কফি প্রোডাক্ট বিক্রি করলে “How to make coffee at home” হতে পারে ভালো একটি কীওয়ার্ড।
প্রাসঙ্গিক ও সুনির্দিষ্ট কোয়েরিগুলোকে লং-টেইল কীওয়ার্ড (Long-tail Keywords) বলে। কীওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে আপনি মূলত এ ধরনের কোয়েরি নির্ধারণ করবেন।
কীওয়ার্ড রিসার্চের কয়েকটি টুল
অনলাইন প্রায় যেকোনো মাধ্যমকে কীওয়ার্ড খোঁজার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। তবে প্রাথমিক ধারণা দেবার জন্য এখানে শুধু পাঁচটি ফ্রি ও জনপ্রিয় টুলের কথা উল্লেখ করছি আমরা।
গুগল সাজেশন (Google)
গুগল তিনভাবে আপনাকে সম্ভাব্য কীওয়ার্ড সম্পর্কে সরাসরি ধারণা দিতে পারে।
- গুগল অটোকমপ্লিট
- “এছাড়াও লোকজন এগুলি জিজ্ঞাসা করে”
- প্রাসঙ্গিক সার্চ টার্ম/কোয়েরি
ভালো ডেটা পাবার জন্য জায়গা, ডিভাইস ও ব্রাউজার বদল করে পরীক্ষা চালান। গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন/লগআউটও করুন। তাহলে বিভিন্ন ফলাফলের মধ্যে তুলনা করতে পারবেন।
গুগলের সার্চ বক্সে আংশিকভাবে কিছু লিখলে তাৎক্ষণিকভাবে গুগল একটি তালিকা দেখায়। এ অটোকমপ্লিট (Autocomplete) ফিচারে সাধারণত ১০টি সাজেশন দেখতে পাবেন।
খুব সহজ একটি উদাহরণ দেয়া যাক। সার্চ বক্সে “Coffee” লেখার সাথে সাথে গুগল অনুমান করার চেষ্টা করে আপনি কফি নিয়ে ঠিক কী খুঁজতে চাইছেন।

ফলাফলের পেইজে যাবার পর অন্যান্য জিজ্ঞাসাও দেখতে পারেন। আমাদের “Coffee” উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বহু ইউজার জানতে চান তাদের স্বাস্থ্যের জন্য কফি ভালো নাকি খারাপ।

ফলাফল পেইজের একেবারে নিচে আরো কিছু প্রাসঙ্গিক সার্চের তালিকা দেয়া থাকে। “Coffee” উদাহরণে তাই চলে এসেছে “Coffee Bean” টার্মটি।

গুগল সাজেশন ব্যবহার করে আপনি নিজেই খুব সহজে ১০০ – ২০০ সম্ভাব্য কোয়েরি বের করে ফেলতে পারবেন।
গুগল কীওয়ার্ড প্ল্যানার (Keyword Planner)

কীওয়ার্ড প্ল্যানার মূলত গুগলের পে-পার-ক্লিক (Pay-per-click) বা পিপিসি (PPC) অ্যাডের জন্য বেশি কার্যকরী। এর মাধ্যমে যেকোনো কীওয়ার্ডের উপর বিস্তারিত ডেটা পাওয়া সম্ভব। যেমনঃ
- সার্চ ভলিউম, অর্থাৎ একটি কীওয়ার্ড মাসে গড়ে কতবার সার্চ করা হচ্ছে
- কম্পিটিশন, অর্থাৎ একটি কীওয়ার্ডের উপর বিজ্ঞাপনদাতারা কেমন জোর দিচ্ছেন
- জায়গা ও ভাষার ভিত্তিতে কীওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম কতটা পরিবর্তিত হচ্ছে
উল্লেখ্য যে, এর জন্য গুগল অ্যাডস অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

লগইন করার পর “Discover new keywords” ও “Get search volume and forecasts” নামের দুইটি অপশন সরাসরি দেখতে পাবেন। এর মধ্যে প্রথম অপশন ব্যবহার করে প্রাসঙ্গিক ও সম্ভাব্য কীওয়ার্ডের তালিকা দেখা যায়।

“Coffee” সম্পর্কিত কীওয়ার্ড খোঁজার জন্য এ কোয়েরি চালালে সেটিংস আর ফিল্টারিংসহ কীওয়ার্ডের তালিকা চলে আসে। আমাদের উদাহরণে সেটিংস আছে:
- Locations: Bangladesh
- Language: English
- Search networks: Google
- Last 12 months (Feb 2020 – Jan 2021)

আমাদের উদাহরণে শুধু ১টি কোয়েরির ভিত্তিতে আমরা ৭৭৭টি কীওয়ার্ড ও তাদের গড় সার্চ ভলিউম পেয়ে গেছি!

কীওয়ার্ডগুলোর গড় সার্চ ভলিউম থেকে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন ধরনের কোয়েরিগুলোর উপর ইউজাররা কন্টেন্ট খুঁজছেন।
গুগল ট্রেন্ডস (Google Trends)

একটি সার্চ কোয়েরি কতটুকু জনপ্রিয়, সে ব্যাপারে গুগল ট্রেন্ডস ধারণা দিতে সক্ষম। জায়গা, সময়, ক্যাটাগরি আর সার্চের ধরনের ভিত্তিতে ডেটা ফিল্টারিং করার ব্যবস্থা রয়েছে এতে। কয়েকটি সার্চ কোয়েরির মধ্যে তুলনাও করতে পারবেন। ২০০৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ডেটা রাখা আছে এ টুলে।
গুগল ট্রেন্ডসে কোনো বিষয় লিখে সার্চ করলে যে কয়েক ধরনের ডেটা আসে, তার মধ্যে প্রথমে পাওয়া যায় সময়ের সাথে সে কোয়েরির তুলনামূলক জনপ্রিয়তা কতটা বেড়েছে বা কমেছে। যেমন, বাংলাদেশ থেকে “Coffee” বিষয়ের জনপ্রিয়তা ২০২০ সালের মার্চের দিকে হুট করে বেড়ে আবার কমে গিয়েছিলো।

বিভাগ আর শহরের ডেটায় দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকা আর সিলেটে “Coffee” বিষয়ের জনপ্রিয়তা বেশি।

প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে যে ডেটা রয়েছে, তা “Rising” আর “Top” অপশন দিয়ে ফিল্টারিং করা যায়। আমাদের উদাহরণে “Coffee” জনপ্রিয় হলেও “Cafe” কম জনপ্রিয় ছিলো ২০২০ সালে।

অন্যদিকে “Coffee” সম্পর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে “Dalgona Coffee” পানীয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গত ১ বছরে।

“Coffee” সম্পর্কিত কোয়েরিগুলোর মধ্যে “Top” ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে উপরে রয়েছে “Dalgona Coffee”।

“Rising” ক্যাটাগরিতেও দেখা যাচ্ছে একই ফলাফল।

আনসারদিপাবলিক (AnswerThePublic)

কোনো বিষয় নিয়ে সার্চ করলেই সে বিষয় সম্পর্কিত সার্চ কোয়েরিগুলোর ডেটা পেয়ে যাবেন আনসারদিপাবলিক টুলে। রয়েছে ডেটা ডাউনলোডের ব্যবস্থা।

একটি কোয়েরিকে কেন্দ্র করে ইউজাররা যত ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন, সেগুলোর একটি তালিকা পাবেন আনসারদিপাবলিক থেকে। যেমন, “Coffee” বিষয়ের উপর বাংলাদেশভিত্তিক ৩৮৮টি ফলাফলের মধ্যে ৮০টি হলো প্রশ্ন।

ফ্রি ভার্সনে দিনে শুধু কয়েকটি কীওয়ার্ড নিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারবেন। বড় আকারের কীওয়ার্ড রিসার্চের বেলায় প্রো প্ল্যানে যেতে হবে আপনাকে, যা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশ দামি।
কীওয়ার্ডস এভরিহোয়্যার (Keywords Everywhere)

ক্রোম এক্সটেনশন বা ফায়ারফক্স অ্যাড-অন হিসাবে টুলটি ইনস্টল করা সম্ভব। এর মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট কোনো ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত কীওয়ার্ডগুলোর একটি তালিকা পাবেন। এছাড়া কোয়েরির ভিত্তিতে দেখার সুযোগ রয়েছেঃ
- সময়ের সাথে ট্রেন্ডের ধরন (গুগল ট্রেন্ডসের মতো)
- প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড (প্রায় সময় অর্গানিক ফলাফলের নিচের অংশ থেকে নেয়া)
- ইউজাররা আরো কী জিজ্ঞাসা করছেন
- লং-টেইল কীওয়ার্ডের তালিকা
প্রিমিয়াম ভার্সনে সার্চ ভলিউম, কস্ট পার ক্লিক আর কম্পিটিশন সরাসরি দেখার ব্যবস্থা আছে।
কীওয়ার্ডস এভরিহোয়্যার টুলের অন্যতম সুবিধা হলো, সরাসরি সার্চ ফলাফলে কীওয়ার্ড ডেটার পাশাপাশি অর্গানিক লিংকগুলোর উপর অতিরিক্ত কিছু ডেটা পাবেন। যেমন, “Coffee” কোয়েরির জন্য উইকিপিডিয়ার পেইজ লিংকের সাথে সে পেইজের মাসিক ট্রাফিক দেখা যায়। সাথে জানতে পারবেন কয়টি কীওয়ার্ডের জন্য লিংকটি র্যাঙ্কিংয়ে রয়েছে।

ডেটার উপর মাউস হোভার করলেই পরিষ্কারভাবে সে ডেটা দেখতে পাবেন। যেমন, উইকিপিডিয়ার কফি বিষয়ক পেইজে প্রতি মাসে গড়ে ৪৭,৯০০ ভিজিট হয়। পেইজটি ৪১৫টি কীওয়ার্ডের জন্য সার্চ ফলাফলে চলে আসে।

কীওয়ার্ডস এভরিহোয়্যার টুলের সমস্যা হলো, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপর আলাদাভাবে ডেটা পাবেন না।
অন-পেইজ এসইও বা অন-সাইট এসইও

আপনার ওয়েবসাইটে কোনো ইউজার এলে তিনি কন্টেন্টগুলোকে ঠিকভাবে বুঝতে চান। আবার সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছেও কন্টেন্ট পরিষ্কার হওয়া দরকার। তাই ওয়েবসাইট বানানো ও আপডেটের সময় আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে:
- ইউজাররা যেমন কন্টেন্ট চান, তেমন কন্টেন্ট আপনার সাইটে পাচ্ছেন।
- ইউজাররা আপনার সাইটের কন্টেন্ট সহজে দেখতে পারছেন।
- সার্চ ইঞ্জিনগুলো প্রতিটি পেইজের মূল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছে।
অন-পেইজ এসইওর জন্য করণীয় কী?
১. ইউজাররা সার্চ ইঞ্জিনে কোন ধরনের তথ্য খোঁজেন, সে ব্যাপারে জানুন।
শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কন্টেন্ট তৈরি করলে তা আপনার ইউজারদের কাজে নাও লাগতে পারে। অন্যদিকে তাদের জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে তার ভিত্তিতে ওয়েব কন্টেন্ট বানালে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এর জন্য আপনাকে কীওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে।
২. কন্টেন্টে সঠিকভাবে হেডিং ও সাবহেডিং ব্যবহার করুন।
আপনার কন্টেন্টের মূল বিষয় বোঝানোর জন্য উপযুক্ত শিরোনাম নির্বাচন করা দরকার। তবে এর দৈর্ঘ্য ৭০ কারেক্টারের মধ্যে রাখুন। নাহলে শিরোনামের কিছু অংশ সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল থেকে বাদ যাবে।

সাবহেডিংয়ের মাধ্যমে কন্টেন্টের বিভিন্ন অংশকে পরিচয় করিয়ে দিন। যেমনটা আমরা করেছি এ গাইডে।
৩. প্রাসঙ্গিক মাল্টিমিডিয়া যোগ করুন।
ওয়েবসাইটের কন্টেন্টে শুধু লেখা থাকলে তা ইউজারদের মধ্যে একঘেয়েমি নিয়ে আসে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ছবি, ভিডিও বা অডিও ব্যবহার করতে পারেন। তবে এর সংখ্যা যেন বেশি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৪. দরকারি লিংক ব্যবহার করুন।
ইন্টার্নাল বা নিজের ওয়েবসাইটের লিংকের পাশাপাশি আউটবাউন্ড বা অন্য ওয়েবসাইটের লিংকও ব্যবহার করুন। তবে যত্রতত্র অপ্রয়োজনীয় লিংক কন্টেন্টে রাখলে র্যাঙ্কিংয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।

অন-পেইজ এসইওর আরো কয়েকটি বিষয়
টাইটেল ট্যাগ ও মেটা ডেসক্রিপশন
প্রতিটি ওয়েবপেইজের একটি মূল শিরোনাম থাকে। আপনি শিরোনাম যেভাবে লিখবেন, সার্চ ইঞ্জিনে ঠিক সেভাবে শিরোনাম দেখা যাবে। একে মেটা টাইটেল (Meta Title) বা টাইটেল ট্যাগ (Title Tag) বলে।
কোডিংয়ে একে লেখা হয় এভাবে:
<head>
<title>পেইজের শিরোনাম</title>
</head>
সার্চ ফলাফলে ওয়েবপেইজের মূল শিরোনাম দেখানোর পাশাপাশি একটি সারাংশ দেয়া থাকে। একে বলে মেটা ডেসক্রিপশন (Meta Description)।
কোডিংয়ে একে লেখা হয় এভাবে:
<head>
<meta name="description" content="এখানে দেখতে পাচ্ছেন এ ওয়েবপেইজের সারাংশ।">
</head>

অধিকাংশ কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে কোডিংয়ের সাহায্য ছাড়াই পছন্দসই টাইটেল ট্যাগ ও মেটা ডেসক্রিপশন যোগ করা যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
কিছু ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার কন্টেন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাইটেল ট্যাগ ও মেটা ডেসক্রিপশন সংগ্রহ করে নেয়। যেমন, প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে কুকি সেটিংস (যা এ গাইডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়) থাকার কারণে গুগল সে সেটিংসের টেক্সট ইনডেক্সে নিয়ে ফেলেছে।

ওয়েবপেইজগুলোর বিন্যাস
ধরা যাক, একটি আলমারির এক অংশে আপনার কাপড়চোপড় রাখা আছে। অন্য অংশে আছে দরকারি কিছু ফাইল। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি হয় পছন্দের কাপড় অথবা জরুরি ফাইল খুঁজে পেতে পারেন।
আপনার ওয়েবসাইটের পেইজগুলোকেও বিষয় অনুযায়ী সাজানো উচিত। যেমন, আপনি স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আর ডেস্কটপ বিক্রি করেন একটি অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে। তিন ধরনের প্রোডাক্টের জন্য তিনটি ক্যাটাগরি পেইজকে সাজাতে পারেন এভাবে:
- example.com/products/smartphones
- example.com/products/laptops
- example.com/products/desktops
বিষয় অনুযায়ী আপনার সাইটের পেইজগুলোকে সাজালে ইউজারদের স্বাচ্ছন্দ্য যেমন বাড়বে, তেমনি সার্চ ইঞ্জিনগুলো পেইজগুলোর মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করতে পারবে খুব সহজে।
ইউআরএলের গঠন
নিচের দুইটি ইউআরএল (URL) খেয়াল করুন:
- example.com/?p=54321
- example.com/news/bangladesh
কোন ইউআরএলের বিষয় আপনার কাছে স্পষ্ট? অবশ্যই দ্বিতীয়টির। আপনার ওয়েবসাইটের ইউআরএলের গঠন সহজবোধ্য রাখুন।
ইমেজ অপটিমাইজেশন
একটি ওয়েবপেইজকে আকর্ষণীয় করতে ইমেজ খুব ভালো কাজে দেয়। কিন্তু ইমেজের সাইজ বড় হলে তা লোডিংয়ে প্রভাব ফেলে। যত বেশি সংখ্যক বড় সাইজের ইমেজ ব্যবহার করবেন, লোডিংয়ের সময়ও বাড়বে। এ কারণে ইমেজ অপটিমাইজেশন জরুরি।
১. ছোট সাইজের ভালো মানের ইমেজ ওয়েবসাইটে আপলোড করুন।
‘JPG’ বা ‘PNG’ ফরম্যাটের ইমেজ ব্যবহার করে থাকলে আপলোডের আগে এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইমেজ কম্প্রেসড করে ফেলুন। তবে এতে করে ছবি যেন ঝাপসা না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইমেজ কম্প্রেসড করতে না পারলে ‘TinyJPG’ বা এ ধরনের অনলাইন কোনো টুলের সাহায্য নিন।

২. ইমেজের সাথে অল্টারনেটিভ টেক্সট ব্যবহার করুন।
অনেক সময় ছবি লোডিংয়ে সমস্যা হলে ইউজাররা তা দেখতে পারেন না। আবার সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলারগুলো ছবি চিহ্নিত করতে পারলেও ছবির বিষয় বুঝতে পারে না। তাই প্রতিটি ছবিতে alt
অ্যাট্রিবিউট বা অল্টারনেটিভ টেক্সট (Alternative Text) যোগ করুন। এতে করে সার্চ ক্রলারগুলো ছবির বিষয় বুঝতে পারবে। এছাড়া, ছবি দেখা না গেলে টেক্সটি চোখে পড়বে ইউজারদের।
alt
অ্যাট্রিবিউট কোডিংয়ে লেখা হয় এভাবে:
<img src="group-of-friends-drinking-tea.jpg" alt="Group of friends drinking tea">
কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলোতে সাধারণত ইমেজ আপলোড করার পর অল্টারনেটিভ টেক্সট যোগ করতে পারবেন। এর জন্য কোডিং জানার প্রয়োজন নেই।
অন-পেইজ এসইওতে যা করবেন না
কীওয়ার্ড দিয়ে কন্টেন্ট ভরিয়ে ফেলা
এক সময় কোনো ওয়েবপেইজ কীওয়ার্ড দিয়ে ভর্তি করে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতো। কিন্তু সার্চ ইঞ্জিনগুলোর অ্যালগরিদমে নিয়মিত পরিবর্তনের কারণে এটি বর্তমানে সম্ভব নয়। কীওয়ার্ড দিয়ে আপনার কন্টেন্ট ভরিয়ে ফেললে এর গ্রহণযোগ্যতা একেবারে কমে যাবে।

স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি কন্টেন্ট ব্যবহার করা
সফটওয়্যার ব্যবহার করে কন্টেন্ট বানানো গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর মান ভালো হয় না। তাই ইউজারদের খুব একটা কাজে আসে না এমন কন্টেন্ট। বোনাস হিসাবে জুটতে পারে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছ থেকে পেনাল্টি।
ক্লোকিং
এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ইউজারদের ও সার্চ বটগুলোর কাছে ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্ট দেখানো হয় । এ চর্চা সার্চ ইঞ্জিনগুলোর গাইডলাইনবিরোধী। তবে কিছু ক্ষেত্রে ক্লোকিং গ্রহণযোগ্য। যেমন, একজন ইউজারের জায়গার ভিত্তিতে কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্ট দেখানো।
নকল কন্টেন্ট ব্যবহার করা
বিপুল সংখ্যক লিংক স্ক্যানিং করার কারণে সার্চ ইঞ্জিনগুলো খুব সহজে নকল কন্টেন্ট চিহ্নিত করতে পারে। এমনকি অন্য ওয়েবসাইটের কোনো কন্টেন্টের কিছু অংশ পরিবর্তন করে নিজের ওয়েবসাইটে দিলেও তা ধরা পড়বে। উল্লেখ্য যে, নকল কন্টেন্ট ব্যবহার করলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো সরাসরি পেনাল্টির ব্যবস্থা করে না। কিন্তু অ্যালগরিদম নিজে থেকে আপনার কন্টেন্টের র্যাঙ্কিং নিচে নামিয়ে দিতে পারে।

টেকনিক্যাল এসইও

সার্চ ইঞ্জিনগুলো যত সহজে আপনার ওয়েবসাইটের টেকনিক্যাল দিক পরীক্ষা করতে পারবে, ইউজারদের কাছে এর কন্টেন্ট দেখানো তত সহজ হবে। এটি নিশ্চিত করা সম্ভব যদি:
- সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট খুঁজে পায়।
- সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার সাইটকে নিরাপদ মনে করে।
- মোবাইল ডিভাইস ইউজাররা আপনার ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেইজ ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
টেকনিক্যাল এসইও করার জন্য আপনাকে ওয়েব ডেভেলপার হতে হবে না। কিন্তু কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
সাধারণত কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলোতে সহজে এসইওর টেকনিক্যাল কাজ করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট সাবমিশন
ধরা যাক, আপনি একটি নতুন ওয়েবসাইট বানিয়েছেন। ক্রলিং করতে দিলে গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন কিছু সময়ের মধ্যে সাইটটিকে খুঁজে নেবে। কিন্তু আপনি চাইলে নিজে থেকে তাদের কাছে সাইট সাবমিশন করতে পারেন। এতে করে ইনডেক্সিং তাড়াতাড়ি হবার সম্ভাবনা বাড়বে।
কাজটি বেশ সহজ। গুগলের ক্ষেত্রে সার্চ কনসোল ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইট যোগ করে নিন। বিং আর ইয়াহুর জন্য রয়েছে বিং ওয়েবমাস্টার টুলস। এ টুলগুলোর কাজ অবশ্য সাইট সাবমিশনে সীমাবদ্ধ নয়। এগুলো আপনাকে জানিয়ে দেবে সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেইজগুলোর পারফরম্যান্স সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। যেমন:
- আপনার ওয়েবসাইটের কয়টি পেইজ সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্সড করা আছে।
- কোন ধরনের কোয়েরির জন্য সার্চ ফলাফলে আপনার সাইটের লিংক দেখাচ্ছে।
- সার্চ ফলাফলে দেখানো আপনার সাইটের কোন লিংকগুলোতে ইউজাররা বেশি ক্লিক করছে।
মোবাইল অপটিমাইজেশন
মোবাইল ডিভাইস থেকে যেন আপনার ওয়েবসাইট সহজে ব্যবহার করা যায়, সেটি নিশ্চিত করুন। এর জন্য কয়েকটি উপায় রয়েছে। যেমন:
- মোবাইল রেসপনসিভ ডিজাইন: এ ধরনের ডিজাইনে ডিভাইসের স্ক্রীন সাইজ অনুযায়ী ওয়েবসাইটের লেআউট নিজে থেকে বদলে যায়। এর সুবিধা হলো, সব ধরনের ডিভাইস থেকে ইউজাররা আপনার ওয়েবসাইটে আসতে পারবেন। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের দিক থেকে এটি তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সহজ সমাধান। উল্লেখ্য যে, গুগল রেসপনসিভ ডিজাইন ব্যবহারে উৎসাহ দেয়।
- মোবাইল ভার্সন: মোবাইল ডিভাইস থেকে আপনার ওয়েবসাইটে ইউজার এলে এ ভার্সন দেখতে পাবেন। সাধারণত এ ভার্সনের ধরন হয় এমনঃ “m.example.com”। এর জন্য আলাদা টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন।
- এএমপি (‘Accelerated Mobile Pages’ বা ‘AMP’): মোবাইল ইউজারদের কাছে একটি ওয়েবপেইজ দ্রুত দেখানোর জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে মূলত আপনার ওয়েবসাইটের কোড ও কন্টেন্ট বিশেষভাবে সার্ভারে হোস্ট করা থাকে। এ প্রযুক্তি ঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য একজন ডেভেলপারের সাহায্য নিন।

ওয়েবসাইট স্পিড
একটি ওয়েবসাইটে যাবার পর এটি দীর্ঘ সময় ধরে লোডিং করতে থাকলে ইউজারদের জন্য তা বেশ বিরক্তিকর। তাই –
- ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার বেছে নিন আপনার ওয়েবসাইটের জন্য। এতে খরচ বাড়তে পারে। কিন্তু উপকার আপনারই বেশি।
- যথাসম্ভব কম সাইজের ভালো মানের ইমেজ ব্যবহার করুন।
- গুগলের পেইজস্পিড ইনসাইটস টুল ব্যবহার করলে কিছু টেকনিক্যাল পরামর্শ পাবেন। একজন ডেভেলপারের সাহায্যে সেগুলো বাস্তবায়ন করুন।

সাইটম্যাপ
সাইটম্যাপ (Sitemap) হলো এমন একটি ফাইল যেখানে একটি ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের পুরো তালিকা থাকে। এর মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার ওয়েবপেইজগুলোকে ঠিকভাবে খুঁজে নিতে পারে।

সার্চ র্যাঙ্কিংয়ে সাইটম্যাপের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর কন্টেন্ট থাকলে এর মাধ্যমে সেগুলোকে সাজানো অবস্থায় রাখা সম্ভব। তবে সাইটম্যাপের সাইজ ৫০ মেগাবাইটের চেয়ে বড় বা ৫০ হাজারের বেশি লিংক থাকলে আপনাকে একাধিক সাইটম্যাপ ব্যবহার করতে হবে। একটি সাইটের জন্য গুগলে সর্বোচ্চ ৫০০টি সাইটম্যাপ যোগ করতে পারবেন আপনি।
সাইটম্যাপ বানানোর জন্য অনলাইনে বিভিন্ন ফ্রি টুল রয়েছে। এছাড়া, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলোতে এ ফাইল এক ক্লিকে বানাতে পারবেন। অবশ্য সাইটম্যাপ বানানোর পর তা সার্চ কনসোল বা অন্য ওয়েবমাস্টার টুলে সাবমিশনের কাজ আপনাকে নিজে থেকে করতে হবে।
রোবটস ডট টিএক্সটি ফাইল
ধরা যাক, আপনার ওয়েবসাইটের এমন কিছু অংশ বা কন্টেন্ট রয়েছে যেগুলো আপনি ক্রলিংয়ের বাইরে রাখতে চান। ওয়েব ক্রলারগুলোকে আপনি প্রাথমিকভাবে সে নির্দেশনা দিতে পারেন রোবটস ডট টিএক্সটি (robots.txt) ফাইলের সাহায্যে। কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক।
সব কন্টেন্ট সব ক্রলারের জন্য বন্ধ
User-agent: *
Disallow: /

একটি নির্দিষ্ট পেইজ (উদাহরণ: /products/blocked-product-page.html) সব ক্রলারের জন্য বন্ধ
User-agent: *
Disallow: /products/blocked-product-page.html
একটি নির্দিষ্ট পেইজ (উদাহরণ: /products/blocked-product-page.html) শুধু গুগলের ক্রলারের জন্য বন্ধ
User-agent: Googlebot
Disallow: /products/blocked-product-page.html
এ উদাহরণগুলোতে “User-agent” হলো ক্রলারের নাম। অন্যদিকে “Disallow” দিয়ে ক্রলিং বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সার্চ ইঞ্জিন | ক্রলারের নাম (User-agent) |
---|---|
Googlebot | |
Bing | Bingbot |
Yahoo | Bingbot |
DuckDuckGo | DuckDuckBot |
Baidu | Baiduspider |
রোবটস ডট টিএক্সটি ফাইলের সাথে সার্চ র্যাঙ্কিংয়ের সম্পর্ক নেই। তবে ওয়েবসাইটের কোনো কন্টেন্টকে ক্রলিংয়ের বাইরে রাখার জন্য এ ফাইলের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
ডেস্কটপের নোটপ্যাড (Notepad) বা একই ধরনের টেক্সট এডিটর ব্যবহার করে রোবটস ডট টিএক্সটি ফাইল বানাতে পারবেন আপনি। সেইভ করার সময় এনকোডিংয়ের (Encoding) জন্য ‘UTF-8’ নির্বাচন করুন।

এইচটিটিপিএস
আপনি যখন গুগল, ফেসবুক বা ইউটিউবের ওয়েবসাইটে যান, তখন ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারের বাম কোণায় একটি তালা চিহ্ন দেখতে পান? দেখতে পাবার অর্থ হলো, ওয়েবসাইটটি নিরাপদ। জটিল একটি প্রক্রিয়া কাজ করে এর পেছনে। তবে সে ব্যাখ্যা এ গাইডের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। শুধু জেনে রাখুন যে, আপনার ওয়েবসাইটকেও একইভাবে নিরাপদ রাখা জরুরি।
একটি ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সময় এতে ডেটার আদান-প্রদান ঘটে। এ প্রক্রিয়া হলো হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল বা এইচটিটিপি (HTTP)। তবে এটি আদান-প্রদানকৃত ডেটার নিরাপত্তা দিতে পারে না। সে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব এইচটিটিপিএস (HTTPS) ব্যবহারের মাধ্যমে। এর জন্য ওয়েবসাইটের সার্ভারে একটি সিকিউরিটি সার্টিফিকেট বা ‘SSL Certificate’ ইনস্টলড থাকতে হয়।

২০১৪ সাল থেকে গুগল সার্চ ফলাফলে এইচটিটিপিএস ব্যবহার করা ওয়েবসাইটগুলোকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করে। তাই আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সিকিউরিটি সার্টিফিকেট ইন্সটলড করে ফেলুন।
‘cPanel’ বা এ ধরনের কন্ট্রোল প্যানেল সফটওয়্যার থেকে আপনি নিজে সার্টিফিকেট যোগ করতে পারেন। প্রয়োজনে ডেভেলপারের সাহায্য নিন। এরপর সার্টিফিকেটের লেভেল আর কনফিগারেশন পরীক্ষা করুন এসএসএল সার্ভার টেস্ট দিয়ে।
নোইনডেক্স ট্যাগ
সার্চ ফলাফলে আপনার সাইটের সব পেইজ দেখানো প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে। যেমন, এমন একটি পেইজ যা শুধু সাইটের রেজিস্টার্ড ইউজারদের জন্য। এক্ষেত্রে noindex
ট্যাগ ব্যবহার করুন পেইজের <head>
সেকশনে।
কোডিংয়ে একে লেখা হয় এভাবে:
<meta name="robots" content="noindex">

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলোতে সাধারণত যেকোনো পেইজে ট্যাগটি যোগ করার ব্যবস্থা থাকে। উল্লেখ্য যে, এ ট্যাগ শুধু ইনডেক্সিং আটকানোর জন্য। সরাসরি লিংকের মাধ্যমে যে কেউ এমন পেইজের কন্টেন্ট দেখতে পারবেন। তাই এ ধরনের পেইজকে নির্দিষ্ট ইউজারদের সম্পূর্ণ নাগালের বাইরে রাখার জন্য পাসওয়ার্ড বা অন্য কোনো টেকনিক্যাল পদ্ধতি প্রয়োগ করুন।
লিংক বিল্ডিং

সার্চ র্যাঙ্কিং বাড়ানোর জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইটের বাইরে যে বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে হয়, সেগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত লিংক বিল্ডিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে:
- অন্যান্য মানসম্মত ওয়েবসাইটের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন।
- নতুন বহু ইউজারের নজরে আসবেন।
- সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে আপনার সাইটের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাবে।
- আপনার সাইটের ভালো ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ বাড়বে।
লিংক বিল্ডিং কী?
অন্য ওয়েবসাইট থেকে নিজের ওয়েবসাইটে ব্যাকলিংক বা ইনবাউন্ড লিংক নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে লিংক বিল্ডিং বলা হয়।
সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক আর মানসম্মত ইনবাউন্ড লিংকের সংখ্যা বাড়িয়ে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি ভালো লিংক প্রোফাইল বা লিংক পোর্টফোলিও তৈরি করা সম্ভব।
লিংক বিল্ডিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শুধু ভালো কন্টেন্ট তৈরি করলেই যে সার্চ র্যাঙ্কিং ভালো হয়ে যায়, তা কিন্তু নয়। দীর্ঘ মেয়াদে র্যাঙ্কিং ভালো রাখার জন্য দরকার ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। এসইওতে একে বলা হয় অথোরিটি (Authority) প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যান্য ওয়েবসাইট আপনার সাইটকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তার উপর অথোরিটি কমবেশি নির্ভর করে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো এ গুরুত্ব মাপে ইনবাউন্ড লিংকের মান আর সংখ্যা দিয়ে। অর্থাৎ, যত বেশি সংখ্যক মানসম্মত ওয়েবসাইট আপনার ওয়েবসাইটে লিংক করবে, সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার ওয়েবসাইটকে তত বেশি প্রাধান্য দেবে। এ কারণে লিংক বিল্ডিং এসইওর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ করা দরকার। একটি ওয়েবসাইট অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে কতগুলো লিংক পাচ্ছে, তার উপর এক সময় গুগল খুব বেশি জোর দিতো। ফলে অনেকে টাকার বিনিময়ে লিংক কেনাসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। তাদের এ অপকর্ম বন্ধ করার উদ্দেশ্যে গুগল অ্যালগরিদমে পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়। এ পরিবর্তনে লিংক সংখ্যার চেয়ে লিংকের মান বেশি গুরুত্ব পায়।
বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর জটিল অ্যালগরিদম বহু ক্ষেত্রে ব্যাকলিংকের সাহায্য ছাড়াই কন্টেন্টের বিষয়বস্তু আর মান যাচাই করতে পারে। তবে এর জন্য মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরির পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেইজের মধ্যে সঠিকভাবে লিংক করতে হবে।
কোন ধরনের লিংক অর্জনের চেষ্টা করা উচিত?
“Follow” লিংক
একটি স্ট্যান্ডার্ড লিংক হয় এরকম:
<a href="https://example.com">Example Website</a>
একটি ওয়েবপেইজে এমন স্ট্যান্ডার্ড লিংক খুঁজে পেলে সার্চ ক্রলারগুলো সে লিংকে গিয়ে স্ক্যানিং করে। অর্থাৎ, ক্রলারগুলো লিংকটিকে “Follow” করে।
এবার আরেকটি লিংক দেখা যাক:
<a href="https://example.com" rel="nofollow">Example Website</a>

একটি ওয়েবপেইজে নোফলো অ্যাট্রিবিউটযুক্ত লিংক খুঁজে পেলে সার্চ ক্রলারগুলো আর সে লিংকে গিয়ে স্ক্যান করে না। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে ক্রলারগুলোকে বলা হচ্ছে লিংকটিকে “Follow” না করতে।
অন্যান্য ভালো ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে লিংক করার জন্য যখন স্ট্যান্ডার্ড লিংক ব্যবহার করা হয়, তখন সার্চ ইঞ্জিনগুলো তা গুরুত্ব সহকারে নেয়। আপনার উচিত এ ধরনের ইনবাউন্ড লিংক অর্জনের চেষ্টা করা।
nofollow
অ্যাট্রিবিউটযুক্ত লিংক যে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ক্ষতিকর বা একেবারে অনর্থক, তা কিন্তু নয়। যেমন, আপনি যখন ফেসবুকে একটি পেইজ খুলে নিজের ওয়েবসাইটের লিংক সেখানে দেন, ফেসবুক তাতে noffolow
অ্যাট্রিবিউট যোগ করে দেয়। এ লিংক সার্চ র্যাঙ্কিং বাড়ানোতে সরাসরি ভূমিকা রাখবে না। কিন্তু এর মাধ্যমেও বহু ইউজার আপনার ওয়েবসাইটে আসতে পারেন।
প্রাসঙ্গিক অ্যাংকর টেক্সটযুক্ত লিংক
একটি লিংকে ক্লিক করার জন্য যে টেক্সট ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় অ্যাংকর টেক্সট (Anchor Text) বা লিংক টেক্সট (Link Text)। এর মাধ্যমে লিংকের বিষয়বস্তু পরিষ্কার করে বোঝানো সম্ভব। যেমন, বহুব্রীহি ব্লগ হোম থেকে বোঝা যায় যে, লিংকটি আপনাকে এ ব্লগের হোমপেইজে নিয়ে যাবে।

আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টে অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে যখন লিংক করা হয়, তখন পরিষ্কার ও প্রাসঙ্গিক অ্যাংকর টেক্সট যোগ করা হলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো তা লক্ষ করবে। ধরা যাক, “কক্সবাজারের ৫টি সেরা রেস্টুরেন্ট” শিরোনামে আপনার একটি ব্লগ কন্টেন্ট রয়েছে। ট্যুরিজম সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইট লেখাটি পছন্দ করলো আর কক্সবাজার ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো কন্টেন্ট থেকে আপনার কন্টেন্টে লিংক দিলো। এক্ষেত্রে তারা “কক্সবাজারের ৫টি সেরা রেস্টুরেন্ট” শিরোনামকে অ্যাংকর টেক্সট হিসাবে ব্যবহার করলে তা আপনার কন্টেন্টের সার্চ র্যাঙ্কিং বাড়াতে সাহায্য করবে।
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের ওয়েবসাইটগুলোতে অধিকাংশ সময় অ্যাংকর টেক্সটের ভালো ব্যবহার হয় না। তবে দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজাররা সবসময় এ ব্যাপারে খেয়াল রাখেন।
আপনার ওয়েবসাইটের লিংক প্রোফাইল দেখার সময় যদি অপ্রাসঙ্গিক বা অস্পষ্ট অ্যাংকর টেক্সট ধরা পড়ে, তাহলে সে ওয়েবসাইটের সাথে যোগাযোগ করে অ্যাংকর টেক্সটি পরিবর্তন করার অনুরোধ জানাতে পারেন।
ভালো মানের লিংকের বৈশিষ্ট্য কী?
- আপনার মানসম্মত কন্টেন্ট পড়ে বা দেখে পছন্দ হবার পর কোনো ওয়েবসাইট সে কন্টেন্টে লিংক করলে তা ভালো মানের লিংক হিসাবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের লিংককে বলা হয় এডিটোরিয়াল লিংক (Editorial Link)।
- নির্ভরযোগ্য কোনো ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেইজ থেকে আপনার কন্টেন্টে লিংক আসলে তা ভালো মানের একটি লিংক। যেমন, প্রথম আলোর ওয়েবসাইট বাংলা কন্টেন্টের জন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে নির্ভরযোগ্য একটি ওয়েবসাইট। তাদের কোনো আর্টিকেল থেকে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টে লিংক করা হলে তা গুরুত্ব পাবে।
- আপনার ওয়েবসাইটের সাথে সম্পর্কিত অন্য ওয়েবসাইট থেকে লিংক আসলে তা ভালো মানের একটি লিংক। যেমন, রান্নাবান্নার উপর আপনার একটি ব্লগ রয়েছে। এ ধরনের কোনো ব্লগ থেকে আপনার কন্টেন্টে লিংক করা হলে তা সার্চ র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলবে।
- প্রাসঙ্গিক অ্যাংকর টেক্সটযুক্ত ইনবাউন্ড লিংক ভালো মানের লিংক।
কীভাবে ভালো মানের লিংক অর্জন করবেন?
১. নিয়মিত ব্লগ লিখুন।
ভালো মানের লিংক অর্জন করার জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর উপায় হলো ব্লগ লেখা। সঠিক কীওয়ার্ড রিসার্চের ভিত্তিতে নিত্যনতুন মানসম্মত কন্টেন্ট নিয়ে আসতে পারলে আপনি বড় আকারের ওয়েব ট্রাফিক নিশ্চিত করতে পারবেন। এছাড়া, সাইট ইউজারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।

২. অন্য ওয়েবসাইটে সহজে পাওয়া যায় না, এমন কন্টেন্ট বানান।
ইন্টারনেটে কন্টেন্টের শেষ নেই। তাই আপনার ওয়েবসাইটে এমন কন্টেন্ট প্রকাশ করুন যা ইউজারদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। এ কন্টেন্ট শিক্ষামূলক নাকি বিনোদনমূলক হবে, তা নির্ভর করবে আপনার উদ্দেশ্যের উপর। এর জন্য মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরির নিয়ম মেনে চলুন। পরীক্ষা চালান বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট নিয়ে। যেমন:
- লিস্ট কন্টেন্ট
- ভিডিও
- ইনফোগ্রাফিক
- প্রোডাক্ট রিভিউ
- কুইজ
- শিক্ষামূলক গাইড
- কেস স্টাডি
৩. পার্টনারশিপ তৈরি করুন।
আপনার ওয়েবসাইটে যদি এমন কন্টেন্ট থাকে যা ইন্ডাস্ট্রির কোনো প্রফেশনাল বা প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগতে পারে, তাহলে সে কন্টেন্টের ব্যাপারে তাদেরকে জানান। কন্টেন্ট ভালো লাগলে তারা নিজেরাই এটি শেয়ার করবেন বা এতে লিংক করবেন। যেমন, আপনি পছন্দের একটি ক্যামেরা রিভিউ করেছেন। এক্ষেত্রে সে ক্যামেরা বিক্রয়কারী জনপ্রিয় কোনো অনলাইন শপকে ইমেইল করুন। তাদের ওয়েবসাইটে দেবার জন্য রিভিউর সংক্ষিপ্ত ও পরিবর্তিত একটি ভার্সন দিন, যার ব্যাকলিংক করা থাকবে আপনার সাইটে থাকা মূল রিভিউতে। দেখা যাবে, তাদের কাস্টমারদের কাছে আপনার কন্টেন্টের প্রচারণা করবেন তারা। এমনকি অ্যাফিলিয়েট হিসাবে সেলস কমিশন অর্জন করার সুযোগও আসতে পারে।
লিংক অর্জনের জন্য যেসব কাজ করবেন না
১. টাকা দিয়ে লিংক কেনা
ইন্টারনেটের বহু প্লাটফর্মে অনেক মার্কেটার টাকার বিনিময়ে লিংক নিয়ে আসার প্রস্তাব দেন। এ চর্চা সার্চ ইঞ্জিনগুলোর গাইডলাইনের বিরুদ্ধে যায়। এমনকি বিষয়টি কোনোভাবে তাদের নজরে আসলে আপনার ওয়েবসাইটের উপর পেনাল্টি আরোপ করা হতে পারে। তাই সার্চ র্যাঙ্কিং বাড়ানোর দরকার যেমনই হোক না কেন, যেমন-তেমন লিংক কেনা থেকে বিরত থাকুন।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন কোম্পানি বর্তমানে অনলাইন মিডিয়াতে সরাসরি বিজ্ঞাপন দেবার পরিবর্তে কন্টেন্ট স্পন্সর করে। সাধারণত স্পন্সরড কন্টেন্ট থেকে কোম্পানির সাইটে লিংক করা থাকে। এমন লিংকের ক্ষেত্রে rel="sponsored"
অ্যাট্রিবিউট যোগ করতে হয় পেনাল্টি এড়ানোর জন্য। যেমন:
<a href="https://example.com" rel="sponsored">স্পন্সর ওয়েবসাইট</a>

২. লিংক বিনিময় করা
“আমার ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে লিংক করে দেবো। আপনিও আমাকে একইভাবে লিংক দিন।” – এ ধরনের লিংক বিনিময় করে থাকেন অনেকে। কৃত্রিমভাবে লিংক প্রোফাইল বাড়ানোর এ পদ্ধতি সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. স্প্যামি ওয়েবসাইট থেকে লিংক নিয়ে আসা
আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের সাথে একেবারে প্রাসঙ্গিক নয়, এমন বিভিন্ন সাইট থেকে লিংক নিয়ে আসলে তা শুধু সংখ্যার দিক থেকে বড় হবে। সার্চ ক্রলারগুলো এ লিংকগুলোর মধ্যে ভালো সম্পর্ক খুঁজে না পেলে আপনার সাইটকেও স্প্যামি সাইট হিসাবে গণ্য করতে পারে।

এসইও অ্যানালিটিক্স ও ট্র্যাকিং

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে আপনার চেষ্টার বিপরীতে কী ফলাফল পাচ্ছেন, তা মূল্যায়ন করতে পারা জরুরি। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন:
- সময়ের সাথে আপনার সাইটের সার্চ র্যাঙ্কিংয়ে কেমন পরিবর্তন আসছে ও সে পরিবর্তন সাইটের পারফরম্যান্সে কী প্রভাব ফেলছে।
- কোন ধরনের সার্চ কোয়েরি সবচেয়ে ভালো এসইও ফলাফল দিচ্ছে।
- আপনার এসইও পরিকল্পনা ও কৌশলে কেমন পরিবর্তন আনা দরকার।
- আপনার মার্কেটিং বাজেটে এসইওর ভূমিকা কতটুকু থাকা উচিত।
এসইও সাফল্য কী দিয়ে নির্ধারণ করবেন?
এসইও দিয়ে আপনি আসলে কী অর্জন করতে চান, তা পরিষ্কারভাবে জানা থাকলে আপনার পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করা সহজ। এ কাজে কয়েক ধরনের মেট্রিক বিবেচনায় নিয়ে আসতে পারেন। যেমন:
- বিভিন্ন কীওয়ার্ডের জন্য ওয়েবসাইট কন্টেন্টের র্যাঙ্কিং
- সার্চ ফলাফলে দেখানো আপনার কন্টেন্টে কী পরিমাণ ক্লিক পড়ছে
- সার্চ ফলাফল থেকে আসা ইউজাররা আপনার ওয়েবসাইট কীভাবে ব্যবহার করছে। যেমনঃ কয়টা পেইজ পড়ছে বা পেইজের কোন লিংকে ক্লিক করছে

কনভার্শন রেট
আপনার ওয়েবসাইটের কত শতাংশ ইউজার প্রত্যাশিত কোনো কাজ সম্পন্ন করছেন, তাকে কনভার্শন রেট (Conversion Rate) বলা হয়। যে কোনো আকারের যে কোনো ওয়েবসাইটের এসইও পারফরম্যান্সের জন্য অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি এটি। এ কাজটা কী হবে, সেটা নির্ধারণ করবেন আপনি। যেমন:
- প্রোডাক্ট অর্ডার সম্পন্ন করা
- নিউজলেটারে সাইনআপ করা
- কন্টেন্ট ডাউনলোড করা
- কন্টেন্টে কমেন্ট করা

অর্গানিক সার্চ থেকে আসা ইউজারদের বেলায় কনভার্শন রেট ভালো হবার অর্থ হলো – তারা সার্চ ইঞ্জিনে যা খুঁজছিলেন, আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট তা ঠিকভাবে দিতে পেরেছে তাদেরকে।
নির্দিষ্ট পেইজে ইউজাররা গড়ে কতক্ষণ থাকছেন
আপনার ওয়েবসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেইজগুলোতে অর্গানিক সার্চ ইউজাররা গড়ে কী পরিমাণ সময় ব্যয় করছেন, তা কন্টেন্টের মান সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে পারে। অবশ্য সে পেইজের মূল উদ্দেশ্য কী, তা এখানে বিবেচনা করা দরকার।
ধরা যাক, আপনার একটি প্রোডাক্ট পেইজে ১০০ শব্দের বিবরণ রয়েছে। সাথে আছে ১৫ জন কাস্টমারের রিভিউ। এক্ষেত্রে পুরো পেইজ পড়তে গেলে হয়তো ১৫-৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। অর্গানিক সার্চ থেকে আসা একজন ইউজার তা না করে ২ মিনিটের ভেতর প্রোডাক্ট কার্টে যোগ করে চেকআউট পেইজে চলে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ইউজার খুব কম সময় ব্যয় করা সত্ত্বেও কিন্তু প্রত্যাশিত কাজটি সম্পন্ন করেছেন।
ইউজাররা গড়ে কতগুলো পেইজে যাচ্ছেন
পেইজভিউ বাড়ানো মূল লক্ষ্য হয়ে থাকলে অর্গানিক সার্চ রেজাল্ট থেকে আসা ইউজাররা কতগুলো পেইজে যাচ্ছেন, তা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ডেটা হতে পারে। সাধারণত নিউজ পোর্টাল বা ব্লগের বেলায় এটি প্রযোজ্য। অন্যদিকে ইকমার্স সাইটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট ক্যাটাগরির কয়টি প্রোডাক্ট পেইজে অর্গানিক সার্চ ইউজাররা যাচ্ছেন, তা সে প্রোডাক্ট ক্যাটাগরির চাহিদা সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম।

অর্গানিক ক্লিকথ্রু রেট
বিভিন্ন কোয়েরির বিপরীতে সার্চ ফলাফলে দেখানো আপনার সাইটের লিংকগুলোতে ক্লিকের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে বুঝতে পারবেন যে, আপনার এসইও পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। তবে ভালো ধারণা পাবার জন্য আপনাকে ৩ – ৬ মাসের ডেটা বিশ্লেষণ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ পেইজগুলোতে অর্গানিক ক্লিকথ্রু রেট কম হলে সে পেইজগুলোর সমস্যা নির্ণয় করে ঠিক করে ফেলা জরুরি।
সার্চ র্যাঙ্কিং
আপনার ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ পেইজগুলো যেসব কীওয়ার্ডের কথা মাথায় রেখে বানিয়েছেন, সেসব কীওয়ার্ড বা কাছাকাছি কোয়েরিগুলোর বিপরীতে আপনার সার্চ র্যাঙ্কিং সময়ের সাথে ভালো হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

সার্চ ফলাফলে কন্টেন্টের অবস্থান ভালো হলে সেটি ধরে রাখার জন্য কন্টেন্ট নিয়মিত আপডেট করুন। অবস্থান খারাপ হলে ভালো র্যাঙ্কিংয়ে থাকা লিংকগুলো পরীক্ষা করে নিজের কন্টেন্টের মান বাড়ান।
এসইও অ্যানালিটিক্স ও ট্র্যাকিংয়ের জন্য কোন টুল ব্যবহার করবেন?
এসইও অ্যানালিটিক্স ও ট্র্যাকিংয়ের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য, জনপ্রিয় ও ফ্রি দুইটি টুল হলো:
- গুগল সার্চ কনসোল (Search Console)
- গুগল অ্যানালিটিক্স (Google Analytics)
এর বাইরে ফ্রি ও প্রিমিয়াম বিভিন্ন সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলো প্রয়োজন, অভিজ্ঞতা, বাজেট ও স্কিলের ভিত্তিতে ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে এসইও অ্যানালিটিক্স ও ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার করবেন, তা এ গাইডে পুরোপুরি তুলে ধরা সম্ভব নয়। কিন্তু সাধারণ কিছু ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে দিচ্ছি আমরা।
গুগল সার্চ কনসোল (Search Console)

গুগলের সার্চ ফলাফলে আপনার সাইটের পারফরম্যান্স সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা পাবেন এ টুল থেকে। ইনডেক্সিং সংক্রান্ত টেকনিক্যাল সমস্যা হলে তা জানার ও ঠিক করার সুযোগও পাবেন এর মাধ্যমে।
সার্চ কনসোলের ‘Performance’ রিপোর্টের একটি নমুনা দেখা যাক।

রিপোর্টের উপরের দিকে সার্চ টাইপ ও তারিখের ভিত্তিতে একটি চার্ট দেয়া থাকে। এক নজরে এখান থেকে দেখতে পাবেন:
Total Clicks: একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (যেমনঃ সর্বশেষ ৩ মাসে) সার্চ ফলাফলে দেখানো আপনার সাইটের লিংকগুলোতে মোট কতগুলো ক্লিক পড়েছে

Total Impressions: একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (যেমনঃ সর্বশেষ ৩ মাসে) সার্চ ফলাফলে আপনার সাইটের লিংক মোট কতবার দেখানো হয়েছে

Average CTR: একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (যেমনঃ সর্বশেষ ৩ মাসে) সার্চ ফলাফলে দেখানো আপনার সাইটের লিংকগুলোর জন্য গড় ক্লিকথ্রু রেট

Average Position: একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (যেমনঃ সর্বশেষ ৩ মাসে) সার্চ ফলাফলে আপনার সাইটের লিংকগুলোর গড় র্যাঙ্কিং

চার্টের নিচে ছয় ধরনের ডিমেনশন দেয়া আছে, যেগুলো থেকে ক্লিক ও ইম্প্রেশনের উপর সুনির্দিষ্ট ডেটা পাবেন।
Queries: কোন কোয়েরিগুলোর জন্য আপনার সাইটের লিংক সার্চ ফলাফলে দেখাচ্ছে, কতবার দেখাচ্ছে ও সেগুলোতে কতগুলো ক্লিক পড়ছে

Pages: আপনার সাইটের কোন লিংকগুলো সার্চ ফলাফলে দেখাচ্ছে, কতবার দেখাচ্ছে ও সেগুলোতে কতগুলো ক্লিক পড়ছে

Countries: দেশ অনুযায়ী ক্লিক ও ইম্প্রেশনের সংখ্যা

Devices: ডিভাইস (যেমন, ডেস্কটপ, মোবাইল ও ট্যাবলেট) অনুযায়ী ক্লিক ও ইম্প্রেশনের সংখ্যা

Search Appearance: সার্চ ফলাফলের ধরন (যেমন, ভিডিও ও রিভিউ) অনুযায়ী ক্লিক ও ইম্প্রেশনের সংখ্যা

Dates: তারিখ অনুযায়ী ক্লিক ও ইম্প্রেশনের সংখ্যা

প্রয়োজন অনুযায়ী ডেটা ফিল্টারিং যেমন করতে পারবেন, তেমনি ডেটার মধ্যে তুলনাও করতে পারবেন ‘Compare’ অপশনের সাহায্যে।
গুগল সার্চ কনসোল দিয়ে আরো যেসব কাজ করতে পারবেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- আপনার সাইটের নির্দিষ্ট লিংক ক্রলার দিয়ে সরাসরি পরীক্ষা করানো
- ইনডেক্সড পেইজের সংখ্যা ও সেগুলোতে কোনো সমস্যা আছে কি না, তা দেখার ব্যবস্থা
- সাইটম্যাপ সাবমিশন করা
- সার্চ ফলাফল থেকে লিংক সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করা
- ডেস্কটপ ও মোবাইল ডিভাইস থেকে আপনার সাইট ব্যবহারে যেসব সমস্যা (যেমন, স্লো পেইজ স্পিড) রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া
- আপনার সাইটের বিরুদ্ধে গুগলের কোনো পেনাল্টি রয়েছে কি না, তা জানা
- আপনার সাইটের নিরাপত্তা ইস্যু আছে কি না, তা জানা
- অন্য যেসব সাইট থেকে আপনার সাইটে লিংক করা হচ্ছে, সেগুলোর তালিকা দেখা
- অন্য সাইট থেকে আপনার সাইটের যেসব পেইজে লিংক করা হচ্ছে, সেগুলোর তালিকা দেখা
গুগল অ্যানালিটিক্স (Google Analytics)

একটি ওয়েবসাইটের ইউজারদের সম্পর্কে ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য গুগল অ্যানালিটিক্স ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে আপনার সাইটের এসইও পারফরম্যান্স নিয়ে সরাসরি ডেটা কম পাবেন। কিন্তু ইউজাররা সাইটকে কীভাবে ব্যবহার করছে, তার উপর পরিষ্কার ধারণা দেবে এ টুল। অবশ্য এর জন্য ভালো ডেটা অ্যানালিসিস দরকার হবে।
এসইও ট্র্যাকিংয়ের বেলায় আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে:
- অর্গানিক সার্চ থেকে কতজন ইউজার ওয়েবসাইটে আসছেন
- কোন সার্চ ইঞ্জিনগুলো থেকে ইউজাররা ওয়েবসাইটে আসছেন
- অর্গানিক সার্চ থেকে ইউজাররা ওয়েবসাইটের কোন পেইজগুলোতে আসছেন
- অর্গানিক সার্চ থেকে আসা ইউজাররা ওয়েবসাইটে কতটা সময় ব্যয় করছেন
অর্গানিক সার্চ থেকে আসা ইউজারদের ব্যাপারে আরো কিছু তথ্য পাবেন গুগল অ্যানালিটিক্স থেকে। যেমন:
- দেশ বা শহর
- আনুমানিক বয়স ও লিঙ্গ
- ডিভাইস ও ব্রাউজার
- আগ্রহের বিষয়

এসইও অব্যাহত রাখুন
ধরা যাক, আপনার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে সাবমিশন করেছেন। ক্রলিং আর ইনডেক্সিং ঠিকমতো চলছে। সাথে কীওয়ার্ড রিসার্চের ভিত্তিতে বানাচ্ছেন ইউজারদের জন্য মানসম্মত কন্টেন্ট। ফলাফল হিসাবে অর্গানিক ইউজারের সংখ্যা বাড়ছে আপনার ওয়েবসাইটে, যার উপর ডেটা অ্যানালিসিস করছেন নিয়মিত। এর পরের ধাপ কী?
এসইওর প্রাথমিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পর আপনার উচিত –
- ওয়েবসাইটের পুরানো কন্টেন্ট আপডেট করা।
- ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেইজের মধ্যে সঠিকভাবে লিংক করার ব্যবস্থা নেয়া।
- ওয়েবসাইটের যাবতীয় কন্টেন্টকে অন্য মার্কেটিং চ্যানেলে (যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইমেইল) ভালোভাবে কাজে লাগানো।
পাশাপাশি সার্চ র্যাঙ্কিংয়ের সাথে সম্পর্কিত তুলনামূলকভাবে জটিল কাজগুলোতে মনোযোগ দিতে পারেন। যেমন:
- স্ট্রাকচারড ডেটা (Structured Data) ব্যবহার করা, যার মাধ্যমে সার্চ ফলাফলে দেখানোর জন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে আপনার কন্টেন্ট সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ডেটা দিতে পারবেন
- সাইট আর্কিটেকচার (Site Architecture) ঠিক করা, যা টেকনিক্যাল সমস্যা দূর করে আপনার সাইটকে এসইওর জন্য আরো উপযোগী করে তুলবে
- আপনার ওয়েবসাইটের সাথে সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কীওয়ার্ডগুলোর জন্য স্যার্চ র্যাঙ্কিংয়ের উপরে থাকা ওয়েবসাইটগুলোকে পরীক্ষা করে নিজের এসইও পরিকল্পনা ও কৌশলে পরিবর্তন নিয়ে আসা
এবারের গাইডে যেসব বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে জানলেন, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন বা ফিডব্যাক থাকলে কমেন্ট করুন। তবে এসইওর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো হাতেকলমে শিখতে চাইলে ভালো কোনো কোর্স বা ট্রেনিং করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
ডিজিটাল মার্কেটার হতে চান?
ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সবকিছু শিখে নিন বহুব্রীহির অনলাইন কোর্স থেকে। প্রিরেকর্ডেড ভিডিও আর লাইভ সেশনের কোর্সটি ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবেন।
এ কোর্সে পাচ্ছেন:
- কেস স্টাডি ও প্র্যাকটিক্যাল প্রজেক্টের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দরকারি টুলগুলোর (ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব ও ইমেইল) ব্যবহার শেখার সুযোগ
- ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে আপনার দক্ষতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা ও ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালের কাছ থেকে সরাসরি ফিডব্যাক
- ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে চাকরির প্রস্তুতি সংক্রান্ত নির্দেশনা
Such a wonderful and helpful tutorial text, I have ever seen.
অসাধারণ একটি পোস্ট করেছেন ভাই। পোষ্টটি পড়ে উপকৃত হলাম এবং আশা করি সামনের দিনে এমন ভালো পোস্ট পাব।
good
very good content about SEO Knowledge World
Good
অনেক গুরুত্বপূর্ন এবং অনেক বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে। ধন্যবাদ
SEO নিয়ে তথ্যবহুল একটি লেখা। লেখায় অনেকগুলো রিসোর্স এর ব্যবহার দেখানো হয়েছে। ধন্যবাদ, লেখককে ও বহুব্রীহিকে সুন্দর একটি লেখা দেওয়ার জন্য।
VERY USEFULL
Bhai ami form fillup korechi mail id diyechi. But pdf file ase nai
ইমেইল এর মধ্যে একটি লিংক থাকবে যেই লিংকে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে পারবেন।
আর যদি ইমেইল না পেয়ে থাকেন তাহলে আরেকটি ইমেইল আইডি দিয়ে ট্রাই করে দেখুন।
amar to kono mail ase nai.
ভিন্ন একটি ইমেইল আইডি দিয়ে আবারও চেষ্টা করুন। আমাদের সিস্টেমটি সম্পূর্ণ ঠিক আছে।
পুনশ্চঃ একবার Spam (স্প্যাম) বক্স চেক করে দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ