কন্টেন্ট রাইটিং এ ক্যারিয়ার ও এর আদ্যোপান্ত

“কন্টেন্ট রাইটিং” এ শব্দযুগলটি বর্তমানে দেশের চাকরি বাজারে বিশেষ করে অনলাইন ভিত্তিক কাজের বাজারে দারুণ জনপ্রিয়। “কন্টেন্ট” শব্দটিকে এক কথায় “লেখালেখি” বলে চালিয়ে দেয়া গেলেও কন্টেন্ট রাইটিং বলতে কিন্তু শুধু নির্দিষ্ট একটি কাজকে বোঝায় না। বরং, কন্টেন্ট রাইটিং হল একসাথে বেশ কয়েকটি কাজের সংকলন।

একসময় দাপ্তরিক কাজের বাইরে লেখালেখি বলতে লেখক-কবিদের গল্প কবিতা লেখাকেই বোঝানো হত। কিন্তু মানবজীবনে কাজের ধরণ, ব্যাপ্তি ও প্রযুক্তির অভাবনীয় বিস্তারের ফলে লেখালেখির গজিয়েছে অসংখ্য ডালপালা। বর্তমানে এমন কোন ইন্ডাস্ট্রি বা ব্যবসায়িক কাজ নেই যেখানে প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটিং এর প্রয়োজন নেই।

আর্টিক্যালটি কাদের জন্য?

  • যারা কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে ধারণা পেতে চান
  • যারা কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী

আর্টিক্যালটি থেকে কী জানতে পারবেন?

খুব সহজবোধ্যভাবে এই আর্টিকেলে কিছু বিষয় আলোচনা করা হয়েছে এবং এ আর্টিকেল শেষে আপনি জানতে পারবেন – 

  • কন্টেন্ট রাইটিং কী কী ধরনের হতে পারে
  • কনটেন্ট রাইটিং কিভাবে শিখবেন?
  • কন্টেন্ট রাইটিং এর কিছু প্রাথমিক ধাপ
  • কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ শুরু করতে কোথায় খোঁজ করতে পারেন?
  • চাকরির বাজারে কন্টেন্ট রাইটিং এর ভবিষ্যত

কী কী ধরনের কনটেন্ট রাইটিং আছে?

লেখালেখিকে কোন নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা যায়না। কাজের ধরণ ও বিষয়ের উপর নির্ভর করে কন্টেন্ট রাইটিং এরও রয়েছে নানান ধরণ। যেকারণে, লাক্সের বিজ্ঞাপণের স্ক্রিপ্ট যেমন এক ধরণের কন্টেন্ট রাইটিং ঠিক একইভাবে “বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব” বিষয়ক একটি গবেষণাপত্রও কন্টেন্ট রাইটিং এর আওতায় পড়ে। এমনকি এই যে আর্টিকেলটি আপনি এই মুহূর্তে পড়ছেন সেটিও কিন্তু এক ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং!

কাজের প্রয়োজনের কন্টেন্টের ধরণ ও ফরম্যাটে যেকোন সময় যেকোন পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তারপরও কিছু বহুল প্রচলিত কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে আলোচনা করা হলো। তবে এর বাইরেও অনেক ধরণের কন্টেন্ট রাইটিং রয়েছে।

ব্লগিং

ব্লগিং হলো যা লিখতে ইচ্ছা করে সেগুলো সহজ ভাষায়, গুছিয়ে প্রকাশ করা। প্রচলিত ধারায় ব্লগিং বলতে একটি বিষয় নির্বাচন করে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা ও নিজের মতামত দেয়াকে বোঝায়।

ব্লগিং এ বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু বেশ ঈর্ষণীয়। বিগত দশকে সামহোয়্যারইন ব্লগ, সচলায়তন, মুক্তমনা ইত্যাদি ব্লগিং প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে অনেক লেখক বেরিয়ে এসেছে। শুরুর দিকের ব্লগাররা মূলত নিজেদের আগ্রহ থেকেই লিখতেন, আয় করার কোন তেমন কোন ব্যবস্থা ছিলনা। কিন্তু এখনকার সময়ে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে ব্লগিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মনিটাইজড। 

বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক ব্লগিংয়েরই চল বেশি। কারণ বিষয়ভিত্তিক ব্লগিং এর পাঠক তুলনামুলকভাবে বেশি থাকে। যেমন, একটি ব্লগসাইটে অনেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়তে আসে, অনেকে আবার হয়তো চাইবে ফিকশনে ডুবে থাকতে। ব্লগের বিষয় যাই হোক না কেন, নিয়মিত লেখতে থাকলে এবং লেখার মান ভাল হলে খুব সহজেই আপনার একটা ডেডিকেটেড পাঠকশ্রেণী গড়ে উঠবে। তখন সাইটের নিয়ম অনুযায়ী ভিউয়ারশিপ বা পেইড কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারবেন।

বাংলা ছাড়াও ইংরেজী ভাষায় ব্লগিং করতে চাইলে Sharespace অনেক জনপ্রিয় ব্লগিং সাইট।

কপিরাইটিং

কপিরাইটিং হল পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কন্টেন্ট তৈরি করা। এ প্রক্রিয়ায় একজন ক্লায়েন্ট থাকেন, যার নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করতে হয়। কিন্তু এখানে লেখার ধরণ এবং কন্টেন্ট কী হবে তা নির্ভর করে সবশেষ প্রোডাক্টটি কোন প্ল্যাটফর্মে যাচ্ছে তার উপর। যেমন একটি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সেটির স্ক্রিপ্ট লেখা আবার ফেইসবুকে সেই বিজ্ঞাপনটি শেয়ার করার জন্য আকর্ষণীয় একটি ক্যাপশন লেখা – দুটি সম্পূর্ণ দু ধরণের কাজ। তবে উভয় কাজ কপিরাইটিং এর অন্তর্গত।

গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করে আপনার ক্লায়েন্টের লাভের পাল্লা ভারী করাই কপি রাইটিংয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্যটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক হলেও কপিরাইটিংয়ে অনেক উদ্ভাবনীমূলক, কাল্পনিক এবং মজার আইডিয়া নিয়ে নিরীক্ষা করার সুযোগ আছে। যেমনঃ একজন কপিরাইটারের উপরেই একটি প্রোডাক্টের ব্র্যান্ডিং থিম, মেসেজ, পরিবেশনা এমনকি মানুষের মনে এর ভাবমূর্তি কেমন হবে এসব নির্ভর করে।

ঘোস্টরাইটিং

ঘোস্টরাইটিং ধারণাটি আমাদের দেশে কিছুদিন আগেও তেমন একটা প্রচলিত ছিল না। তবে ইদানিং এ বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ধরুন, একজন বিখ্যাত অভিনেতা একটি বই লেখতে চান, কিন্তু তিনি লেখালেখিতে তেমন পারদর্শী নন। আবার একজন জনপ্রিয় লেখকের লেখার তেমন একটা সময় মিলছেনা, তবে তার কাছে দারুণ একটা গল্পের প্লট রয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে ডাক পড়ে ঘোস্ট রাইটারদের। তবে শুধু ফিকশন আর নন ফিকশনই নয়, রিসার্চ, ইতিহাস্মূলক বই, তথ্যবহুল যেকোন বিষয়ের উপরে লেখনীর সংস্করণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে ঘোস্ট রাইটিং হয়ে থাকে। 

এখানে বলে রাখা ভালো, এ ধরণের লেখকদের নাম “ঘোস্ট” থাকার কারণ হলো লেখার কোথাও তাদের নাম-নিশানা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কারণ তারা সরাসরি অন্যের জীবনী, গল্প বা আইডিয়া নিয়ে লেখালেখি করেন যার বিনিময়ে তারা এককালীন বা সত্ত্বের ভাগ হিসেবে সম্মানী পান। আর এ কারণেই তারা লেখাটিকে নিজের বলে দাবি করতে পারেন না।

টেকনিক্যাল রাইটিং

টেকনিক্যাল রাইটিং মানে আক্ষরিক অর্থে প্রযুক্তিগত রাইটিং নয়, বরং জটিল এবং বিষয়ভিত্তিক লেখাকে বোঝায়। যেটা একবার পড়ে সে বিষয়ে জানাশোনা না থাকা মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এ ধরণের লেখা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পাঠককে টার্গেট করেই করা হয়।

যেমন: জনপ্রিয় কিছু জাভাস্ক্রিপ্ট লাইব্রেরি এবং ফ্রেমওয়ার্ক – এ লেখাটি সবার জন্য না। শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং নিয়ে পড়াশোনা করা বা এ বিষয়ে আগে থেকে ধারণা আছে এমন পাঠকরাই এ বিষয়টি পড়তে চাইবেন।

টেকনিক্যাল রাইটিংয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে রাইটাররা একটি পেশায় বা বিষয়ে দক্ষ; বাড়তি আয় বা ভালো লাগা থেকে লেখালেখি করে থাকেন। যেকোন ধরণের পেশার মানুষ তার দক্ষতা অনুযায়ী প্ল্যাটফর্ম খুঁজে এসব লেখালেখি শুরু করে দিতে পারেন।

স্ক্রিপ্টরাইটিং

আপনার সৃজনশীলতা ফুটিয়ে তোলার, ভেতরের গল্পকারকে তুলে আনা এবং কন্টেক্সট অনুযায়ী গল্প সাজানোর মোক্ষম জায়গা হল স্ক্রিপ্ট রাইটিং। কোন পাঠ্য বস্তুকে ভিজ্যুয়ালে রূপান্তর করার নির্দেশনাকেই মূলত স্ক্রিপ্ট বলা হয়। নাটক, সিনেমা বা বিজ্ঞাপন যাই হোক না কেন স্ক্রিপ্ট হলো একটি কঙ্কাল। এ কঙ্কালকে কেন্দ্র করেই শরীর বাকি অঙ্গ অর্থাৎ শুটিং, এডিটিং ইত্যাদি এলিমেন্ট গুলো কাজ করে।

স্ক্রিপ্ট মূলত দু ধরনের হয়; এক যেখানে গল্প বা বিষয় আপনাকে আগেই দেয়া থাকবে, আরেকটি যেখানে আপনি নিজের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় গল্প সাজিয়ে স্ক্রিপ্টে রূপান্তর করতে পারবেন। স্ক্রিপ্ট রাইটিং বাকি সব ধরণের কন্টেন্ট রাইটিং থেকে অনেকখানি আলাদা। কারণ এখানে শুধু গল্প বলে দিলেই লেখকের কাজটা শেষ হয়ে যায়না। বরং গল্পের চরিত্র, তারা কী বলছে, কিভাবে নড়ছে, এই পুরো ঘটনার সময়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে কী হচ্ছে – এসব কিছু স্ক্রিপ্টে উল্লেখ থাকতে হয়।

ভাল স্ক্রিপ্ট রাইটার হওয়ার প্রথম শর্ত হল লেখার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ থিংকিং, চিন্তাশীল এবং ভাল গল্প বলতে পারার দক্ষতা থাকতে হবে। আর এরপর জানতে হবে একটা গল্পের লেখা থেকে চিত্রে ফুটে ওঠার পুরো প্রক্রিয়াটি। বাকি নির্দেশনাগুলো ভুল বা ঠিকমত না দিতে পারলে শুধু গল্পটাই সুন্দর করে বলা হবে, কিন্তু স্ক্রিপ্টটা হবে দূর্বল।

কমিউনিকেশন ম্যাটারিয়াল লেখক

কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ করতে যে ধরণের লেখালেখি করতে হয় সেগুলোতে কমিউনিকেশন মেটারিয়াল বলা হয়ে থাকে। এই মেটারিয়াল বলতে ইমেইল, ফোনে টেক্সট, নিউজলেটার, প্যাম্ফলেটে, প্রেস রিলিজের মত অফিশিয়াল লেখাও বোঝানো হয়ে থাকে।

এসব লেখায় কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী ও ফরম্যাট থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে কোম্পনির নিজস্ব টেমপ্লেটও থাকে, সেগুলো অনুসরন করে শব্দ ও বাক্য ব্যবহারের দক্ষতা দিয়ে এ ধরনের কন্টেন্টগুলো লেখা হয়।

এসাইনমেন্ট ও রিপোর্ট রাইটিং

আপনারা অনেকেই আপনার আশেপাশের বন্ধুদের বিভিন্ন সময় তার নিজের পড়াশোনার বাইরে অন্যের এসাইনমেন্ট করতে দেখে থাকবেন। তবে এখানে যে লেখালেখির কথা বলা হচ্ছে তা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে, অর্থের বিনিময়ে করা হয়।

সাধারণত আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক এসাইনমেন্টগুলো আউটসোর্স করে থাকে। তাই লেখার আগে আপনাকে এসাইনমেন্টের বিষয়বস্তু নিয়ে রিসার্চ করে এবং অনলাইনে এভেইলেবল একই প্যাটার্নের আরো কিছু এসাইনমেন্ট পড়ে ধারণা নিতে হবে।

রিপোর্ট রাইটিং এসাইনমেন্টের চেয়ে খানিকটা আলাদা, তবে এটিও সাধারণত একাডেমিক লেভেলেরই হয়ে থাকে। অনেকসময় গবেষকরা ফিল্ডওয়ার্ক শেষে সময়ের অভাবে রিসার্চ রিপোর্টি অন্য কারো দ্বারা লেখিয়ে নেন। আবার অনেক কোম্পানি্র কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টকে বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট (যেমন ফাইনান্সিয়াল, বাজেট, অডিটরি, বাৎসরিক রিভিও ইত্যাদি) তৈরি করতে হয়।

প্রোডাক্ট রিভিউ

নামেই বোঝা যাচ্ছে এটা কী ধরণের কাজ হতে পারে। সাধারণত ই-কমার্স ওয়েবসাইট বা মার্কেটপ্লেসগুলোতে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে রিভিউ দেয়ার সুযোগ থাকে। যেগুলো দেখে ক্রেতারা সে প্রোডাক্টগুলো কেনার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেন। 

Amazon, Ebay থেকে শুরু করে এক্সক্লুসিভ ওয়েবসাইটেও প্রোডাক্ট রিভিউ লেখা হয়ে থাকে। এতে সাধারণত প্রোডাক্টের স্পেসিফিকেশন, ব্যবহারবিধি, ভালো-দূর্বল দিক সবকিছু বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে হয়। এ ধরণের লেখা শুরুর আগে প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালমত পড়াশোনা করে নিতে হয় এবং ক্লায়েন্টের প্রয়োজন অনুযায়ী রিভিউ কন্টেন্ট তৈরি করতে হয়।

ফিচার

ফিচার লেখার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। ফিচার এমন একটি লেখা যেখানে আপনি যেকোন একটি বিষয় বেছে নিয়ে সে সম্পর্কে লিখছেন। সেটা বাজারে নতুন একটি ব্র‍্যান্ডের কসমেটিকস প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস পর্যন্ত যেকোন কিছু হতে পারে।

মূলকথা আপনার কন্টেন্টের একটা বিষয় থাকতে হবে, যে বিষয়কে কেন্দ্র করে বিস্তারিত লিখতে হবে। ফিচারের টপিকগুলো সাধারণত নন-ফিকশন ধাচের হয়ে থাকে। আমাদের দেশের পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন, বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট যেমন Roar Bangla তে ভাল ফিচার স্টোরি পড়ার ও লেখার সুযোগ রয়েছে।

কন্টেন্ট রাইটিং কিভাবে শিখবেন?

ভাষা সম্পর্কে ভাল জ্ঞান অর্জন করুন

বিষয়টা যেহেতু লেখালেখি, তাই এক্ষেত্রে ভাষার লিখিত জ্ঞান থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা বাংলা বা ইংরেজী বা অন্য যেকোন ভাষাই হোকনা কেন। লিখিত ভাষা বলা হচ্ছে এজন্য কারণ লেখার ভাষা আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের ভাষার চেয়ে কিছুটা ফর্মাল, কিছু ক্ষেত্রে রাশভারী এবং জটিল হয়ে থাকে। যেকারণে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা সহজ হলেও লেখার ক্ষেত্রে তা কিছুটা আয়ত্তে আনার ব্যপার থেকেই যায়। এখানে ভাষার জ্ঞান বলতে সঠিক ব্যাকরন, শুদ্ধ বানান, বাক্য গঠনের নিয়মাবলি, ব্যতিক্রমী শব্দচয়ন ইত্যাদি হতে পারে।

অনেক পড়ুন

ভাল লেখতে হলে আগে, অবশ্যই অবশ্যই অনেক বেশি পড়তে হবে। কন্টেন্ট রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে পড়ার কোন বিকল্প নেই। যেকোন ধরণের পড়াশোনাই আপনার লেখালেখিতে কোন না কোন প্রভাব ফেলবে। যেমন, আপনি টেকনিক্যাল কন্টেন্ট লেখেন কিন্তু আপনার ফিকশন পড়তে ভাল লাগে। কাজের জন্য আপনাকে আপনার ক্ষেত্র নিয়ে পড়াশোনা তো অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু ফিকশন পড়াটাও সার্বিকভাবে আপনার লেখক মানসিকতার বিকাশ ঘটাবে। তাই হাতের কাছে যা পান, যা ইন্টারেস্টিং মনে হয় পড়া শুরু করে দিন। কোন পড়াই বিফলে যায়না।

টপিক রিসার্চ করুন

আপনি যে ধরনের কন্টেন্ট রাইটিংই করেন না কেন, যা লেখতে যাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে পড়াশোনা করে নেয়া অত্যাবশ্যক। একেই টপিক রিসার্চ বলে। বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে গুগল করলেই আপনি আপনার বিষয়ের অসংখ্য আর্টিকেল, রিসার্চ পেপার, নিউজ, ভিডিও পেয়ে যাবেন।

তবে ক্ষেত্র বিশেষে একেবারেই ইন্টারনেটে না পেলে লাইব্রেরি, আর্কাইভ ইত্যাদি জায়গায় যেতে হতে পারে। সেসব থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্পর্কে গভীর ধারণা নেয়ার পাশাপাশি পরবর্তীতে নিজের লেখায় ব্যবহার করার মতো তথ্য ও ঘটনা টুকে রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই তথ্য বা ঘটনার সোর্স সহ নোট করতে হবে।

সমসাময়িক লেখকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া নিন

প্রফেশনালি কাজ করতে হলে প্রফেশনালদের কাছ থেকে ফিডব্যাক, সাজেশন, রিভিউ, সমালোচনা ইত্যাদি আপনার লেখার মান বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে। তাই আপনার বন্ধুদের মধ্যে যদি কেউ কন্টেন্ট রাইটিংয়ের সাথে জড়িত থাকে তাহলে আপনার লেখা তাকে দেখিয়ে একটা ফিডব্যাক নিয়ে নিতে পারেন। সে হয়তো আপানার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে, আপনাকে সংশোধনে সাহায্য করবে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষের কাছ থেকে এমন অনেক কিছু জানা যায় যা অনেক ক্ষেত্রে পড়াশোনা করে জানা যায়না।

কমফোর্ট জোন থেকে লেখা শুরু করুন

যখন নতুন নতুন লেখা শুরু করবেন, তখন আপনার পছন্দ বা আগে থেকেই জানাশোনা আছে এমন বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন। তাহলে লেখাটাকে খুব একটা কঠিন মনে হবে না। 

লেখালেখি করা শুরু করার সাথে সাথেই কাজ পেয়ে যাওয়ার নজির খুব কম। মনে রাখবেন, যেকোন কিছুকে প্রফেশন হিসেবে নিতে হলে তা আগে অনুশীলন করে আয়ত্তে আনতে হয়। তাই আপনার প্রথম লেখাগুলো হয়তো এতটা সুন্দর, তথ্যবহুল, গঠনমূলক হবে না। কিন্তু আপনি অনুশীলন চালিয়ে গেলে একসময় নিজেই আপনার উন্নতি অনুধাবন করতে পারবেন।

কনটেন্ট রাইটিংকে প্রফেশন হিসেবে নিতে চাইলে বহুব্রীহির Content Writing Fundamentals কোর্সটি করে নিতে পারেন। প্রায় ৩ ঘণ্টার এই রেকর্ডেড ওয়েবিনারে কনটেন্ট রাইটিং হিসেবে যাত্রা শুরু করতে যা যা জানা দরকার সবকিছু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমনঃ আইডিয়া জেনারেশন, রিসার্চ, স্ট্রাকচার, এডিটিং, পাবলিশিং, ডিস্ট্রিবিউট সহ কনটেন্ট রাইটিং এর বিভিন্ন টেকনিক সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে! 

এছাড়া SEO এর কনসেপ্ট ও টুলস; কপিরাইটিং এবং ট্রান্সলেশন নিয়েও আলাদাভাবে আলোচনা হয়েছে। সবশেষে নতুন রাইটারদের জন্য কোর্সটিতে বিশেষ কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কন্টেন্ট রাইটিং এর ধাপসমূহ

কন্টেন্ট রাইটিংয়ের নানা রকমভেদ থাকলেও কিছু সহজ ধাপ মেনে লেখালেখি শুরু করলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

কন্টেন্ট রাইটিং এ ক্যারিয়ার ও এর আদ্যোপান্ত
Image Credit: Unsplash

ধাপ ১ঃ লক্ষ স্থির করুন

প্রথমেই আপনার লেখার একটা লক্ষ স্থির করুন। আপনি কেন ও কী উদ্দেশ্যে লেখাটি লিখতে চাইছেন, সেটা ঠিক করে ফেলতে পারলে পরবর্তী ধাপগুলোতে তার প্রতিফলন দেখতে পাবেন।

ধাপ ২ঃ বিষয় নির্বাচন করুন

আপনার লেখার একটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে। তারপর সে বিষয়ের উপর নির্ভর করে আপনাকে অনেক অনেক গবেষণা করতে হবে। উপরে আগেই গবেষণার পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। সেগুলো অনুসরণ করে চাইলে নিজের মত করে আরও ঘাটাঘাটি করতে পারেন।

ধাপ ৩ঃ স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল ঠিক করুন

গবেষণার পর প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে একটি স্ট্র‍্যাটেজি বা কৌশল ঠিক করতে হবে। আপনার লেখায় আপনি ঠিক কোন বিষয়গুলো তুলে ধরতে চান, সে বিষয়ের কোন তথ্য বা পরিসংখ্যান থাকবে কিনা, কোন উক্তি বা উদ্ধৃতি ব্যবহার করবেন কিনা ইত্যাদি আপনার স্ট্র‍্যাটেজির অংশ হবে।

ধাপ ৪ঃ লেখা আরম্ভ করুন

এই ধাপে এসে আপনি লেখা শুরু করতে পারেন। একটা ছোট্ট টিপস দিয়ে রাখি, আপনি যত বড় প্রফেশনালই হোননা কেন, একটা লেখার প্রথম কিস্তি সাধারণত কারোরই পরিপূর্ণ হয় না। তাই প্রথম কিস্তি লিখুন একদম মন খুলে। ব্যকরণ, শব্দচয়ন, ফরম্যাট, তথ্যসূত্র এতকিছু মাথায় রাখা জরুরি না। প্রথমবার আপনি শুধুমাত্র আপনার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে লেখাটা দাঁড় করাবেন। কারণ এই লেখা ঘষামাজার বেশ সুযোগ আপনি পরবর্তী কিস্তিতে পেয়ে যাবেন।

তবে এক্ষেত্রে প্লেজারিজম বা চৌর্যবৃত্তি থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কোন পাবলিকেশন বা ক্লায়েন্টই কখনো হুবহু নকল করা লেখা গ্রহণ করেনা। এতে আপনার কাজ তো বাতিল হবেই আপনার নামও খারাপ হবে। একান্তই কোন লাইন বা তথ্য সরাসরি উল্লেখ করলে অবশ্যই তার তথ্যসূত্র দিতে হবে।

ধাপ ৫ঃ লেখা পরিমার্জনা করুন

এ পর্যায়ে আপনার লেখার অংশ প্রায় শেষ। একদম শেষ স্টেপ হিসেবে কয়েকবার পরিমার্জন বা রিভিশন করতে হবে, যেন যেকোন ধরণের ভুল আপনার ক্লায়েন্ট ধরে ফেলার আগে আপনি নিজেই ধরে ফেলতে পারেন।

এখন আপনার লেখা পাবলিশ করার জন্য তৈরি। তবে যদি লেখা আপনি কোন ব্লগিং বা পাবলিশিং সাইটে নিজে পাবলিশ করেন, তাহলে আপনার লেখার বিষয় অনুযায়ী কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি গুগলের সাহায্য নিতে পারেন। এরপর, আপনার নির্বাচিত সাইটের ফরম্যাট অনুযায়ী কন্টেন্ট পাবলিশ করতে পারেন।

কনটেন্ট রাইটিংয়ের কাজ কোথায় খুঁজবেন?

চাকরির ওয়েবসাইট

দেশের কোম্পানিগুলোতে এখন “কন্টেন্ট/স্ক্রিপ্ট/কপি রাইটার” ইত্যাদি নামের পজিশনে নিয়োগ দেয়া হয়। পুরোদস্তুর পেশা হিসেবে নিতে চাইলে এসব পজিশনে অবেদন করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস

বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলোতে কন্টেন্ট রাইটিংয়ের বিশাল বাজার রয়েছে। সেখানে আপনার মনমত কন্টেটের টাইপ বাছাই করার পাশাপাশি আপনি অন্য কোন ভাষায় দক্ষ হলে, সে ভাষাতেও কাজ পেতে পারেন। Upwork, Freelancer, Fiverr ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় সাইট।

ব্লগিং/পাবলিশিং ওয়েবসাইট

ব্লগিং বা নিজের লেখা নিজেই পাবলিশ করার উপযুক্ত জায়গাগুলো হল বিভিন্ন ব্লগিং বা পাবলিশিং ওয়েবসাইট। এখানে আপনি নিজের নামে একাউন্ট খুলে,লেখা পাবলিশ করে, ওয়েবসাইটের পলিসি অনুযায়ী আয় করতে পারবেন।

এছাড়াও, নিজের  আলাদা পরিচয় তৈরি করতে সম্পূর্ণ নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেও ব্লগিং পাবলিশ করতে পারেন। এক্ষেত্রে যেকোন কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System – CMS) এর সাহায্য নিতে পারেন।

বর্তমানে বহুমুখী ব্যবহার ও সহজ ব্যবহারযোগ্যতার কারণে কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে WordPress সবচেয়ে জনপ্রিয়। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে কোন ধারণা ছাড়াই WordPress ব্যবহার করে একটি পূর্ণাংগ ব্লগিং ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। বহুব্রীহির ফ্রি WordPress for Beginners কোর্সটি করে আপনি মাত্র ১০ ঘন্টায় একটি ওয়েবসাইট বানানো শিখতে পারবেন। কোর্সটিতে আরো শিখবেন কিভাবে ব্লগ পোস্ট এবং পেইজ তৈরি করা যায়, ব্লগ পোস্টে ছবি এবং অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া যোগ করা যায়, হাজার হাজার প্লাগিন থেকে আপনার প্রয়োজনীয় প্লাগিন বাছাই করে তা ইন্সটল করা ইত্যাদি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

আজকার সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম গুলোতেও “চাকরি” নামে আলাদা সেকশন চালু হয়েছে যেখানে প্রচুর কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজের সার্কুলার থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে চাকরিদাতা বা কোম্পানির পরিচয় যাচাই করে নিতে হবে। Facebook Jobs এক্ষেত্রে একটি ভাল অপশন।

প্রকাশনী

অনলাইন ছাড়া আপনি যদি নিজের বই প্রকাশ করতে চান, তাহলে আপনার লেখার পান্ডুলিপি নিয়ে দেশীয় প্রকাশকদের কাছে যেতে হবে। পান্ডুলিপি থেকে বই পর্যন্ত যাত্রাটা মোটেও সহজ না, একটু ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে। ঢাকার কাঁটাবন, নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারের দিকে ছোট বড় বেশ কিছু প্রকাশনী রয়েছে।

কন্টেন্ট রাইটিং এর ভবিষ্যৎ

কন্টেন্ট রাইটিং অন্য আট দশটা চাকরির থেকে আলাদা। আপনার দক্ষতা ও উন্নতি সম্পূর্ণভাবে আপনার প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে। আপনি চাইলে সংখ্যায় অনেক কাজ করে অনেক অর্থ আয় করতে পারেন আবার বেছে বেছে মানসম্মত কাজ করতে পারেন। এ কাজে যথেষ্ট ফ্লেক্সিবিলিটি রয়েছে, তাই অনেক সময় অন্য প্রফেশনের মানুষ বাড়তি উপার্জনের জন্য কন্টেন্ট রাইটিং করে থাকে।

একইভাবে ফুলটাইম কন্টেন্ট রাইটিং থেকে আপনি চাইলে সহজেই অন্য প্রফেশনে যোগ দিতে পারেন। কারণ লেখালেখির অভিজ্ঞতা অনেক চাকরির জন্য মূখ্য দক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আর সেটি ইংরেজী ভাষায় হলে বাংলাদেশের চাকরির বাজারে অন্য অনেকের চেয়ে আপনি এগিয়ে থাকবেন।

কন্টেন্ট রাইটিং এর বাজার একটি অসীম সম্ভাবনার বাজার। এ জায়গায় আপনি যতদিন চান কাজ করে যেতে পারবেন, কারণ দুনিয়াতে যতদিন লেখালেখি চলবে ততদিন কন্টেন্ট রাইটারদের কাজের কোন ঘাটতি হবেনা।

শেয়ার করুন

2 thoughts on “কন্টেন্ট রাইটিং এ ক্যারিয়ার ও এর আদ্যোপান্ত”

Leave a Comment