ওয়েব ডিজাইন বনাম ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বনাম সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট

ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট— প্রফেশনাল জগতে এই তিনটিই বেশ পরিচিত নাম এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্যারিয়ার তৈরির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। কিন্তু অনেকেই এই তিনটির কোনটা কী তা নিয়ে বিভ্রান্ত থাকেন, কোথায় তাদের ভিন্নতা এবং কোথায় তারা মিলিত তা বুঝতে অনেকেরই বেগ পেতে হয়। আপনাদের সেসব বিভ্রান্তিকে দূর করতেই বহুব্রীহির এ আয়োজন।

এ আর্টিকেলে যা যা থাকছে:

  • ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কী
  • ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মধ্যে পার্থক্য
  • ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মধ্যে মিল
  • কোন স্কিলগুলো আয়ত্ব করার মাধ্যমে আপনি এই তিনটি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন?

ওয়েব ডিজাইন

সংক্ষেপে বলতে গেলে, ওয়েব ডিজাইন বলতে ওয়েবসাইটের নান্দনিকতা অর্থাৎ লেখার ধরন বা ছবি ইত্যাদি এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্যতাকেও বোঝায়। ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের লেআউট (layout) এবং অন্যান্য দৃষ্টিনন্দন উপাদান তৈরি করতে ফটোশপের (Photoshop) মতো বিভিন্ন ডিজাইন প্রোগ্রাম ব্যবহার হয়ে থাকে।

ওয়েব ডিজাইনার হতে যে স্কিলগুলো প্রয়োজন

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ওয়েব ডিজাইনিংয়ের জন্য কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানা জরুরি না। প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ সম্পর্কে কোন রকম ধারণা ছাড়াই যেকেউ ওয়েব ডিজাইন করতে পারেন। 

তবে অনেক সময় এইচটিএমএল (HTML), সিএসএস (CSS) এর মত মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ বা জাভাস্ক্রিপ্ট (JS) এর মতো ফ্রন্টএন্ড প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ (frontend programming language) জানা থাকলে ওয়েব ডিজাইনিংয়ে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।

এই ক্ষেত্রের সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় স্কিলগুলো হলো :

ফটো এডিটিং টুল

যদিও একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন ওয়েব ব্রাউজারেই করা যায়, কিন্তু মকআপ তৈরি বা অ্যাসেট ডিজাইন, কোনো ছবিকে মডিফাই বা এনহান্স করা — এগুলো ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটরেই করা হয়। তাই একজন ওয়েব ডিজাইনারের হিসেবে ক্যরিয়ারকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে ফটো এডিটিং সফটওয়্যার কোর্স করে নিতে পারেন।

ইউজার এক্সপিরিয়েন্স (User Experience – UX) ও ইউজার ইন্টারফেস (User Interface – UI) ডিজাইন

ইউজার এক্সপিরিয়েন্স ও ইন্টারফেস একটি বিস্তৃত বিষয়। তবে এখানে শুধুমাত্র ওয়েব ডিজাইনের প্রেক্ষাপট থেকে এই বিষয় দুটি নিয়ে আলোচনা করা হল।

ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের ব্যবহারযোগ্যতা, কনটেন্ট স্ট্র্যাটিজি, নেভিগেশন, ইম্প্রেশন ইত্যাদি ইউজার এক্সপিরিয়েন্সের অন্তর্ভুক্ত। সহজ কথায়, এটি ব্যবহারকারীকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর প্রয়োজন, অনুপ্রেরণা, স্বভাব ও আচরণ বুঝে ওয়েবসাইট ডিজাইন করা যাতে সে তার দরকারি তথ্য ও পন্যগুলো ওয়েবসাইট থেকে সহজেই পেতে পারে।

অন্যদিকে, গ্রাফিক ডিজাইন, টাইপোগ্রাফি (typography), কালার থিওরি (color theory), ছবির দিকনির্দেশ, ভেক্টর ম্যানিপুলেশন, মোশন গ্রাফিক্স (motion graphics) এই দক্ষতাগুলো ইউজার ইন্টারফেসের অংশ।

ইউজার এক্সপিরিয়েন্স ও ইন্টারফেস ডিজাইনের দুটি আলাদা কিন্তু পরিপূরক শাখা, যাদের উদ্দেশ্যে একই: ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের তাদের চাহিদামতো পণ্য, সেবা ও তথ্য পৌঁছে দেয়া।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

ওয়েবসাইট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হিসেবে পরিচিত। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে তাকে ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তুলতে যা কিছু করা দরকার সবই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের অংশ।

ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে সাধারণত ৩ টি ভাগে ভাগ করা যায় –

ফ্রন্টএন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইটের লে-আউট, তার ইন্টারেক্টিভ এবং নেভিগেশনাল এলিমেন্ট যেমন বাটনস, স্ক্রলবার, ইমেজ, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন লিংক — এসবকিছু বাস্তবায়ন করা হয়। বিভিন্ন ব্রাউজার এবং ডিভাইসে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের যথাযথ প্রদর্শনও নিশ্চিত করা হয় ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্টে।

এছাড়াও নিয়মিত ইউজেবিলিটি টেস্ট করা, ফ্রন্ট-এন্ডে কোনো বাগ দেখা দিলে তা ফিক্স করা ওয়েব ডেভেলপমেন্টের অংশ। এই সব কাজ করতে ওয়েব ডেভেলপারদের এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন),সফটওয়্যার ওয়ার্কফ্লো ম্যানেজমেন্ট — এগুলোও মাথায় রাখতে হয়।

ফ্রন্টএন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ব্যবহৃত ল্যাংগুয়েজ

ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্টে মূলত প্রাথমিক তিনটি কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার হয় —

এছাড়াও জাভাস্ক্রিপ্টের লাইব্রেরী হিসেবে জেকোয়েরি (JQuery) বহুল ব্যবহৃত। কমপ্লিট ফ্রন্ট-এন্ড সল্যুশন হিসেবে বুটস্ট্র্যাপও একটি জনপ্রিয় টুলকিট। আর অ্যাঙ্গুলার (AngularJS), ব্যাকবোন (Backbone), এম্বার (Ember), রিঅ্যাক্ট (React.JS), রিঅ্যাক্ট ন্যাটিভ — এধরনের নানান জাভাস্ক্রিপ্ট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

ব্যাকএন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

ফ্রন্ট-এন্ডকে সচল রাখার জন্য যে ইনফাস্ট্রাকচার দরকার তা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয় ব্যাক-এন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্টে। এর মূলত তিনটি অংশ বলা যায়— সার্ভার, অ্যাপ্লিকেশন, ডেটাবেজ। ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্টের সাহায্যে কোড সার্ভার অ্যাপ্লিকেশন আর ডাটাবেজের স্মুথ কমিউনিকেশন নিশ্চিত করা হয়। এরপর বিভিন্ন ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট টুল দ্বারা ডেটা খুঁজে, এডিট ও সেভ করে ফ্রন্ট-এন্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্টের মতই ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্টেও ক্লায়েন্টদের সাথে মতবিনিময় করে তাদের প্রয়োজনগুলোকে মেটানোর জন্য কাজ করতে হয়। সাধারণত ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট টাস্কে থাকে ডেটাবেজ তৈরি, ইন্টিগ্রেট ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, ব্যাক-এন্ড ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে সার্ভার-সাইড সফটওয়্যার তৈরি, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি ও ইমপ্লিমেন্ট, ওয়েব সার্ভার টেকনোলজি আর অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যথাযথভাবে কাজ করা।

এই টাস্কগুলোর বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখতে চাইলে ব্যাক-এন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে প্রজেক্টের মাধ্যমে তা সহজেই আয়ত্ব করে নিতে পারেন।

ব্যাকএন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ

ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্টে প্রথমে সার্ভার-সাইড ল্যাংগুয়েজ দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন বিল্ড করা হয়। যেমন-

এরপর বিভিন্ন ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট টুল দিয়ে ডেটা খুঁজে, এডিট ও সেভ করে ফ্রন্ট-এন্ডে পাঠানো হয়। যেমন –

  • মাইএসকিউএল (MySQL)
  • ওরাকল (Oracle)
  • মঙ্গোডিবি (MongoDB)
  • পোস্টগ্রেস্কিউএল (PostgreSQL)

ফুলস্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

ফুল-স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বাকি কনসেপ্টগুলো থেকে কিছুটা নতুন। মূলত ব্যাক-এন্ড এবং ফ্রন্ট-এন্ড এই দুই কাজ সম্পন্ন ও সমন্বয় করাকে ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট বলে। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এবং কিছু ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইনের, সবগুলো ধাপ মিলিয়ে সম্পূর্ণ স্ট্রাটেজি তৈরি করাই ফুল স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট।ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপাররা সাধারণত ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রাখেন। তাই ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার হতে চাইলে সম্পূর্ণ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রসেসের উপর বিচক্ষণতা এবং দূরদর্শীতা থাকা জরুরি। ফ্রন্ট-এন্ড আর ব্যাক-এন্ডের ল্যাংগুয়েজ এবং ফ্রেমওয়ার্কসহ বিভিন্ন সার্ভার, নেটওয়ার্ক এবং হোস্টিং এনভায়রনমেন্টে কাজ করার মতো দক্ষতা অর্জন করতে চাইলে ফুল-স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে নিন।

ফুলস্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ

  • রুবি (Ruby)
  • পিএইচপি (PHP)
  • পাইথন (Python) 

সাধারণত ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপমেন্টের জন্য ফ্রন্ট-এন্ডের সবগুলা ভাষার সাথে পরিচয় রাখলেও ব্যাক-এন্ডে এই তিনিটি ভাষার যেকোনো একটায় স্পেশালাইজড হওয়া ভালো। আর বেশি অভিজ্ঞরা একাধিক ল্যাংগুয়েজে পারদর্শী হন।

ওয়েব ডেভেলপার হতে যে স্কিলগুলো প্রয়োজন

এবার জেনে নেয়া যাক আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে আপনাকে কোন স্কিলগুলোর ওপর জোর দিতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

শুরুতেই বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকরির বাজারে বেশিরভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতক ডিগ্রীধারী প্রার্থী চাওয়া হয়। বলা বাহুল্য কম্পিউটার সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রার্থীরা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দক্ষতার ভিত্তিতেই আবেদনকারীর মান যাচাই করা হয়। তাই ক্ষেত্র বিশেষে দক্ষতার মানদণ্ডে এগিয়ে থাকতে পারলে কম্পিউটার সাইন্সে ডিগ্রীর ঘাটতিও কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে দক্ষতা

আমরা ইতোমধ্যেই ফ্রন্ট-এন্ড, ব্যাক-এন্ড এবং ফুল-স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজনীয় ল্যাগুয়েজগুলো জেনেছি। মূলত JavaScript, Python, PHP, Ruby, Java এগুলোর দখলই বেশি লাগে।

ফ্রেমওয়ার্ক

ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে JQuery, Django, NodeJs, Flask, Laravel, SpringBoot এরকম অনেকগুলোই ওয়েব ডেভেলপমেন্টে কার্যকর।

গণিত

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে গণিতের বিশদ জ্ঞান লাগবে এমন নয়, তবে ম্যাথমেটিকাল সেন্স যত ভালো থাকবে ততই ভালো।

ডাটা স্ট্রাকচার এবং এলগরিদম

ডাটা স্ট্রাকচার এবং এলগরিদম ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল। এখানে দক্ষতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে নিজের প্রোগ্রামিং জ্ঞানকে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। 

একদম স্ক্র্যাচ থেকে সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে নিখুঁত এলগরিদম তৈরি করার কৌশল শিখতে, এলগরিদম ডিজাইনের টেকনিকগুলো জানতে এবং কোন ক্ষেত্রে কোন ডাটা স্ট্রাকচার ব্যবহার করা ভালো তা জানতে ডাটা স্ট্রাকচার এবং এলগরিদম কোর্স করে নিন।

ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট টুল

ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট টুল হিসেবে মাইএসকিউএল (MySQL), ওরাকল (Oracle), মঙ্গোডিবি (MongoDB), পোস্টগ্রেস্কিউএল (PostgreSQL) ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

ক্লাউড সিস্টেম

AWS, Google Cloud, Digital Ocean, Azure এধরণের বিভিন্ন ক্লাউড সিস্টেমের সাথে একজন ওয়েব ডেভেলপারের ভালোমত পরিচিত থাকা অত্যাবশ্যক।

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বলতে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের সাহায্যে কম্পিউটার সফটওয়্যার ডিজাইন করা, সাপোর্ট করা, টেস্ট করা ও ডিপ্লয় করাকে বোঝায়। সফটওয়্যার হলো কিছু নির্দেশাবলী বা প্রোগ্রামের সমন্বয় যা কম্পিউটারকে দিক-নির্দেশনা দেয়। এটি হার্ডওয়্যার থেকে স্বতন্ত্র এবং কম্পিউটারকে প্রোগ্রাম যোগ্য করে তোলে।

সফটওয়্যারের ধরন

সিস্টেম সফটওয়্যার

যেসব সফটওয়্যার একটি ডিভাইসের কোর ফাংশন যেমন অপারেটিং সিস্টেম, ডিস্ক ম্যানেজমেন্ট, ইউটিলিটি, হার্ডওয়্যার ম্যানেজমেন্ট, এবং অন্যান্য অপারেশনাল কাজগুলো করতে ব্যবহৃত হয় সেগুলো সিস্টেম সফটওয়্যার।

প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার

সফটওয়্যার তৈরির জন্যও প্রয়োজন সফটওয়্যারের। যেসব সফটওয়্যার প্রোগ্রামারদের কোড করতে সাহায্য করে (যেমন- টেক্সট এডিটর, কম্পাইলার, লিংকার, ডিবাগার) সেগুলো প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার।

অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার

অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ইউজারদেরকে টাস্ক পারফর্ম করতে সাহায্য করে। যেমন মাইক্রোসফট অফিস, বা মিডিয়া প্লেয়ার, বা সিকিউরিটি সফটওয়্যার ইত্যাদি। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা অ্যামাজনের মত ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলোও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।  

কারা সফটওয়্যার ডেভেলপ করে?

সফটওয়্যার মূলত প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং সফটওয়্যার ডেভেলপারদের দ্বারা ডেভেলপ করা হয়। এই রোলগুলোর মাঝে ইন্টারঅ্যাক্ট এবং ওভারল্যাপ হয় অহরহ এবং ডিপার্টমেন্ট এবং কমিউনিটিভেদে তাদের মাঝের ডাইনামিকে বেশ তারতম্য দেখা যায়।

প্রোগ্রামার বা কোডার

প্রোগ্রামার বা কোডাররা কম্পিউটারকে বিভিন্ন স্পেসিফিক টাস্ক যেমন ডাটাবেজ মার্জ করা, কমিউনিকেশন রাউট করা, ডাটা সার্চ করা, টেক্সট বা গ্রাফিক্স ডিসপ্লে করা ইত্যাদির নির্দেশনা দেবার জন্য প্রোগ্রাম লেখেন। প্রোগ্রামাররা সাধারণত সফটওয়্যার ডেভেলপার এবং ইঞ্জিনিয়ারদের ইন্সট্রাকশনকে ফলো করে জাভা বা সি++ এর মত ল্যাংগুয়েজ দ্বারা কোড লেখেন। 

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা সমস্যা সমাধানের জন্য সফটওয়্যার এবং সিস্টেম তৈরিতে ইঞ্জিনিয়ারিং নীতি প্রয়োগ করে। তারা সমাধান নির্দিষ্ট করার জন্য মডেলিং ল্যাংগুয়েজ এবং অন্যান্য টুলস ব্যবহার করে যা প্রায়শই কোনও সাধারণ সমস্যার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে, কেবল কোনও নির্দিষ্ট উদাহরণ বা পৃথক ক্লায়েন্টকে সমাধান দেবার বিপরীতে। সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সমাধানগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে তৈরি হয় এবং বাস্তব বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা কার্যকর হতে হয়।

সফটওয়্যার ডেভেলপার

সফটওয়্যার ডেভেলপারদের ভূমিকা ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় একটু বেশি ব্যবহারিক। কোড লেখা সহ নির্দিষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্র গুলোর সাথে তাদের ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকতে হয়। একই সাথে, তারা সামগ্রিক সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট লাইফসাইকেলকে চালিত করে। প্রয়োজনীয় রিকোয়ারমেন্টকে ফিচারে রূপ দেবার জন্য করার জন্য সম্পূর্ণ টিমের সাথে কাজ করতে হয়। তাদের সফটওয়্যার পরীক্ষা ও পরিচালনা রক্ষণাবেক্ষণএর কাজেও মনযোগী হতে হয়।

সফটওয়্যার ডেভেলপার হতে যে স্কিলগুলো প্রয়োজন

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের খুঁটিনাটি

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য স্পিড, পারফর্মেন্স আর এফিসিয়েন্সিতে পারদর্শী জাভা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এ দক্ষতা আপনাকে প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য করতে পারে।

ডিসক্রিট ম্যাথ, ডাটা স্ট্রাকচার, এলগরিদম

ডিসক্রিট ম্যাথ, ডাটা স্ট্রাকচার এবং এলগরিদমে দক্ষতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে নিজের প্রোগ্রামিং জ্ঞানকে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। সঠিক ডাটা স্ট্রাকচার এবং এলগরিদম ব্যবহার করে অনেক কম সময়ে এবং কম স্পেসে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। 

ফ্রেমওয়ার্ক

ফ্রেমওয়ার্কের ক্ষেত্রে ক্রস প্লাটফর্ম ফ্রেমওয়ার্কগুলো জানলে ভালো। যেমনঃ React Native, Flutter, Xamarin, Cordova ইত্যাদি।

অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং

সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং অনেক কাজে লাগে। ডাটাভিত্তিক এই প্রোগ্রামিং এপ্রোচ Java, JavaScript, C++, Python সব ল্যাঙ্গুয়েজেই অ্যাপ্লিকেবল। 

নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা

সবসময় নতুন প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট জগতের চলমান খবরাখবর অবশ্যই রাখতে হবে।

মৌলিক পার্থক্যগুলো

ওয়েব ডিজাইনওয়েব ডেভেলপমেন্টসফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
১। ওয়েবসাইটের লেআউট (layout) এবং অন্যান্য দৃষ্টিনন্দন উপাদান তৈরির কাজটিই ওয়েব ডিজাইন। ১।ওয়েবসাইট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিই আমাদের কাছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হিসেবে পরিচিত।১। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বলতে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের সাহায্যে কম্পিউটার সফটওয়্যার ডিজাইন করা, সাপোর্ট করা, টেস্ট করা ও ডিপ্লয় করাকে বোঝায়। আর ডিপ্লয় ওয়েব বা অফলাইন যেকোন জায়গায়ই হতে পারে।
২। এক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানা আবশ্যক নয়।২। এক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানা আবশ্যক।
২। এক্ষেত্রেও প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানা আবশ্যক। 
৩। এক্ষেত্রে গ্রাফিক ডিজাইন সফটওয়্যারে পারদর্শী হতে হয়।৩। এক্ষেত্রে লজিক্যাল সেন্স যথাসম্ভব ভালো রাখতে হয়।৩। এক্ষেত্রেও ভালো লজিক্যাল সেন্সের প্রয়োজন।

মৌলিক মিলগুলো

এই তিনটি ক্ষেত্রেই যে মৌলিক মিলগুলো চোখে পড়ে তা হলো –

  • কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে।
  • ওয়েবসাইট সম্পর্কে যথাসম্ভব ভালো জ্ঞান থাকতে হবে।

শেষ কথা

এবার বেছে নিন আপনি ক্যারিয়ার গড়তে চান কোন সেক্টরে। নিজের পছন্দটা ঠিকঠাকভাবে বেছে নিয়ে একটি ভালো ক্যারিয়ার ডিসিশন নিতে আমাদের এই প্রবন্ধটি সাহায্য করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন

2 thoughts on “ওয়েব ডিজাইন বনাম ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বনাম সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট”

Leave a Comment